ঢাকা, সোমবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ মে ২০২৪, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

চিকিৎসক লিপিকে হত্যার পর বিছানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়

মিরাজ মাহবুব ইফতি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৭ ঘণ্টা, জুন ১, ২০২১
চিকিৎসক লিপিকে হত্যার পর বিছানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়

ঢাকা: আগুনের খবরে প্রথমে ফায়ার সার্ভিস আসে, পরে কলাবাগান থানা পুলিশও। ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর আগুনের ঘটনা ছাপিয়ে রক্তাক্ত ও একাধিক ক্ষতের দাগ দেখে পুলিশ জানায়, পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে গ্রিন লাইফ হাসপাতালের চিকিৎসক সাবিরা রহমান লিপিকে (৪৭)।

পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, হত্যার আলামত ও ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য ঘরে আগুন দেওয়া হয়। তবে কে বা কারা এটি ঘটিয়েছে তা প্রাথমিকভাবে জানা যায়নি। যদিও ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে ডিবি পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

তারা হলেন- নিহত চিকিৎসকের বাসার কাজের বুয়া, সাবলেট থাকা এক বাসিন্দা কানিজ সুবর্ণা, তার এক বন্ধু মাহাতির মোহাম্মদ স্পন্দন ও বাড়ির দারোয়ান রমজান।

অন্যদিকে নিহত ডাক্তার সাবিরার স্বামীসহ আত্মীয়দের দাবি, পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যায় যেই জড়িত থাকুক না কেন তারা পুলিশের তদন্তে আস্থা রাখতে চান। পুলিশের বের করুক খুনি কারা, খুুনিদের বিচার চান তারা।

সোমবার (৩১ মে) রাজধানীর কলাবাগানের ৫০/১ ফার্স্ট লেনের ভাড়া বাসা থেকে লিপির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি গ্রিন লাইফ হাসপাতালের কনসালটেন্ট (সনোলজিস্ট) ছিলেন। হত্যার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট। তারা মরদেহ থেকে আলামত সংগ্রহ করেন।

ক্রাইম সিন জানায়, সাবিরাকে হত্যার পর বিছানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। দাহ্য পদার্থ না থাকায় আগুন তেমন ছড়ায়নি। তবে, সাবিরার শরীরের কিছু অংশ এতে দগ্ধ হয়।

সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের ইন্সপেক্টর শেখ রাসেল কবির বাংলানিউজকে বলেন, ধারালো অস্ত্র দিয়ে সাবিরার শ্বাসনালী কেটে ফেলা হয়েছে। তার দেহে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ও পোড়ার ক্ষত আছে। আমরা আপাতত নিশ্চিত হয়েছি, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। আলামত দেখে মনে হয়েছে, মধ্যরাতের যেকোনো সময় হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে।

নিহত ডাক্তার সাবিরার মামা হারুনুর রশিদ মৃধা জানান, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। হত্যাকারীরা সাবিরাকে কুপিয়ে হত্যার পরে আগুন লাগিয়ে আলামত ধ্বংসের চেষ্টা করেছিল। পুলিশ কাজ করছে আমরা পুলিশের ওপর আস্থা রাখতে চাই। তারা নিশ্চয়ই খুনিদের গ্রেফতার করতে পারবেন।

মরদেহ উদ্ধারের পর ওই বাসায় গিয়ে জানা যায়, তিনটি কক্ষের মধ্যে একটিতে লিপি একাই থাকতেন। বাকি দুটি কক্ষ সাবলেট (ভাড়া) দিয়েছিলেন। তার স্বামী শামসুর আজাদ একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন, থাকেন শান্তিনগরে।

এ বিষয়ে বাড়ির মালিক মাহবুব ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, সাবলেট দেওয়ার বিষয়টি আমি জানতাম না। মরদেহ উদ্ধারের পর জানতে পারি বাকি দুটি কক্ষ তিনি অন্যজনের কাছে ভাড়া দিয়েছিলেন।

স্বামী সামসুদ্দিন আজাদ বলেন, শ্বাশুড়ি বেলা ১১টার দিকে ফোন করে জানায় তার স্ত্রী সাবিরা মারা গেছে। এরপরই আমি ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। আমার স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে। হয়তো খুনিরা হত্যার ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য আগুন লাগিয়ে থাকতে পারে।

কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিতোষ চন্দ্র জানান, প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা একটি হত্যাকাণ্ড। তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৪ জনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। রাতেই একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০২১৯ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০২১
এমএমআই/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।