ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২, ০১ জুলাই ২০২৫, ০৫ মহররম ১৪৪৭

জাতীয়

সেজানের কারখানায় অনুমোদিত অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:২২, জুলাই ১০, ২০২১
সেজানের কারখানায় অনুমোদিত অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) দেবাশীষ বর্ধন। ছবি: শাকিল আহমেদ

নারায়ণগঞ্জ থেকে: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় সেজান জুস কারখানা ভবনের আগুনের ধরন ‘হার্ড ফায়ার’ ছিল বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) দেবাশীষ বর্ধন।  

তিনি বলেন, ভবনের প্রতিটি তলায় প্রচুর দাহ্য পদার্থ থাকার কারণে আগুন নির্বাপন করতে সময় বেশি লেগেছ।

টানা ৪৫ ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নির্বাপন করা হয়।  

শনিবার (১০ জুলাই) বিকেল ৫টার দিকে ভবনের আগুন নির্বাপন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

ফায়ারের উপ-পরিচালক দেবাশীষ বর্ধন বলেন, ভবনে একাধিক সমস্যা রয়েছে। ভবনের প্রত্যেক ফ্লোরে নেট দিয়ে বেরিকেড ছিল। আবার কিছু কিছু জায়গায় তালাবদ্ধ ছিল। এরমধ্যেও আমরা কাজ করেছি। কারখানাটিতে একাধিক খাদ্য তৈরি হতো। এগুলো প্যাকিং করার জন্য ফয়েল পেপার, প্লাস্টিকের বোতল। এছাড়া নিচ তলায় ছিল টনকে টন প্যাকিং কাগজের রোল। এসব দাহ্য বস্তু থেকে আগুন ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। আমরা একদিকে পানি দিলে অন্যদিকে আগুন ছড়িয়ে যায়।  বিভিন্ন দাহ্য বস্তু ও কেমিক্যাল থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় বেশি লাগে।  

তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সেজান জুস কারখানার ভবনটিতে ফায়ার সেফটির কোনো প্ল্যান ছিল না। এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদনও ছিল না।  

তিনি আরও বলেন, প্রতিটি কারখানার ভবনের জন্য ফায়ার সেফটি প্ল্যানের একটি অনুমোদন দেয় ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু এই কারখানার ভবনটির নকশায় ফায়ার সেফটি প্ল্যান থাকার অনুমোদন নেই। ভবন নির্মাণে রাজউকের ছাড়পত্র, কারখানা অনুমোদনের ছাড়পত্র, পরিবেশের ছাড়পত্র কর্তৃপক্ষ নিয়েছিল কিনা তা আমাদের জানা নেই।  

দেবাশীষ বর্ধন বলেন, প্রতিটি শিফটে ৩০০ থেকে ৪০০ ফায়ার ফাইটার কাজ করেছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত তাপ সহ্য করেও ফায়ার ফাইটাররা প্রথম রাত থেকেই ভেতরে ঢুকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করেন। কারখানায় অনেক দাহ্য বস্তু ছিল। কিছুক্ষণ আগেও এক টনের কাগজের রোল থেকে মাঝে মধ্যে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছিলো। পরে আমাদের টিম কাজ করে ধোঁয়া বন্ধ করে দেয়।  

তিনি বলেন, শুক্রবার (৯ জুলাই) চতুর্থ তলা থেকে ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করি। আর হাসপাতালে তিনজনের মরদেহ গিয়েছিল। মোট ৫২ জনের মরদেহ ছাড়া আর কোনোও মরদেহ আমরা পায়নি। ভেতরেও আর কোনো মরদেহ নেই। এছাড়াও ঘটনার দিন ৫২ জনকে লেডার দিয়ে জীবিত উদ্ধার করা হয়।

অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের বিষয়ে দেবাশীষ বর্ধন বলেন, একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান স্যারের নেতৃত্বে ফায়ার সার্ভিসেরও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগুনের সূত্রপাত, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ, ভবনের দুর্বলতা ও কারখানায় আগুন নির্বাপনের যথেষ্ট সরঞ্জাম ছিল কিনা সবকিছু তদন্তের পর বলা যাবে।

তিনি বলেন, কারখানার পঞ্চম তলার ফ্লোর ধসে পড়েছে। ভবনটি অত্যান্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বুয়েট থেকে বিশেষজ্ঞ এসে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০২১
এসজেএ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।