ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

গণপরিবহন চলাচল বন্ধ: টার্মিনাল থেকে ফিরে যাচ্ছে যাত্রীরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪০ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২১
গণপরিবহন চলাচল বন্ধ: টার্মিনাল থেকে ফিরে যাচ্ছে যাত্রীরা বাস না পেয়ে চলে যাচ্ছে এক যাত্রী। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: নেত্রকোনা থেকে চিকিৎসা করাতে ঢাকার ধানমন্ডিতে এসেছিলেন ছোটন রায়। ধানমন্ডিতে ইবনে সিনহা হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা নিয়ে গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায় ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে আসেন তিনি।

সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী ও ছোট ভাই।

কিন্তু করোনা পরিস্থিততে দেশের বিভিন্ন জেলায় লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। মূলত এই কারণেই রাজধানীর টার্মিনালগুলোতে দূরপাল্লার গণপরিবহন (বাস) সব বন্ধ পড়ে আছে। মহাখালী টার্মিনালের সব বাস বন্ধ রয়েছে।

যাত্রী ছোটন রায় এনা পরিবহনের টিকিট কাউন্টারে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু টার্মিনালের সব বাসের টিকিট কাউন্টার বন্ধ রয়েছে। এদিকে টার্মিনালের নিরাপত্তায় নিযোজিত শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য ছোটন রায়সহ অন্যান্য যাত্রীদের চলে যেতে বলেন। তারা কারণ উল্লেখ করেন ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে লকডাউন চলছে। তাই গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে।

যাত্রী ছোটন রায় বাংলানিউজকে বলেন, সোমবার (২১ জুন) সকালে নেত্রকোনা থেকে ঢাকার ধানমন্ডিতে এসেছিলাম ডাক্তার দেখাতে। কাল বিকেলে ইবনে সিনহা হাসপাতালে চিকিৎসাও নিয়েছি। ডাক্তার কিছু ওষুধ লিখে দিয়েছেন তাই আজ (মঙ্গলবার) বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে মহাখালী এসেছিলাম। কিন্তু কোনো গাড়ি চলছে না। এখন কি করবো ভাবছি। ঢাকায় আমাদের কোনো আত্মীয় থাকে না। কোথায় থাকবো তাই ভাবছি। আর কিভাবে বাড়ি যাবো সেটাই এখন বিষয়। সিলেট যাবেন বলে মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে এসেছেন আলমগীর হোসেন। তিনি বিমানবন্দরে ভিসা সংক্রান্ত বিষয়ে ঢাকা এসেছিলেন। লকডাউনের কারণে গণপরিবহন বাস চলাচল বন্ধ থাকায় তিনি পড়েছেন বিপাকে।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সোমবার দুবাই যাওয়ার ফ্লাইট ছিলো আমার সেই কারণে গত রোববার (২০ জুন) সকালে ঢাকার বিমানবন্দরে এসে নেমেছিলাম। কিন্তু করোনা টেস্টের রিপোর্টের কারণে আমার ফ্লাইট ক্যানসেল হয়েছে। তাই সিলেট চলে যেতে চাইছিলাম। কিন্তু কোনো গাড়ি চলে না।

তিনি বলেন, বিমানবন্দরে প্রাইভেটকারগুলো ভাড়া দ্বিগুণের বেশি চায়। ১ হাজার টাকার ভাড়া চায় আড়াই হাজার তিন হাজার টাকা। তাই সেখান থেকে মহাখালী এসেছিলাম বাসে যাবো বলে। কিন্তু বাস তো চলছে না।

শুধু যাত্রী ছোটন রায় ও আলমগীর নয়, তাদের মত আরও অনেক যাত্রী মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে এসে ফিরে যাচ্ছে। তারা বলছেন, আমরা জানি না, টার্মিনালে এসেই শুনছি বাস চলাচল বন্ধ।

মঙ্গলবার সরেজমিনে মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে দেখা গেছে, বন্ধ বাসগুলো সারি সারিভাবে রাখা হয়েছে। টিকিট কাউন্টারগুলোতে ঝুরছে তালা। টার্মিনালে কয়েকটি চায়ের দোকান খোলা রযেছে তবে, একেবারে ভিড় চোখে পড়েনি।

এদিকে শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে থাকা মাইকে বার বার ঘোষণা করা হচ্ছে- টার্মিনালের যাত্রী যারা আছেন, আপনারা বাসায় চলে যান। কোনো গাড়ি চলবে না সব বন্ধ। টাঙ্গাইল, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা, হালুয়াঘাট, কিশোরগঞ্জ, ফুলবাড়িয়া, সব গণপরিবহন বন্ধ। কোনো যাত্রী টার্মিনালে থাকলে সবাই বের হয়ে যান। আর মাস্ক ছাড়া কেউ টার্মিনালে ঘোরাফেরা করবেন না। এদিকে টার্মিনালে নিয়োজিত থাকা শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যরা যাত্রীদের ভেতরে ঢুকতে মান না করছেন। তারাও টার্মিনালে ঢোকার পথগুলো দড়ি দিয়ে বেরিকেট তৈরি করে আটকে রেখেছেন।

দূরপাল্লার গণপরিবহন (বাস) আমরা বন্ধ রাখিনি, সিস্টেম অনুযায়ী সব বন্ধ হয়ে গেছে উল্লেখ করে ঢাকা জেলা বাস-মিনিবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সহ সাধারণ সম্পাদক মো. মানিক মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। ঢাকার পাশের জেলাগুলোতে লকডাউন চলছে। সেখানে কোনো গাড়ি চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যেতে হলে গাজীপুরের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। চট্টগ্রাম যেতে হলে নারায়ণগঞ্জ হয়ে যেতে হবে। সিলেট যেতে হলে নরসিংদী হয়ে যেতে হবে। কিন্তু এসব জায়গাতে লকডাউন থাকার কারণে আমাদের পরিবহনগুলো চলতে পারছে না।

পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের এই নেতা আরও বলেন, লকডাউনের কারণে জরুরি পণ্যবাহী পরিবহন ছাড়া কোনো পরিবহন চলবে না। সবকিছু লহডাউনের নিয়ম অনুসারে হবে। তাহলেই দেশ থেকে করোনা ভাইরাসকে বিতাড়িত করা সম্ভব হবে। কিন্তু ইন্টার সিটি সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই চলছে, এতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকছেই।

শ্রমিক ইউনিয়নের সহ সভাপতি হাজী চাঁন মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, গত লকডাউনে টাকা ৪৯ দিন গণপরিবহন বন্ধ ছিলো। এর আগেও এমন বন্ধ রাখা হয়েছে। দফায় দফায় গণপরিবহন বন্ধ থাকায় আমরা আর্থিকভাবে খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আগের ক্ষতি এখনও উঠেনি। এখন সরকার যদি চায় তবে কোনোভাবে আমাদের দূরপাল্লার গণপরিবহন চলাচলের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। বাকিটা সরকারের ইচ্ছা। আমরা জনগণের সুবিধার স্বার্থে গণপরিবহন বন্ধ রেখেছি।

গত লকডাউনে মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে আটকেপড়া পরিবহন শ্রমিকদের তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। এবার কী এই ব্যবস্থা করা হয়েছে কিনা? জানতে চাইলে মহাখালী বাস টার্মিনাল সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দফতর সম্পাদক তরিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, গত লকডাউনে আমরা টার্মিনালে আটকেপড়া ৫শ শ্রকিমকে জন্য তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা করেছিলাম। এছাড়াও পরিবহন শ্রমিকদের পরিবাকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছিলো। এবার যদি লকডাউন দীর্ঘসময় হয় তবে আমাদের একই পদক্ষেপ থাকবে। তবে, এ বিষয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি জানাতে পারবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৬ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২১
এসজেএ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।