পাবনা: প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে নিয়ে সরকারি অফিস গণপূর্ত বিভাগে মহড়ার ঘটনায় দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ভাইরাল হলে বিপাকে পড়েন অস্ত্র নিয়ে গণপূর্ত অফিসে প্রবেশকারী ঠিকাদার গ্রুপের সদস্যরা।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পরে রোববার (১৩ জুন) দিবাগত রাতে প্রশাসনের নির্দেশনা মোতাবেক পাবনা সদর থানাতে বহনকৃত দুটি অস্ত্রই জমা দেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তরা।
সরকারি অফিসে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করার খোঁড়া অজুহাত দেখিয়েছেন অস্ত্রধারী ঠিকাদাররা। অন্যান্য ঠিকাদাররা তাদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য গণমাধ্যম কর্মীদের ভুল বুঝিয়ে বিষয়টিতে রংচং লাগিয়ে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন বলে দাবি করেছেন তারা।
এ ঘটনায় ওই দপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন ঠিকাদার ঘটনাটিকে ক্ষমতার অপব্যবহার বলছেন। পূর্বের কাজের সূত্রপাত আর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য সেদিন তারা অস্ত্র হাতে প্রকাশ্যে ওই দপ্তরে গিয়ে ছিলেন বলে মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে পাবনা জেলা আ’লীগের দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল আহাদ বাবু বলেন, দলের সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশনা মোতাবেক তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বিষয়টি জেলা আইন শৃঙ্খলা সভায় উত্থাপতি হলে কানাকানি শুরু হয়। আর ওই দপ্তরের সিসিটিভির ক্যামেরার ফুটেজ স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে সরবরাহ করা হয়েছে। তবে এটি অন্যায় হয়েছে অভিযুক্তরা সবাই স্বীকার করেছেন। আমরা তাদের ওই অফিসে যাওয়ার বিষয়টি জানার চেষ্টা করেছি। তারা স্বীকার করেছেন তারা গিয়েছিলেন তবে সেটি খারাপ কোন উদ্দেশ্যে নয়। ঠিকাদারি কাজ বুঝিয়ে দেওয়া এবং নিজেদের কাছে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ থাকার কারণে তারা তাদের বৈধ অস্ত্র দুটি নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই অফিসের কারো সাথে বা কোন ঠিকাদারের সাথে তাদের কোন ঝামেলা হয়নি বা কোনো কথাও হয়নি।
ঘটনার বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজম বলেন বলেন, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। কী কারণে কীসের জন্য তারা গণপূর্ত অফিসে এসেছিলেন সেটি আমি জানি না। সেই সময়ে আমি অফিসে ছিলাম না। পরবর্তীতে অফিসে এসে জানতে পারি এবং সিসিটিভির ভিডিও ফুটজে দেখে বিষটি পরিষ্কার হই। তারা এই অফিসের কারো সঙ্গে বা কোনো ঠিকাদারের সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ করেননি। তাই বিষয়টি আমরা পুলিশকে জানাইনি। তাদের ওই বন্ধুকের লাইসেন্স আছে কিনা, বৈধ না অবৈধ সেটি পুলিশ দেখবে। বিষয়টি শুধু আমি জেলা প্রশাসক ও আমার বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা আমাকে বলেছেন, কোনো সমস্যা আছে? আমি বলেছি কোনো সমস্যা নেই।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসিম আহম্মেদের বলেন, অভিযুক্ত দুইজন আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে পুলিশের নির্দেশনা মোতাবেক থানায় তাদের বৈধ অস্ত্র দুটি জমা দিয়ে গেছেন। এই বিষয়ে আমরা তদন্ত কাজ শুরু করেছি। স্বল্প সময়ের মধ্যে একটি সঠিক প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
সবশেষ বিষয় নিয়ে কথা হয় পাবনা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ স্নিগ্ধ আখতারের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে। ঘটনাটি সত্য যে, তারা নিজেদের বৈধ অস্ত্র দুটি নিয়ে পাবনা গণপূর্ত অফিসে প্রবেশ করেছিলেন। অস্ত্র আইনে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে এই ভাবে অস্ত্র প্রদর্শন আইনগতভাবে হয়তো ঠিক না। বিষয়টি আজকের জেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায়ও উঠেছিল। গতকালকে পুলিশ সুপার স্যারের নির্দেশনা মোতাবেক অভিযুক্ত তিনজনের মধ্যে দুইজন পাবনা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শেখ লালু ও পৌর আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ আর খান মামুনের অস্ত্র দুটি থানাতে জমা দিতে বলা হয়েছে, তারা দিয়েছেনও। একই সাথে তারা লিখিতভাবে থানায় ভুল স্বীকার করে একটি লিখিত আবেদন করেছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত শেষ হলে প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসবে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পাবনা গণপূর্ত বিভাগে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে দলবল নিয়ে প্রবেশ করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও জেলা যুবলীগের বেশ কিছু নেতাকর্মী। গত ৬ জুন দুপুর ১২টার দিকে সদলবলে অস্ত্র নিয়ে ওই সরকারি দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে প্রবেশ করেন তারা। সেই সময়ে তিনি অফিসে না থাকায় পরবর্তীতে তারা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলীর কক্ষে প্রবেশ করেন। সেই প্রকৌশলীর কক্ষের টেবিলের উপরে অস্ত্র রেখে আওয়ামী লীগ নেতারা তার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথাবার্তা বলেছেন বলে জানা যায়।
অস্ত্র নিয়ে প্রবেশকারী তিন নেতা হলেন—পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ও নাইস কনস্ট্রাকশনেরর ফারুক হোসেন, পাবনা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শেখ লালু ও অস্ত্র হাতে পৌর আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ আর খান মামুন।
সংশ্লিষ্ট নিউজ: পাবনায় গণপূর্ত অফিসে অস্ত্র হাতে ঠিকাদার
বাংলাদেশ সময়: ০১৩০ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২১
এমজেএফ