ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

হাটে করোনা উধাও, ভিড় বেশি বিক্রি কম!

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২২ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২১
হাটে করোনা উধাও, ভিড় বেশি বিক্রি কম!

রাজশাহী: দুয়ারে কড়া নাড়ছে ঈদ-উল-আজহা। আর মাত্র দু’দিন পরই ঈদ।

ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর এই ঈদ উদযাপনের প্রধান লক্ষ্য কোরবানি। যথার্থ কারণে প্রতিবছরের এই সময় তাই কোরবানির পশুর সরবরাহ বাড়ে। এই অতিমারীর মধ্যে এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

শেষ মুহূর্তে হাটগুলো মানুষ ও কোরবানির পশুতে একাকার। কোথাও কারও মধ্যে করোনাভীতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। গা ঘেঁষেই চলছে কোরবানির পশু কেনার প্রতিযোগিতা। তবে করোনার কারণে আর্থিক সংকটে কোরবানির ব্যাপারে এখনও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ এক রকম সিদ্ধান্তহীতায় রয়েছেন। ফলে এরই মধ্যে হাটে পর্যাপ্ত পশু উঠলেও কেনাবেচা জমেনি! অনেক ক্রেতা মনে করছেন শেষ দিনে দাম পড়ে যাবে। তখন কোরবানির পশু সস্তায় কিনবেন।

আবার এক শ্রেণির সচেতন মানুষ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে পশুহাটে যাচ্ছেন না। তারা অনলাইন পশুর হাটে ঢুঁ মারছেন। দরদামে বনিবনা হয়ে গেলেই মোবাইল অথবা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পছন্দসই পশু কিনে ফেলছেন। মূলত কোরবানির হাটে ন্যূনতম কোনো স্বাস্থ্যবিধি না মানায় তারা পশুর হাটে যাচ্ছেন না।

উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় পশুর হাট হচ্ছে- ‘রাজশাহী সিটি হাট’। প্রতি বছর এমন সময় পশুহাটের কেনাবেচা জমজমাট হয়ে ওঠে। কিন্তু এবার ঈদের মাত্র দুদিন আগেও সেখানে কেনাবেচা জমে ওঠেনি।  

যারা হাটে যাচ্ছেন তারা মাঝারি আকৃতির গরু খুঁজছেন কম দামে কেনার জন্য। এজন্য মাঝারি আকৃতির গরুর চাহিদাই বেশি। বড় গরু নিয়ে যারা হাটে থাকছেন তাদের কাছে ক্রেতারা ভিড়ছেন না। কেনাবেচার এ অবস্থা থাকলে কোরবানির জন্য তৈরি করা বড় গরুগুলো হাট থেকে ফিরিয়েই নিয়ে যেতে হবে না হলে ঢাকা নিয়ে যেতে হবে। আর শেষমেশ বিক্রি না হলে পথে বসতে হবে স্থানীয় অনেক খামারিকে। এমন আশঙ্কাই ভর করছে তাদের মাথায়।

বর্তমানে সিটি হাটে দেশি গরুই বেশি। যদিও অনেকে ভারতীয় গরুগুলোকে স্থানীয় খামারি ও কৃষকের বাড়িতে পোষা বলেও দাবি করছেন। এরপরও সেগুলো সাদা হরিয়ানা জাতের। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোরবানির মৌসুম সামনে রেখে রাজশাহী সীমান্তে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ। তাই কিছু গরু ফুলবাড়ী সীমান্ত গলিয়ে দেশের বিভিন্ন হাটে নিয়ে আসছেন কিছু ব্যবসায়ী। তবে হাটে যেসব ক্রেতা আসছেন তারা দেশীয় জাতের গরু এবং স্বাভাবিক খাবার দিয়ে খামারে লালন-পালন করা গরুই বেশি পছন্দ করছেন।

সিটি হাটে আসা পবা উপজেলার পারিলার গ্রামের খামারি সেলিম উল্লাহ জানান, ঈদের সময় ঘনিয়ে আসাশ হাটে গরুর সরবরাহ বেড়েছে। তার মত অনেকেই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু নিয়ে আসছেন হাটে। কিন্তু দিন শেষে আবারও ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে। প্রতিদিন কিছু মানুষ হাটে এলেও দর-দাম করেই চলে যাচ্ছেন। এতে কেনাবেচা হচ্ছে খুবই কম।  

রাজশাহীর পুঠিয়ার ভাল্লুকগাছি ইউনিয়নের চকপাড়া গ্রামের হোসেন আলী নামে এক খামারি জানান, সবচেয়ে বড়হাট হওয়াই প্রতিবছরই কোরবানির মৌসুমে তিনি গরু নিয়ে আসেন রাজশাহী সিটি হাটে। ঈদের আগে শেষ সপ্তাহ তিনি হাটে থাকেন। এবারও আছেন, কিন্তু হাটের এমন দৃশ্য এর আগে কখনো দেখেননি! হার্ট ভর্তি গরু, ভিড় বেশি। কিন্তু বিক্রি কম। আজ হাটে পর্যাপ্ত দেশি গরু, মহিষ ও ছাগল উঠেছে। তবে যতসামান্য যারা এই পশুহাটে আসছেন তাদের অধিকাংশই স্থানীয়ভাবে খামারে লালন-পালন করা দেশি গরুই পছন্দ করছেন।  

এক প্রশ্নের জবাবে এই খামারি বলেন, পরিবহনে করে গরুর নিয়ে আসা, হাটে তোলা, খাওয়ানো ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলা- এই পুরো সময়টা জুড়ে তাদের হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হয়। এসময় মুখে নাকে-মুখে মাস্ক পড়ে থাকা তাদের জন্য কষ্টসাধ্য। যে কারণে হাটে আসা অধিকাংশ ব্যবসায়ী ও খামারিই নাকে-মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে পারছেন না। এছাড়া সব সময় গরুর দড়ি ধরে থাকা, তাকে সামলানো এবং গরুর গোবর তোলাসহ নানান কারণে তারা হাতও পরিচ্ছন্ন রাখা যাচ্ছে না।

এদিকে, কোরবানির পশুর দাম এবার বেজায় চড়া বলে জানাচ্ছেন ক্রেতারা। মহানগরীর শালবাগান এলাকার জহির উদ্দিন বলেন, গত বছর ছোট গরু ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা, মাঝারি আকৃতির গরু থেকে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা এবং বড় আকৃতির গরু ৯০ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যেই বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এবার এই গরুগুলো আকৃতি হিসেবে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করে বেশি দাম চাইছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে এমনিতেই অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। এ অবস্থায় গরুর দাম বেশি হলে অনেক সাধারণ মানুষই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও এবার ঈদে পশু কোরবানি দিতে পারবেন না।

রাজশাহী সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান বলেন, হাটে এবার দেশি গরুর প্রাধান্যই বেশি। অল্প কিছু ভারতীয় গরু বিভিন্নভাবে এসেছে। কিন্তু বেচাকেনা এখন খুবই খারাপ। শেষ সময়ে এসেও গরুর হাটে কেনাবেচা জমেনি। এ অবস্থায় যারা দেশীয় পদ্ধতিতে খামারে গরু মোটাতাজা করেছেন তারা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন।

ঈদের মধ্যে গরুগুলো বিক্রি করতে না পারলে অনেকেই ক্ষতির মুখে পড়বেন।  

এসময় স্বাস্থ্যবিধি প্রশ্নে তিনি বলেন, ক্রেতা-বিক্রেতাদের সচেতন করতে আমরা বারবার মাইকিং করছি। কিন্তু মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব লক্ষ্য করছি। এরপরও পশু হাটে করোনা প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার চেষ্টা চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২১
এসএস/এএ   

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।