ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নৌকা সমর্থন না করায় বৃদ্ধের ঘর ভাঙচুর-লুট, কান ধরে উঠবস!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৮ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২১
নৌকা সমর্থন না করায় বৃদ্ধের ঘর ভাঙচুর-লুট, কান ধরে উঠবস! ভুক্তভোগী কুদ্দুস হাওলাদা। ছবি: সংগৃহীত

বরগুনা: বরগুনার আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করায় ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধকে কান ধরে উঠবস করানো হয়েছে। তার ঘর ভেঙে নগদ টাকা ও লক্ষাধিক টাকার স্বর্ণালঙ্কার লুট করা হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে।

 

ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।  

এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী কুদ্দুস হাওলাদার (৬৫)। তিনি ওই ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ডের পাতাকাটা এলাকার বাসিন্দা।

নির্বাচনের ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই মঙ্গলবার (২২ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পাতাকাটা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় ওই বৃদ্ধের ঘর ভাঙচুরের পাশাপাশি নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার লুটসহ তার এক ছেলের স্ত্রী ও এক ভাইয়ের স্ত্রীকেও মারধর করা হয়।

কুদ্দুস হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, গত ২১ জুন আমাদের ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মহসিন হাওলাদারকে সমর্থন করি। তিনি মোটরসাইকেল প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। আর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. আখতারুজ্জামান খান বাদল।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে জয়লাভ করার পরের দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আক্তারুজ্জামান খানের কর্মী ও সমর্থক আমার প্রতিবেশী কাইউম হাওলাদারের ছেলে রাশেদুল, আমজাদ হাওলাদারের ছেলে মনিরুল, সোহেলের ছেলে মিরাজ এবং নাসিরের ছেলে ইলিয়াসসহ অন্তত ২৫ থেকে ৩০ জন লোক আমাকে ঘর থেকে টেনে-হিঁচড়ে বাইরে নিয়ে যায়। এরপর তারা আমার ভাইয়ের বউ ও পুত্রবধূসহ নাতি-নাতনিদের সামনে আমাকে মারধর করে কান ধরিয়ে উঠবস করায়। এতে আমার ছেলের বউ রুমানা এবং ভাইয়ের বউ ফিরোজা বাধা দিলে তাদেরও মারধর করে ওই আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। সে সময় তার ঘরের শোকেস ও আলমারি ভেঙে ১৮ হাজার টাকাসহ নাতনির বিয়ের জন্য রাখা লক্ষাধিক টাকার স্বর্ণালঙ্কারও নিয়ে যায় নৌকা প্রতীকের কর্মী ও সমর্থকরা।

কুদ্দুস হাওলাদার কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, এই বয়সে ভাইয়ের বউ ও ছেলে বউসহ নাতি-নাতনিদের সামনে আমাকে মারধর করে কান ধরে উঠবস করালো ওরা। আমার এখন লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করে। কার কাছে বিচার দেবো? কে বিচার করবে এ ঘটনার? কিছুই বুঝতে পারছি না।  

এ বিষয়ে ওই ইউনিয়নের পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাডভোকেট মহসিন হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী অংশ নেবে এবং জয়-পরাজয় থাকবে। তাই বলে পরাজিত প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকদের এভাবে লাঞ্ছিত, মারধর ও বাড়িঘর ভাঙচুর করবে এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। বৃদ্ধ কুদ্দুস হাওলাদারের সঙ্গে যা ঘটেছে তা নিঃসন্দেহে লজ্জাজনক এবং ন্যক্কারজনক ঘটনা। এ ঘটনার বিচার চাই।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর থেকেই আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আখতারুজ্জামান খান বাদল নিজের কর্মী ও সমর্থকদের দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হামলা এবং ভাঙচুর শুরু করেছেন। এতে কেউ পালিয়ে রক্ষা পাচ্ছেন, আবার কারো স্থান হচ্ছে হাসপাতালে। গবাদিপশু লুটে নেওয়ার ঘটনাও ঘটিয়েছেন তার কর্মীরা। এ বিষয়ে আমি আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) অবহিত করলেও তারা এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

এদিকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে চাওড়া ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান খান বাদল বাংলানিউজকে বলেন, আমি ও আমার কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভুয়া ও ভিত্তিহীন। আমার কর্মীরা কোনো অন্যায় ও অপকর্মের সঙ্গে জড়িত নয়। নির্বাচনে হেরে গিয়ে অ্যাডভোকেট মহসিন হাওলাদার আমার কর্মী ও সমর্থকদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন।

এ বিষয়ে আমতলী থানার ডিউটি অফিসার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুল মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, বৃদ্ধকে কান ধরিয়ে উঠবস করানোর ঘটনা এবং ঘটনাটি লিখিত অভিযোগের বিষয়ে আমি অবগত নই।

তিনি বলেন, চাওড়া ইউনিয়নের পরিস্থিতি শান্ত আছে। পুলিশ সদস্যরা সেখানে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় আছে। এর পরও যদি কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ওসি শাহ আলম হাওলাদার বলেন, এ ঘটনায় এখনও কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে অভিযান চলছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ওই ইউনিয়নে পুলিশ মোতায়েন রাখা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২১
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।