ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ঠাকুরগাঁওয়ে শিশু নির্যাতনকারী রমজান গ্রেফতার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২১
ঠাকুরগাঁওয়ে শিশু নির্যাতনকারী রমজান গ্রেফতার

ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে মাছ চুরির অপবাদে এক শিশুকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করায় অভিযুক্ত রমজান আলীকে (৪৮) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) দিবাগত রাতে পীরগঞ্জ উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

নির্যাতিত শিশু জুয়েল রানা (৯) ৮ নং দৌলতপুর ইউনিয়নের মল্লিকপুর সরকারপাড়া গ্রামের মনির উদ্দিনের ছেলে। সে পূর্ব মল্লিকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র।

গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মল্লিকপুর তামলাই দীঘি পাড়ের পাশে জনৈক জহিরুল ইসলামের বাড়ির পাশে শিশুটিকে নির্যাতন করা হয়।

নির্যাতিত শিশুর বাবা মনির উদ্দিন জানান, বিনা কারণে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে রমজান আলী আমার ছেলেকে গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে মেরেছে। এমন একটি মাসুম শিশুকে কেউ এভাবে মারতে পারে? আমি এর সঠিক বিচার চাই। আমার ছেলে চুরি করেনি, রমজান মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে।

রমজান আলী অভিযোগের কথা স্বীকার করে বলেন, আমি প্রায় প্রতিদিনই জাল দিয়ে মাছ ধরি। আর জুয়েল এসে আমার জাল থেকে, না বলেই মাছ নিয়ে চলে যায়। আমি তাকে অনেকবার নিষেধ করেছি। সে নিষেধ শোনে না। সেদিন তাকে ধরে ইয়ার্কি করে বেঁধে বলেছি, তোকে এভাবে বেঁধে মারব। এ সময় তাকে দু-একটা বাড়ি দিয়ে ছেড়ে দিয়েছি। তাকে অনেক মারপিট করা হয়নি। পরিবারের লোকজন মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে।

জুয়েলের বাবা মনির উদ্দিন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাছ চুরির অপবাদে জুয়েলকে একটি গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে নির্যাতন করেন একই গ্রামের রমজান আলী বাসু। এই নির্যাতনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত রমজান আলী বাসু বলেন, হাসি তামাশা করে তাকে বেঁধে দুইটা বাড়ি দিয়েছি। নির্যাতন করিনি।

পীরগঞ্জ থানার ওসি প্রদীপ কুমার রায় বলেন, জুয়েল বাসায় গিয়ে ভয়ে কাউকে বিষয়টি না জানিয়ে চুপ করে থাকে। রাতে পায়ের ব্যথায় ছটফট করলে বন্ধুদের মাধ্যমে জানতে পারে পরিবারের লোকজন। আহত শিশু জুয়েলকে বাবা-মা পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

অভিযুক্ত আসামি রমজান আলীকে (৪৮) গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

শিশু নির্যাতনের এই ঘটনা নিয়ে চলছে নানা সমালোচনা। আইনজীবী এবং মানবাধিকারকর্মীরা বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম বাংলানিউজকে বলেন, কোথাও আমলযোগ্য অপরাধের সংবাদ পাওয়া মাত্রই পুলিশের দায়িত্ব হচ্ছে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা এবং সত্যি অপরাধ হলে মামলা দায়ের করা। এ ক্ষেত্রে এজাহার দায়েরের জন্য অপেক্ষা করার কোনো প্রয়োজন নেই। আর শিশু আইনে তো শিশু নির্যাতনকে গুরুতর অপরাধ বলে গণ্য করা হয়েছে। পুলিশ যদি শিশুটিকে নির্যাতনের সংবাদ পেয়েও এটি না করে থাকে তাহলে শিশু আইন, ফৌজদারি কার্যবিধির লঙ্ঘন করেছে। একইসঙ্গে সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকারেরও এখানে লঙ্ঘন হয়েছে। উচ্চ আদালত বন্ধ না থাকলে আমরা বিষয়টি উচ্চ আদালতের নজরে আনতাম। এর আগেও অনেকগুলি শিশু নির্যাতনের ঘটনা আমরা আদালতের নজরে এনেছি এবং প্রতিকার পেয়েছি৷ এ অবস্থায় মানবাধিকার কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে ঘটনা খোঁজ নিয়ে পুলিশকে মামলা দায়েরের নির্দেশ প্রদান করা এবং ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যবস্থা করা। সেই ক্ষমতা কমিশনের আছে।

আরও পড়ুন:
মাছ চুরির অপবাদে শিশুকে গাছে বেঁধে নির্যাতন!

বাংলাদেশ সময়: ০০৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২১
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ