মানিকগঞ্জ: বর্ষার আগমনে মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলার শত বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাটে আসতে শুরু করেছে বিভিন্ন আকৃতির নৌকা। তবে এ বছর এখনো জেলার চরাঞ্চল ছাড়া অন্য কোনো স্থানে পানি না বাড়ায় তেমন বাড়েনি নৌকা বিক্রি।
জেলার প্রায় সব কয়েকটি উপজেলার বুক চিরে বয়ে গেছে ছোট বড় বেশ কয়েকটি নদী। আর এ কারণে বর্ষার শুরু থেকেই নিম্ন অঞ্চলের বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর এক মাত্র ভরসার যান হলো নৌকা। জেলার তিনটি উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন চরাঞ্চলের থাকায় এসব নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষ সাধ্যের মধ্যে নৌকা কিনতে এ হাটে ছুটে আসছে। আর এসব নিম্নাঞ্চলের মানুষের মালামাল পরিবহন ও যাতায়াতের একমাত্র বাহন হয়ে উঠেছে নৌকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঘিওর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাট শুধু নামেই বিখ্যাত নয়। এখানে সাধ্যের মধ্যে সব শ্রেণি পেশার মানুষের জন্য রয়েছে নানা ধরনের নৌকা। বড় কয়েকটি নদীতে পানি বাড়ায় ধীরে ধীরে ছোট শাখা নদীগুলোতে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। আর এ জন্য নিম্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা আগাম প্রস্তুতির জন্য নৌকার হাটে আসতে শুরু করেছে। জেলার ভেতর ও আশে পাশের বেশ কয়েকটি জেলা থেকে নৌকার ক্রেতা ও বিক্রেতারা আসছে এই শত বছরের পুরানো নৌকার হাটে। মহামারি করোনার জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঘিওর উপজেলা কেন্দ্রীয় ঈদগাঁ জামে মসজিদ মাঠে জমে উঠতে শুরু করেছে নৌকার হাট। নৌকার কাঠামো তৈরিতে মেহগনি, কড়ই, আম চাম্বল এবং রেইন্টি কাঠের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। প্রতিটি নৌকা মান ও আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে। একেকটি নৌকা ৩ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। তবে এ বছর নৌকার দাম নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে ক্রেতাদের মধ্যে।
দৌলতপুর উপজেলার চরকাটারি এলাকার আফসার মিয়া বলেন, বর্ষার সময় নৌকা ছাড়া আমাগো চলা ফেরা করার কোনো উপায় নেই। আর সে জন্যই প্রতি এক বা দুই বছর পর পর এ হাট থেকে নৌকা কিনি। তবে এ বছর এখনো পুরো দমে নৌকার বেচাকেনা শুরু না হওয়ায় পাইকাররা তাদের ইচ্ছে মতো নৌকার দাম চাচ্ছেন। আর বাধ্য হয়েই বেশি দাম দিয়ে নৌকা কিনতে হলো।
নৌকার কারিগর লাল চাঁন বলেন, লকডাউনের জন্য সব জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ার এ বছর কিছুটা খরচ বেশি হচ্ছে নৌকা তৈরি করতে। আর সে অনুযায়ী নৌকার দাম অন্যন্যা বছরের তুলনায় একটু বেশি। নৌকার দর একটু বেশি হওয়ায় হাটে নৌকার বেচাকেনা কম হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ বিষয়ে ঘিওর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এই নৌকার হাটটি আমাদের জেলা ও উপজেলার ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে। আমার জন্মের পর থেকে দেখে আসছি এই নৌকার হাটটি। আর তিন পুরুষের কাছে গল্প শুনেছি এই হাটের ইতিহাস ঐতিহ্যের কথা। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে হাটের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমি চাই এই নৌকার হাটের সেই হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য যেন ফিরে আসে। আমাদের এই উপজেলায় নৌকার হাটের সুনাম রয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এ হাটেনৌকা কিরতে আসে বিভিন্ন মানুষ বলেও জানান চেয়ারম্যান হাবিবুর।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫১ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২১
আরআইএস