রাজশাহী: রাজশাহীতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার। মৃতদের মধ্যে বেশিরভাগই ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ নিয়ে চলতি মাসের ১৯ দিনে (১ জুন সকাল ৬টা থেকে ১৯ জুন সকাল ৬টা পর্যন্ত) রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা গেছেন ১৯৩ জন। মৃতদের বেশিরভাগেরই বাড়ি ভারত সীমান্তবর্তী উচ্চ সংক্রমিত এলাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী জেলায়। বর্তমানে এ দুই জেলায় বিশেষ ‘লকডাউন' চলছে। এরপরও এ দুই জেলায় করোনার সংক্রমণের চূড়ায় পৌঁছেছে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, রাজশাহীতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ‘পিক টাইম’ চলছে। অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার রাজশাহী অঞ্চলের সহকারী পরিচালক নাজমা আক্তার এ তথ্য জানান।
নাজমা আক্তার বলেন, রাজশাহীতে করোনা সংক্রমণের এখন ‘পিক টাইম’ বা সর্বোচ্চ অবস্থা চলছে বলে আমরা ধারণা করছি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে এটিকে আর বাড়তে না দেওয়া। পরিস্থিতি আগে যেমন ছিল তেমনি আছে।
এদিকে রাজশাহীতে করোনা শনাক্তের হার এখনো ৪০ শতাংশের ঘরেই ওঠানামা করছে। শুক্রবার (১৮ জুন) রামেক হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে ১৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৫০ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া গেছে। আর রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর ল্যাবে ৩৭৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৪২ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, হঠাৎ করেই করোনা আক্রান্ত রোগীর অবস্থা বেশি মাত্রায় খারাপ হয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালে আসা রোগীদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন কম। শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা হঠাৎ করে বাড়ছে। শারীরিক অবস্থার নানা ধরনগুলো পরিবর্তন হয়েছে। চিকিৎসার সময় দিচ্ছে না এ ধরনগুলো।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হাসপাতালের করোনা ইউনিটে বেড সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০৯টি করা হয়েছে। বর্তমানে বয়স্ক মানুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তরুণদের মৃত্যুর হারও। যেভাবে রোগী বাড়ছে সেভাবে চিকিৎসা দেওয়ার সক্ষমতা বাড়ানো যাচ্ছে না। ফলে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে বর্তমানে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়া করোনা রোগীদের জন্য নতুন নতুন ওয়ার্ড বাড়ানোর কারণে অন্য রোগের চিকিৎসা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
তবে সংক্রমণ সর্বোচ্চ অবস্থায় পৌঁছেছে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয় বলছেন রাজশাহীর জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. চিন্ময় কান্তি দাস। তিনি বলেন, সামাজিক সংক্রমণের হার নির্ণয়ে আমাদের কাছে যে তথ্য আছে তা পর্যাপ্ত নয়। তার ওপর পরীক্ষার সংখ্যাও যথেষ্ট নয়। সে কারণে সংক্রমণ নিয়ে যেকোনো অনুমান বা ধারণা যথাযথ নাও হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, রাজশাহীতে ‘লকডাউন’ অন্তত আরও ১৫ দিন আগে দেওয়া উচিত ছিল। সেটা হলে তার সুফল আমরা এখন পেতে পারতাম। সেক্ষেত্রে সংক্রমণের এমন ভয়াবহ চিত্র দেখতে হতো না। কিন্তু সেটা হয়নি। তাই এখন আসলে পিকে উঠেছে কিনা সেটা জেনে লাভ নেই। এখন শুধু কঠোর ‘লকডাউন’ পালন ছাড়া বিকল্প কিছু নেই বলে মনে করছেন এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩২ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২১
এসএস/আরবি