ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বীর মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে টাকা আত্মসাৎ, সাবেক ডিজিএম'র বিরুদ্ধে চার্জশিট 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৭ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২১
বীর মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে টাকা আত্মসাৎ, সাবেক ডিজিএম'র বিরুদ্ধে চার্জশিট 

ঢাকা: মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে এক কোটি ৩১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সোনালী ব্যাংকের সাবেক ডিজিএম প্রদীপ কুমার শর্মার বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মঙ্গলবার (২২ জুন) দুদক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, দুদুক, সজেকা, ঢাকা-১ এর ২০১৯ সালের ২৭ জুলাইয়ে দায়ের করা মামলার তদন্তকালে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, আসামি প্রদীপ কুমার শর্মা বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের ঢাকায় অফিসার পদে চাকরির জন্য গত ১৯৮৩ সালের ২৪ নভেম্বর আবেদন করেন। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাকির খান চৌধুরী হারুনের স্বাক্ষরিত ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উপদেষ্টার পক্ষে মেজর জেনারেল সাদিকুর রহমানের ১৯৮৩ সালের ১৭ মার্চ স্বাক্ষরিত “যাহার জন্য প্রযোজ্য” প্রত্যয়ন পত্রের ছায়ালিপি ব্যবহার করে ১৯৮৪ সালের ১৫ জুলাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা দিয়ে চাকরিতে যোগদান করেন। চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে সাধারণ প্রার্থীর সর্বোচ্চ বয়স সীমা ছিল ১৯৮৩ সালে ৩০ নভেম্বর ২৭ বছর। আর মুক্তিযোদ্ধা প্রার্থীদের বয়স ছিল ৩০ উল্লেখ ছিল। অথচ ওই তারিখে তার বয়স ছিল ২৯ বছর ০৪ মাস ২৯ দিন। প্রদীপ কুমার শর্মার জন্ম তারিখ ১৯৫৪ সালের ০১ জুলাই। আসামি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ১৯৮৪ সালে ১০ জুলাই চাকরিতে যোগদান করে অবসরের তারিখ পর্যন্ত (২০১৪ সালের ৩০ জুন তারিখ পর্যন্ত) সোনালী ব্যাংক লিমিটেড থেকে বেতন বাবদ ৬৯ লাখ ৩১ হাজার ৭৯৪ দশমিক ২৮ পয়সা, উৎসব বোনাস বাবাদ ৮ লাখ ০৮ হাজার ২৪৭ টাকা, উৎসাহ বোনাস বাবদ ছয় লাখ ৩৩ হাজার ৫২৫ টাকা, এক্সগ্রেসিয়া বাবদ ১ লাখ ৭০ হাজার ৭৫১ টাকা, কর্মচারী গৃহ নির্মাণ বাবদ ঋণ ৪৫ লাখ ৬০ হাজার ৬৬৬ টাকা (সুদ ব্যতীত) ও কম্পিউটার ঋণ বাবদ (সুদ ব্যতীত) ৫২ হাজার ২০০ টাকা উত্তোলন করেন। এছাড়া তিনি সর্বমোট এক কোটি ৩১ লাখ ৫৭ হাজার ১৮৩ টাকা, ২৮ পয়সা সোনালী ব্যাংক লিমিটেড থেকে উত্তোলন পূর্বক আত্মসাত করেছেন।  

তদন্তকালে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচন-২০১৪ উপলক্ষে প্রণয়নকৃত কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকায় প্রদীপ কুমার শর্মার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, কিশোরগঞ্জ সদর, কিশোরগঞ্জ মারফত প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র মোতাবেক প্রদীপের বাবা স্বর্গীয় জগদীশ চন্দ্র পন্ডিত, স্থায়ী ঠিকানা গ্রাম শোলাকিয়া, পোস্ট অফিস ,থানা ও জেলা কিশোরগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধাদের হালনাগাদ তালিকায়ও তার নাম নেই।

এছাড়া বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের মারফত উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি স্বাক্ষরিত সনদ রেজিস্টারে, গেজেটে, মুক্তিবার্তা (লালবই) ও ভারতীয় তালিকায় (কল্যাণ ট্রাস্ট) প্রদীপের বাবা স্বর্গীয় জগদীশ গ্রাম শোলাকিয়া, পোস্ট অফিস, থানা, জেলা কিশোরগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার নাম নেই। তার সাময়িক সনদের পরিবর্তে  মূল সনদ সংগ্রহ করার নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও প্রদীপ তা সংগ্রহ  করেননি। কারণ তার কাছে কোনো সাময়িক সনদও নেই। আছে “যাহার জন্য প্রযোজ্য” নামে দু’টি প্রত্যয়ন পত্র।

প্রদীপ বীর মুক্তিযোদ্ধার কোনো সুনির্দিষ্ট দালিলিক প্রমাণ দাখিল করতে পারেন নি। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সোনালী ব্যাংক লিমিটেডে চাকরি সমাপ্ত করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মান মর্যাদা ভুলুণ্ঠিত করেছেন। এছাড়া সোনালী ব্যাংক থেকে বেতন, ভাতা ও বিভিন্ন ঋণ বাবদ সর্বমোট এক কোটি ৩১ লাখ ৫৭ হাজার ১৮৩ টাকা জালিয়াতি করে প্রতারণা অপরাধমূলক অসদাচরণ ও অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে উত্তোলনপূর্বক আত্মসাৎ করে দণ্ডবিধি ৪২০/৪০৯/৪৬৭/৪৬৮ /৪৭৭-ক এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এ মর্মে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় প্রদীপের বিরুদ্ধে ওই ধারায় বিজ্ঞ আদালতে বিচারার্থে অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমতি দিয়ে সুপারিশসহ সাক্ষ্য দাখিল করা হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২১
এসএমএকে/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।