ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অসুস্থ বাবার জায়গা হয়নি ছেলেদের ঘরে!

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১২ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০২১
অসুস্থ বাবার জায়গা হয়নি ছেলেদের ঘরে! ঘরের বাইরে বৃদ্ধ বাবা শফিকুল ইসলাম।

ফেনী: যে বাবা সারাজীবন নিজের সবটুকু দিয়ে সন্তানদের বড় করে তুলেছেন। সারা জীবন সন্তানদের চরম আদরে আগলে রেখেছেন।

বৃদ্ধ হওয়ার পর নিজের সারা জীবনের অর্জিত সম্পত্তি সন্তানদের মাঝে বন্টনও করে দিয়েছেন। অথচ অসুস্থ হওয়ার পর সে বাবারই জায়গা হয়নি সন্তানদের ঘরে।  

এমন হৃদয় বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে লক্ষ্মীপুর পৌর এলাকায়। সন্তানদের এমন আচরণে স্থানীয়ভাবে তৈরি হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা।  

শুক্রবার (০৯ জুলাই) সকাল থেকে সন্তানের ঘরের সামনে অসুস্থ শফিকুল ইসলামকে (৯৫) পড়ে থাকতে দেখা যায়। ঘটনাটি ঘটেছে লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেঘনা রোড সংলগ্ন স্বপ্ন মহলের সামনে।  

পরে স্থানীয়রা প্রশাসনকে অবহিত করলে খবর পেয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) রাসেল ইকবাল ঘটনাস্থলে যান।  

স্থানীয়রা জানায়, অসুস্থ শফিকুলের ৪ ছেলে ও ৩ মেয়ে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছেন। ২ বছর আগে তিনি সন্তানদের সম্পত্তি ভাগ করে দেন। তার এক ছেলে বিজিবিতে চাকরি করে, আরেক ছেলে সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত, একজন মারা গেছেন এবং অন্যজন প্রবাসী। সব ছেলেই প্রতিষ্ঠিত।

লক্ষ্মীপুর পৌর ১ নম্বর ওয়ার্ডে সবারই পাকা বাড়ি রয়েছে। তারপরও বাবার পরিচর্যা করতে অপারগতা প্রকাশ করে তাকে বাড়ির বাইরে উঠানে ফেলে রাখেন ছেলেরা। পরে স্থানীয়রা প্রশাসনকে খবর দিলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল ইকবাল ঘটনাস্থলে যান এবং বিষয়টি বিস্তারিত শুনে ছেলেদের বাবার দায়িত্ব নিতে বলেন।  

তারা কেউ বাবাকে নিতে রাজি না হওয়ায় পরে অসুস্থ বৃদ্ধ শফিকুলের বড় মেয়ে সুরাইয়া তার বাবাকে নিতে ইচ্ছে প্রকাশ করেন। পরে ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি করে অসুস্থ শফিকুলকে মেয়ে সুরাইয়ার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।

জাহাঙ্গীর আলম নামে এক সন্তান জানান, তিনি নিজেও দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ, বাবাকে দেখাশুনো করার মত তার অবস্থা নেই। সে কারণে তিনি বাবাকে ঘরে রাখতে পারছেন না।  

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল ইকবাল বলেন, বৃদ্ধ শফিকুল ইসলাম অসুস্থ হওয়ায় কোনো ছেলেই তাকে রাখতে চাচ্ছেন না। তাই তারা তাকে বাড়ির বাইরে ফেলে রেখেছেন। পরে খবর পেয়ে ওই বৃদ্ধের এক মেয়ে এসে বাবাকে নিতে ইচ্ছা পোষণ করলে আমরা আমাদের ব্যবস্থাপনায় তাকে মেয়ের বাড়িতে দিয়ে আসি।

রাসেল ইকবাল আরো বলেন, সন্তানরা এত নিষ্ঠুর হয় - কল্পনাও করতে পারিনি। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো। বাবা অসুস্থ বলে কোনো সন্তানই বাবাকে ঘরে রাখতে চাইলেন না। সন্তানরা নানা অজুহাত দেখিয়ে বাবাকে ঘর থেকে বের করে দিলেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০২১
এসএইচডি/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।