খুলনা: ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে প্রবল জলোচ্ছ্বাসে খুলনার কয়রা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে পানিতে তলিয়ে যায় গ্রামের পর গ্রাম। উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া এলাকায় কপোতাক্ষ নদের ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামত স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছিলেন গ্রামবাসী।
মঙ্গলবার (০১ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একটি ট্রলার নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনের সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান বাবু।
বাঁধে কাজ করা উত্তেজিত জনতা সংসদ সদস্যকে দেখে বিক্ষুব্ধ হয়ে তার বিরুদ্ধে স্লোগন দিতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা কাঁদা ছুড়ে মারতে থাকেন সংসদ সদস্যকে বহন করা ট্রলারের দিকে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ট্রলার নিয়ে চলে যান বাবু। মাইকে উত্তেজিত মানুষকে শান্ত হওয়ার আহবান জানান একজন ঘোষক। কিন্তু প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে উত্তেজনা বিরাজ করে বাঁধ এলাকায়। বাবুকে ট্রলার নিয়ে ফিরে যেতে দেখে হাততালি দিয়ে ওঠেন অনেকেই। তবে কিছুক্ষণ পর আবার ফিরে আসেন সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু। এলাকাবাসীর সঙ্গে বাঁধ নির্মাণ কাজেও অংশ নেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, এমপি বাবুকে একটি ট্রলারে করে ভাঙা বাঁধের কাছে আসতে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করা মানুষ। যখনই তার ট্রলারটি ঘাটে ভিড়তে যায়, তখনই কাঁদা ছুড়তে শুরু করেন অনেকে। বারবার মাইকে ঘোষণা দিয়েও উত্তেজিত জনতাকে নিবৃত্ত করা যায়নি।
স্থানীয়রা আরও বলেন, বাঁধ মেরামত করা যাদের দায়িত্ব তারা কেউ এগিয়ে আসে না। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই, আমাদেরই বাঁধ মেরামতের দায়িত্ব নিতে হয়। তাহলে জনপ্রতিনিধি ও কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব কী? আমরা জেনেছি এমপির লোকজন বাঁধ সংস্কারের দায়িত্ব পান। তাদের অবহেলায় আজ এমন পরিস্থিতি।
কেন এমপির ওপর ক্ষিপ্ত হলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে স্থানীয়রা বলেন, ইয়াসের পর কয়রায় পানিবন্দি মানুষ ভীষণ কষ্টে আছে। জোয়ারের পানিতে ঘরবাড়ি, মাছের ঘের, ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে। ঘরে খাবার নেই। তারপরও তারা খেয়ে না খেয়ে স্বেচ্ছায় বাঁধ মেরামত করছে। বাঁধ ভেঙে গেলে বেড়িবাঁধের কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন এমপি বাবু। তার ঘনিষ্ঠদের ঠিকাদারির কাজ দেওয়া হয়। এ কারণে বাঁধের কাজ বেশি দিন টেকে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তারাও ভয়ে কিছু বলেন না। তাই জোয়ারের পানি সামান্য বাড়লেই বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। এতে ডুবতে হয় কয়রাবাসীকে।
মঙ্গলবার দুপুরে সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান বাবু বাংলানিউজকে বলেন, ওরা (স্থানীয়রা) বিক্ষুব্ধ। তারা বলেছে, আমরা কষ্টে আছি, আপনি থাকতে আমরা কেন এত কষ্ট পাচ্ছি? ওরা টেকসই বেড়িবাঁধ হয় না কেন এ নিয়ে স্লোগান দিয়েছে। এখানকার রাজনীতি তো বেড়িবাঁধ নিয়ে। আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তো চেষ্টা করবে আমাকে হেয় করতে। বেড়িবাঁধ মেরামতে ৫-৭ হাজার লোক কাজ করছেন। তার মধ্যে আমার বিপক্ষে তো কেউ থাকবে। কিছু লোক বিক্ষুব্ধ হলেও কিছু লোক বলেছে, উনি তো নিজে এসেছেন। কাজ করছেন বরাদ্দ বাড়াচ্ছেন। সময় তো লাগবে। ওদের দাবি আমি যেন একটু মাটি কাটি। আমি ওদের সঙ্গে মাটি কেটেছি। তাদের বুঝিয়ে বলেছি, আমাকে একটু সময় দেন। প্রকৃতির ওপর তো আমাদের হাত নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০২১
এমআরএম/এমজেএফ