ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

টাঙ্গাইলে উদ্বোধনের ছয় মাসেও ঘরে থাকতে পারছেন না উপকারভোগীরা 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৪ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২১
টাঙ্গাইলে উদ্বোধনের ছয় মাসেও ঘরে থাকতে পারছেন না উপকারভোগীরা  প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘর। ছবি: বাংলানিউজ

টাঙ্গাইল: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনের ছয় মাস অতিবাহিত হলেও টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় মুজিব বর্ষের ঘরগুলোতে থাকছে পারছেন না উপকারভোগীরা।  

স্থানীয়রা জানান, উপকারভোগীরা না থাকায় ওইসব ঘরে মাদকের আড্ডা ও জুয়ার আসর বসানো হয়।

এছাড়াও ধূলা, বালু, ময়লা আবর্জনা জমেছে ঘরগুলোতে।  

অভিযোগ রয়েছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণে উপকারভোগীরা এখনো ঘর বুঝে পাননি।  

অপরদিকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ সংযোগ, টিউবওয়েল বসানোর কাজ শেষ না হওয়ায় উপকারভোগীরা প্রধানমন্ত্রীর ঘরে এখনও উঠতে পারেননি।  

এদিকে দেশব্যাপী দ্বিতীয় পর্যায়ের ঘরগুলো হস্তান্তরের সময় ঘনিয়ে এসেছে।

জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ‘মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার, গৃহহীন থাকবে না একটি পরিবার’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে টাঙ্গাইল জেলায় হতদরিদ্র, অসহায় ও গরিব গৃহহীন মানুষের মধ্যে দুই শতাংশ জমিসহ আধা পাকা ঘর দেওয়া হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় প্রথম পর্যায়ে দুই হাজার ২০০ পরিবারের মধ্যে ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। গত ১৫ জানুয়ারি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘর হস্তান্তরের উদ্বোধন করেন।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রথম পর্যায়ে সদর উপজেলার চিলাবাড়িতে ৪৯টি, দাইন্যাতে তিন, রসুলপুরে ৪৫, গালায় ১৭, মগড়ায় ৫০, ঘারিন্দায় সাত, করটিয়ায় ১০, ছিলিমপুরে ১০, পোড়াবাড়ীতে ২৩, কাকুয়ায় দুই, হুগড়ায় দুই, কাতুলীতে তিন, মাহমুদনগরে চার ও পৌরসভায় তিনটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।

সরেজমিনে সদর উপজেলার রসুলপুর ও চিলাবাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরগুলোর নির্মাণকাজ শেষ। কোথাও কোথাও এখনও রং এর কাজ বাকি রয়েছে। ঘরের কক্ষগুলো নোংরা, জুয়া খেলার তাস, মাদক সেবনের সামগ্রী পড়ে রয়েছে। বাথরুমগুলো অপরিষ্কার ও সারিবদ্ধ ঘরের সামনে পানি জমে রয়েছে। কোনো কোনো সেপটিক ট্যাংকের ডাকনা লাগানো হয়নি। উঠানের গাছ কাটা হলেও বড় বড় শিকড় এখনো অপসারণ করা হয়নি।  

স্থানীয়রা জানান, উপকারভোগীরা বসবাস না করায় ঘরগুলোর এই দূর অবস্থা। বুধবার বিদ্যুতের খুঁটি লাগানো হলেও বিদ্যুতের তার ও সংযোগ দেওয়া হয়নি। কোনো ঘরেই বিদ্যুতের তার, বাল্ব ও সুইচ লাগানো হয়নি।

রূপচাঁন শেখ নামে এক এলাকাবাসী বলেন, ‘চিলাবাড়ী গ্রামের ঘরগুলোতে কেউ না থাকায় রাতে আড্ডা ও জুয়ার আসর বসে। ছয় মাস আগে শুনছিলাম ঘরে থাকা শুরু করবে গৃহহীনরা। তবে এখনও পর্যন্ত থাকছে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক উপকারভোগী বলেন, ‘আমাদের কষ্ট, দুর্দশা ও দুর্ভোগ দেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের ঘর দিছে। কিন্তু আমরা ছয় মাসেও ঘরে উঠতে পারি নাই। অপরদিকে প্রথমে যে তালিকা করা হয়েছিলো সেই তালিকাও আবার পরিবর্তন করা হয়েছে। যাদের ঘর-বাড়ি আছে তাদেরও তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও অনেক প্রভাবশালী ও তাদের স্বজনদের নাম ঘর পাওয়ার তালিকায় রয়েছে। ’

দাইন্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লাভলু মিয়া লাভু বলেন, ‘ইউনিয়নে কতজন উপকারভোগীর মধ্যে ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে তার সঠিক তালিকা আমার কাছে নাই। ঘরের তালিকা তৈরিতেও আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করে নাই। কবে ঘর দেবে, কাকে দেবে, কোথায় দেবে তাও জানি না। আমাদের কাছ থেকে কোনো নামও নেয়নি, তালিকাও দেয় না। ’

গালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজ কুমার বলেন, ‘প্রথমে ইউপি মেম্বার, ভূমি অফিসের কর্মকর্তাসহ স্থানীয়দের সহযোগিতায় যে তালিকা করেছিলাম পরবর্তীতে সেই তালিকা রাখা হয়নি। যারা স্লুইচ গেট ও খাস জমিতে বসবাস ঘরে এবং যাদের অগ্রাধিকার প্রথমে থাকার কথা তাদের নাম তালিকায় রাখা হয়নি। ছয় মাস অতিবাহিত হলেও আমার ইউনিয়নে উপকারভোগীরা এখনও ঘরে থাকতে পারছে না। ’

সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রানুয়ারা খাতুন বলেন, যে সময় প্রথম পর্যায়ের ঘরগুলো উদ্বোধন করা হয় ওই সময় আমি এখানে ছিলাম না। শুনেছি সদরের বরাদ্দগুলো সবার শেষে এসেছে। সদর উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ২২৮টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। কাজ কিছুটা বাকি থাকায় এখন উপকারভোগীদের উঠানো হয়নি।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ সংযোগ ও টিউবওয়েল বসানোর কাজ শেষ না হওয়ায় তারা এখনও ঘরে থাকতে পারেননি। তবে বিদ্যুতের কাজ চলমান রয়েছে অল্প সময়ের মধ্যেই তারা ঘরে থাকা শুরু করতে পারবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।