ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নাটোরে ‘লকডাউন’ বাড়লো আরও ৭ দিন 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৩ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২১
নাটোরে ‘লকডাউন’ বাড়লো আরও ৭ দিন 

নাটোর: নাটোরে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় ‘লকডাউন’ আরো সাত দিন বাড়িয়ে জেলার আটটি পৌরসভায় সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (২২ জুন) দিনগত রাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।

এছাড়া রাত ৯টার দিকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে নাটোরের জেলা প্রশাসকসহ রাজশাহী বিভাগের সব জেলার জেলা প্রশাসকদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের ভার্চ্যুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সব জেলার জেলা প্রশাসক ছাড়াও পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জনসহ সরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা অংশ নেন। সেখানে আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুরহাট-বাজার ও করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা ও বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এর আগে দুপুরে নবাগত জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের সভাপতিত্বে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির ভার্চ্যুয়াল সভায় জেলার আটটি পৌরসভায় সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেখানে পৌরসভা ও উপজেলা পর্যায়ের ‘লকডাউন’ দেওয়ার জন্য কমিটির অধিকাংশ সদস্য মতামত দেন। ওই সভায় বলা হয়, নাটোরের করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ায় জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভায় নাটোর ও সিংড়া পৌরসভায় প্রথম এক সপ্তাহ পরে তা বাড়িয়ে আরও এক সপ্তাহের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল।

এরপর থেকে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্বাস্থ্য প্রশাসন ‘লকডাউন’ বা বিধিনিষেধ সফল করার জন্য নানা ধরনের ব্যবস্থা নেয়। মানুষকে সচেতন করতে লিফলেট বিতরণ ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রচার অভিযান চালানো হয়। বিভিন্ন সড়কে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। তারপরও মানুষ সচেতন না হওয়ায় করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। বরং খারাপের দিকে যাচ্ছে। তাই আগামী ২৯ জুন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নাটোরের আটটি পৌরসভায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

এ সময় বিভিন্ন নির্দেশনা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল, পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা, সিভিল সার্জন ডা. কাজী মিজানুর রহমান, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) উপ-পরিচালক ইকবাল হোসেন, নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি, সিংড়া পৌর সভার মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান প্রমুখ।  

এছাড়া সভায় বিভিন্ন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকতারা অংশ নেন। পরে রাত ১০টার সময় রাজশাহী বিভাগের সব জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ভার্চ্যুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব সব জেলা প্রশাসকদের করোনা মোকাবিলায় বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন। পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের ভার্চ্যুয়াল মতবিনিময় সভা শেষে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান নবাগত জেলা প্রশাসক।

উল্লিখিত ‘লকডাউন’র মধ্যে আটটি পৌরসভা এলাকায় সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। ওষুধ, চিকিৎসাসেবা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকান ছাড়া শপিংমল, মার্কেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। ওই সময়ের মধ্যে সব সামাজিক রাজনৈতিক ও ধর্মীয় গণজমায়েত বন্ধ থাকবে। সব ধরনের পর্যটনস্থল, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে।

প্রয়োজনে মাস্ক ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না। কৃষিপণ্য, খাদ্যসামগ্রী পরিবহন এবং আন্তঃজেলা পরিবহনসেবা এ আদেশের আওতার বাইরে থাকবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রতি দিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা থাকবে। তবে সরকারের রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত দফতর এ আদেশের আওতার বাইরে থাকবে।

নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে জানান, করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে এর আগে গত ৯ জুন থেকে দু’দফায় নাটোর সদর ও সিংড়া পৌর এলাকায় ‘লকডাউন’ ঘোষণা করা হয়েছিল। তা আজ শেষ হয়েছে। কিন্তু তাতেও সংক্রমণের হার কমেনি। যার কারণে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলার আটটি পৌরসভায় বিধিনিষেধ আরোপ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী বুধবার (২৩ জুন) সকাল ৬টা থেকে ২৯ জুন (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জেলার আটটি পৌর এলাকায় কঠোর বিধিনিষেধ বলবৎ করা হবে। আগের বিধিনিষেধ বহাল রেখে এ দুই পৌরসভার চলমান ‘লকডাউন’ আরো এক সপ্তাহ বর্ধিত করা হয়েছে। আর অপর ছয়টি পৌরসভাকে এ ‘লকডাউন’র আওতায় আনা হলো। পৌরসভাগুলো হচ্ছে- নলডাঙ্গা, বড়াইগ্রাম, বনপাড়া, বাগাতিপাড়া, গোপালপুর ও গুরুদাসপুর। তবে উপজেলার আওতাভুক্ত এলাকাগুলোকে আপাতত ‘লকডাউন’র আওতায় আনা হচ্ছে না। পরিস্থিতি বিবেচনায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান নবাগত এ জেলা প্রশাসক।

নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বাংলানিউজকে জানান, জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলার আটটি পৌরসভায় কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন এবার আরো কঠোরভাবে বিধিনিষেধ পালনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। মানুষকে ভালো রাখতে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে পুলিশের উদ্যোগে অক্সিজেন ব্যাংক স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে একটি হট লাইন নম্বর রাখা হয়েছে। অক্সিজেন প্রয়োজন হলে তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিনামুল্যে বাড়িতে অথবা হাসপাতালে আক্রান্তদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০১২২ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২১
আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।