ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ধীরে ধীরে ইউটার্ন-ইউলুপের সুফল পাচ্ছেন নগরবাসী

দীপন নন্দী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৮ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২১
ধীরে ধীরে ইউটার্ন-ইউলুপের সুফল পাচ্ছেন নগরবাসী ইউটার্ন-ইউলুপের সুফল পাচ্ছেন নগরবাসী। ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: রাজধানীর সাত রাস্তা থেকে বনানীর কাকলির মোড়- এ সড়কে যানজটের সমস্যা দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে সকাল আটটা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এবং বিকেল পাঁচটা থেকে রাত আটটায় এ সড়কের যানজট হয় ভয়াবহ।

এ যানজট দূর করতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নেওয়া ইউলুপ ও ইউটার্ন প্রকল্পে ধীরে ধীরে সুফল পেতে শুরু করেছেন নগরবাসী।

গত ১০ এপ্রিল ডিএনসিসির উদ্যোগে ১০টি ইউটার্ন খুলে দেওয়া হয় যান চলাচলের জন্য। এগুলো নির্মিত হয়েছে সাতরাস্তার বিজি প্রেস এলাকা, তেজগাঁও নাবিস্কো মোড়, মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে, মহাখালীর আমতলী, বনানীর চেয়ারম্যান বাড়ি, বনানী আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে, বনানী ওভারপাস, কাওলা ফ্লাইং ক্লাব, উত্তর র‌্যাব এক অফিস এবং উত্তর রাজলক্ষ্মীর সামনে। এর পাশাপাশি চালু রয়েছে রামপুরা ও মেরুল বাড্ডায় নির্মিত দুটি ইউলুপ।

রাজধানীবাসীকে যানজট থেকে মুক্ত করার এসব উদ্যোগে সুফল পেতে শুরু করেছেন নগরবাসী। তবে যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী তোলা এবং চালকদের ওভারটেক করার প্রবণতার কারণে সম্পূর্ণরূপে যানজট মুক্ত হয়নি এসব এলাকা।

সোমবার (১৪ জুন) দুপুরে সরেজমিনে রাজধানীর সাত রাস্তা থেকে বনানী আর্মি স্টেডিয়াম ঘুরে এ চিত্র নজরে পড়ে।

ইউটার্ন-ইউলুপের সুফল পাচ্ছেন নগরবাসী।  ছবি: জিএম মুজিবুর
তেজগাঁও সাত রাস্তা মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এখানে ইউটার্ন থাকায় বিপরীত রাস্তায় যাওয়ার জন্য এখন আর যানবাহনগুলোকে ট্রাফিক সিগন্যালের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। ব্যক্তিগত বাহনের পাশাপাশি মিনিবাসগুলোও বিপরীত রাস্তায় বাঁক নিচ্ছে।

এ রুটে চলাচলকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী আবু জর আনসার উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, এ রাস্তায় যানজট নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। কিন্তু এই ইউটার্নগুলো চালু হওয়ায় আমাদের চলাচলে সুবিধা হয়েছে। এখন আর আমাদের দীর্ঘক্ষণ বসে থাকতে হয় না।

তেজগাঁও বিজি প্রেসের সামনে, নাবিস্কোর মোড়ের চিত্রও একই। অন্যান্য এলাকার তুলনায় এ সড়কের পাশের রাস্তা প্রশস্ত হওয়ায় গতি খুব একটা না কমিয়েই চলাচল করতে পারছেন চালকরা।

এ সড়কে চলাচল করা বলাকা পরিবহনের চালক মো. মোফাজ্জল বলেন, ‘আগে অনেকক্ষণ বসে থাকা লাগতো প্রাইভেটের কারণে। কিন্তু ইউটার্ন হওয়ায় প্রাইভেটগুলো দ্রুত ঘুরে যেতে পারায় যানজট কমছে।

২০১৬ সালের ২৫ জুন হাতিরঝিল প্রকল্পের অধীনে রামপুরা ইউলুপ চালু হয়। এই ইউলুপের পূর্ব পাশে বনশ্রী সড়ক, পশ্চিম পাশে হাতিরঝিল ও বাড্ডা প্রগতি সরণি। এর দুই বছর পর ২০১৮ সালের ২৮ জুলাই চালু হয় মেরুল বাড্ডা ইউলুপ। এটি ব্যবহার করে হাতিরঝিল থেকে সহজেই রামপুরা-মালিবাগে যাওয়া যায়।

সোমবার এ ইউলুপ দুইটি ঘুরে দেখা যায়, রামপুরার ইউলুপ ব্যবহার করে দ্রুতই রামপুরা ও হাতিরঝিলে যাওয়া যাচ্ছে। এখানে কোনো ইউটার্ন না থাকায় চলাচলের সময় ও যানজটের ধকল—দুইটিই কমছে।

ইউটার্ন-ইউলুপের সুফল পাচ্ছেন নগরবাসী।  ছবি: জিএম মুজিবুর
এ সড়কে চলাচল করা আকাশ পরিবহনের হেলপার মো. আব্বাস বলেন, ‘আগে এ রাস্তায় অনেক জ্যাম থাকতো। কিন্তু ইউলুপ চালুর পর যে কোনো গাড়ি পাস করতে পারছে। কোনো প্যাচ না লাগলে এ রাস্তায় এখন আর জ্যাম লাগে না’।

এ বিষয়ে ডিএনসিসির সিভিল সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) খন্দকার মাহাবুব আলম বাংলানিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের এ প্রকল্পটি সফল বলে মনে করছি৷ এ প্রকল্পের কারণে যানজট কমেছে৷ তবে কিছু ক্ষেত্রে আমরা সমস্যাও পাচ্ছি৷ যেমন তেজগাঁও, নাবিস্কো মোড় ও বনানী চেয়ারম্যান বাড়ী এলাকায় ফ্লাইওভার থেকে নামার পর কিছুটা যানজট সৃষ্টি হচ্ছে৷ সেটিও নিরসনের জন্য আমরা কাজ করছি৷

২০১৬ সালে ডিএনসিসির সাবেক মেয়র প্রয়াত আনিসুল হক তেজগাঁও সাত রাস্তা মোড় থেকে উত্তরা পর্যন্ত ১১টি ইউলুপ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেন। প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কে থাকা ১০টি সিগন্যাল পয়েন্ট এবং ইউটার্ন নেওয়ার সংকীর্ণ কিছু পয়েন্টের ফলে প্রচুর যানজট হতো। ফলে এই স্বল্প দূরত্ব পার হতে যানবাহন ও যাত্রীদের কখনও কখনও ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট হতো। এই সময় বাঁচাতেই ইউলুপের প্রকল্প নেওয়া হয়। যার মধ্য দিয়ে উভয় পাশের সড়কের যানবাহন কোনোরকম বাধা ছাড়াই এবং অন্য যানবাহনের জন্য বাধা তৈরি করা ছাড়াই সড়ক পারাপার করতে পারবে। পরবর্তী সময়ে ১০টি ইউটার্ন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। আর এতে মোট খরচ ধরা হয় প্রায় ৩২ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৫ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২১
ডিএন/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।