ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কারামুক্তি পেয়েই পেলেন চাকরির নিশ্চয়তা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৭ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২১
কারামুক্তি পেয়েই পেলেন চাকরির নিশ্চয়তা কারামুক্তি পেয়েই পেলেন চাকরির নিশ্চয়তা। ছবি: বাংলানিউজ

ব‌রিশাল: ২৪ বছর কারাভোগের পর মুক্তি পেয়েই জীবিকা নির্বাহের জন্য পেলেন সেলাই মেশিন, সেইসঙ্গে চাকরির প্রতিশ্রুতিও। আর এ নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ভালো কাজের মধ্যে দিয়ে জীবনযাপন করতে চান পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার প্রয়াত দরিদ্র কৃষক আনিস মৃধার মেয়ে পিয়ারা আক্তার।

 

পিয়ারা ১৯৯৭ সালের ২৪ এপ্রিল পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী থাকাকালীন সময়ে মাত্র ১১ বছর বয়সে একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার হন।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, চাচাতো বোনের পুকুরের পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়। আর তার সেই মৃত্যুর হত্যা মামলায় আমাকে গ্রেফতার করা হয় ১৯৯৭ সালে। যার পরের বছর ২৯ এপ্রিল আমার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় হয়, এরপর দীর্ঘ ২৪ বছর কারাগারে কাটিয়ে দিয়ে আজ ৩৫ বছরের নারী আমি। গত ১০ জুন কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বাড়িতে গিয়ে জানতে পারি বাবা পরলোক গমন করেছেন বহু আগে। বৃদ্ধা মা বেঁচে আছেন। বড়বোনের বিয়ে হয়ে গেছে আর একমাত্র ভাই তারও আলাদা সংসার।

তিনি বলেন, বরিশালের জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশে বরিশালে এসেছি। আজ তিনি জীবিকা নির্বাহের জন্য একটি সেলাই মেশিন দিয়েছেন, সেই সঙ্গে চাকুরি দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন।

তবে যে বয়স হয়েছে তাতে চাকুরি করার মতো ইচ্ছে নেই জানিয়ে অবিবাহিত এই নারী বলেন, জেলখানাতেই জীবন শ্যাষ কইর‍্যা দিছি, আর্থিক অবস্থা ভালো থাকলে বের হইয়া যাইতে পারতাম, কপালের ভোগ কি আর করা। কিন্তু এখন বাকি জীবনটা সাংসারিক কাজ করে কাটাতে চাই। বাচমু কয়দিন শশুর-শাশুড়ির সেবা করে নামাজ-কালাম করে বাকি দিনগুলো পার করতে চাই। আর আমার তো কিছু নাই যদি জেলা প্রশাসক স্যার একটা ঘর দিতো তাহলে উপকার হইতো।

শুধু পিয়ারা আক্তারই নন, স্বামী হত্যা মামলার আসামি চট্টগ্রামের মেয়ে খালেদা আক্তার (৩৩) ৪ বছর পর  তিন মাস আগে জামিনে মুক্ত হন। তার তিন সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছিলেন। আর তা থেকে পরিত্রাণ পেতে জীবিকা নির্বাহের জন্য একটি সেলাই মেশিন দেওয়া হয় খালেদাকে।

খালেদা জানান, বরিশালের হিজলা উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে তার স্বামী শহিদ মোল্লা বাড়ি। শহিদ মোল্লা সর্বোহারা হওয়ায় প্রতিপক্ষের হাতে নিহত হলেও শ্বশুর বাড়ির লোক মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে জেলহাজতে পাঠিয়েছিলেন।

এভাবে বরিশাল নগরের আয়শা আক্তার (৩১) মাদক মামলায় ৩ বছর সাজা ভোগ করে গত ১ মাস আগে মুক্ত হন। অপরাধের জীবন ত্যগ করে সুন্দর জীবনের প্রত্যাশায় কাজ করতে চান তিনি। তাকেও জীবিকা নির্বাহের জন্য চাকরি এবং সেলাই মেশিন দেওয়া হয়।

এছাড়া বরিশালের হিজলা উপজেলা গুয়াবাড়িয়া এলাকার ৬৪ বছরের বৃদ্ধ আব্দুর রহিম মাঝি চুরি মামলায় এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করেছেন। সাজা ভোগের কিছুদিন বাকি থাকলেও ২৬ মার্চ উপলক্ষে জেলখানায় তার আচার-আচরণ সবদিক বিবেচনা করে জেলা প্রশাসকের সুপারিশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক আদেশে মুক্তি পান। স্ত্রী এবং তিন সন্তানকে নিয়ে কষ্টে দিন কাটানো আব্দুর রহিমেরর জীবিকা নির্বাহের জন্য একটি ভ্যান দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) সকাল সাড়ে ১০টায় বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতি, সমাজসেবা অধিদফতর এবং বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের আয়োজনে মুক্তিপ্রাপ্ত ৪ কয়েদির নতুন জীবন সূচনার পাশাপাশি জীবিকা নির্বাহের জন্য সেলাই মেশিন ও ভ্যান বিতরণ করা হয়।

বিতরণ শেষে জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন করেন এবং ফলের গাছ রোপণ করেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গৌতম বাড়ৈ, বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বনিক, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার সুব্রত বিশ্বাস দাস, প্রবেশন অফিসার সাজ্জাদ পারভেজ প্রমুখ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৭ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২১
এমএস/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।