ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ভ্রমণ ব্যয় ২৮ লাখের সঙ্গে শিক্ষাসফর ১০ লাখ!

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৭ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২১
ভ্রমণ ব্যয় ২৮ লাখের সঙ্গে শিক্ষাসফর ১০ লাখ!

ঢাকা: এক প্রকল্পের আওতায় পরামর্শকের জন্য ২৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা ভ্রমণ ব্যয় ও দেশে-বিদেশে শিক্ষাসফর বাবদ ১০ লাখ টাকার আবদার করা হয়েছে। পরামর্শকরা কোন কোন দেশে শিক্ষা সফরে যাবেন তা উল্লেখ করা হয়নি।

বাংলাদেশ রেলওয়ের এমন অযৌক্তিক আবদার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। একই সঙ্গে পরামর্শক খাতের ব্যয় কমানোর সুপারিশও করা হয়েছে।  

‘বাংলাদেশ রেলওয়ের নারায়ণগঞ্জ হতে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ইলেকট্রিক ট্রাকশন (ওভারহেড ক্যাটেনারি ও সাব-স্টেশন নির্মাণসহ) প্রবর্তনের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং বিশদ ডিজাইন’ প্রকল্পের আওতায় এ অযৌক্তিক পরামর্শক ব্যয় চাওয়া হয়েছে।  

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. মামুন-আল-রশীদের সভাপতিত্বে সম্প্রতি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা হয়। সভায় প্রকল্পের পরামর্শক ব্যয়সহ নানা বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।  

পরামর্শকের ভ্রমণ ও বিদেশে স্টাডি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের এক কর্মকর্তা  জানান, পরামর্শক প্যাকেজের মূল্যের মধ্যে এই ব্যয় অন্তর্ভুক্ত আছে বিধায় এ ব্যয় আলাদাভাবে করা হবে না। সমীক্ষা প্রস্তাবে শুধু আলাদাভাবে প্রতিফলন করা হয়েছে। স্টাডি ট্যুর বাবদ ৬০ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে ৪০ লাখ টাকা করা হয়েছে।  

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা রেলওয়ে ট্র্যাকের জুরাইন এলাকায় পদ্মা বহুমুখী সেতুর সংযোগে এলিভেটেড সড়ক রয়েছে। ওভারহেড ক্যাটেনারি রেলওয়ে ট্রাকের ওপরে নির্মিত হয় বিধায় নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকার অংশে ইলেকট্রিক ট্র্যাক প্রবর্তন আপাতদৃষ্টিতে জটিল ও অসম্ভব মনে হয়। সে বিবেচনায় নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা অংশটি বিবেচ্য প্রকল্পের সমীক্ষার আওতা থেকে বাদ দেওয়া প্রয়োজন।  

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) মো. মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরী বলেন, প্রকল্পের আওতায় নিয়োজিত পরামর্শক এ বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক কারিগরি মতামত ব্যক্ত করতে পারেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা থেকে প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে ট্র্যাক অংশে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পাদন করার যৌক্তিকতা পুনর্গঠিত সমীক্ষা প্রস্তাবে উল্লেখ করা যেতে পারে। উক্ত অংশটি সমীক্ষা থেকে বাদ দেওয়া হলে পরামর্শকের জনমাস আনুপাতিক হারে কমাতে হবে।

প্রস্তাবিত প্রকল্প ব্যয় ১৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। মার্চ ২০২১ হতে আগস্ট ২০২২ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।  

রেলপথ মন্ত্রণালয় জানায়, প্রকল্পের আওতায় ৪ জন আন্তর্জাতিক ৪ জন ও ২৩ জন স্থানীয় পরামর্শক বরাদ্দ আছে। ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ প্রবর্তন করা হলে পরিচালন ব্যয় ও পরিবহন সময় কমবে এবং কোচের প্রাপ্যতা বৃদ্ধি পাবে। এসকল তথ্যের ভিত্তি সম্পর্কে সভায় জানতে চাওয়া হলে রেলওয়ের প্রতিনিধি জানান, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) কর্তৃক ইলেকট্রিক ট্র্যাকশনের সুবিধা ও কারিগরি দিকের উপর একটি সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে। উক্ত প্রতিবেদনের আলোকে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।  

বিদ্যমান রেলওয়ে ট্র্যাকে ইলেকট্রিক লোকোমোটি চালানো সম্ভব কিনা সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে রেলওয়ের প্রতিনিধি জানান, বিদ্যমান স্থাপনায় কিছুটা পরিবর্তন অর্থাৎ ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন সংযোজন এবং ওভারহেড ক্যাটেনারি ও সাব-স্টেশন নির্মাণপূর্বক ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ চালানো সম্ভব।

বিদ্যমান নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে রেলওয়ে ইলেকট্রিক ট্রাকশন প্রবর্তন করা হলে ভ্রমণ সময় ও অপারেশনাল ব্যয় হ্রাস পাবে যা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৪ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২১
এমআইএস/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।