ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পানির দাম বাড়লেও কমছে না ময়লা-পোকামাকড়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২২ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২১
পানির দাম বাড়লেও কমছে না ময়লা-পোকামাকড় ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: আবাসিক ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। রাজধানীবাসীর অভিযোগ, বাড়েনি পানির মান তবুও বছরে বছরে পানির দাম বাড়াচ্ছে ওয়াসা।

এমনকি পানিতে ময়লা-পোকামাকড়ও মিলছে হরহামেশা। করোনা মহামারিকালে সাধারণ মানুষের রোজগার কমেছে। এমন সময়ে পানির দাম বাড়ানো ঢাকার বাসিন্দাদের জন্য ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রোববার (৩০ মে) ওয়াসার পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজধানীতে বসবাস করা কয়েকটি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার সময় তারা তাদের আক্ষেপের কথা জানান এভাবে।

মনিপুর এলাকার বাসিন্দা সাবরীন রুমী বাংলানিউজকে বলেন, ছয় মাস আগেও আমাদের লাইনে পরিষ্কার পানি আসতো। কিন্তু গত ছয় মাস ধরে পানির সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ছোট ছোট পোকামাকড় এবং ময়লা আসতে শুরু করে। এরপর থেকে পানি সবসময় পরিষ্কার করে পান করতে হচ্ছে। পানি যেন পরিষ্কার আসে তার কারণে কলে ছাঁকনি লাগিয়ে রাখতে হয়।  

‘যদি পানির মান ঠিক থাকতো, বেশি দাম দিতে সমস্যা ছিল না’, যোগ করেন সাবরীন।

তিনি আরও বলেন, ‘এ সময়ে পানির বিল বাড়ানো খুবই দুঃখজনক। আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক মানুষের করোনা মহামারি কালে কমেছে আয়-রোজগার। ফলে ওয়াসার সিদ্ধান্ত ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ’

পল্লবী এলাকার বাড়িওয়ালা ইউসুফ আহমেদ তুহিন বাংলানিউজকে বলেন, আমার বাড়িতে পানির লাইনে নিয়মিত ময়লা পানি আসে। পানি ফোটালেও পরিষ্কার হয় না। আমার পানির ফিল্টার ১৫ দিনের মধ্যেই ময়লায় কালো হয়ে যায়। প্রতি বছরে পানির দাম বাড়ানো হচ্ছে। পানির দাম বাড়লেও বাড়েনি পানির মান। দাম অনুযায়ী পানির সার্ভিস পাচ্ছি না। সার্ভিস উন্নত না করে কি কারণে বছরে বছরে বাড়ানো হচ্ছে পানির দাম?

এর আগে বৃহস্পতিবার (২৭ মে) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ওয়াসা ভবনের সামনে পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)।  

সমাবেশ থেকে বলা হয়, আমাদের দেশে গত ১৩ বছরে ১৪ বার পানির দাম বাড়ানো হয়েছে। পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ১৫ দিনের মধ্যে যদি প্রত্যাহার না করা হয় তাহলে সারাদেশের সব থানায় থানায় বিক্ষোভ ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সামনে সমাবেশ করা হবে।

ঢাকা ওয়াসার উপ-প্রধান জনতথ্য কর্মকর্তা এ এম মোস্তফা তারেক জানান, বাৎসরিক মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে পানির দাম সমন্বয় ওয়াসার একটি রুটিন প্রক্রিয়া। ঢাকা ওয়াসা আইন অনুযায়ী মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে পানির দামের আংশিক সমন্বয় করেছে মাত্র। এছাড়া ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ঢাকা ওয়াসার পানির দাম বাড়ানো-কমানোর কোনো ক্ষমতা রাখেন না। এটি সম্পূর্ণরূপে ওয়াসার আইন ১৯৬৬ মোতাবেক বোর্ডের এখতিয়ার। নগরবাসীকে সুষ্ঠু, টেকসই ও উন্নত গ্রাহক সেবা দেওয়ার স্বার্থে ঢাকা ওয়াসা প্রতি বছরই এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে থাকে। ঢাকা ওয়াসা বর্তমানে ভর্তুকি দিয়ে নগরবাসীকে সেবা দিয়ে আসছে এবং প্রস্তাবিত সমন্বয়ের পরও সেটা অব্যাহত থাকবে।

জানা যায়, সোমবার (২৪ মে) ওয়াসার বোর্ড সভায় আবাসিক ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট (১ হাজার লিটার) পানির দাম ৫ শতাংশ হারে বাড়িয়েছে ঢাকা ওয়াসা, যা কার্যকর হবে আগামী ১ জুলাই থেকে। এ সভায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনলাইনে অংশ নেন সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান।

ওয়াসা সূত্র জানিয়েছে, দাম বাড়ানোর পর আবাসিক গ্রাহকদের প্রতি ১ হাজার লিটার পানির দাম দাঁড়াবে ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। বর্তমানে ১ হাজার লিটার পানির দাম ১৪ টাকা ৪৬ পয়সা করে দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে নতুন দাম কার্যকর হলে বাণিজ্যিক সংযোগের ক্ষেত্রে প্রতি এক হাজার লিটার পানির দাম দিতে হবে ৪২ টাকা। যা আগে দিতে হতো ৪০ টাকা।

করোনার শুরুর দিকে গত বছরের এপ্রিলেও এক দফা পানির দাম বাড়িয়েছিল ঢাকা ওয়াসা। সে সময় প্রতি ইউনিটে দাম বাড়ানো হয়েছিল ২ টাকা ৮৯ পয়সা। এরই ধারাবাহিকতায় করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে ফের পানির দাম বাড়ালো ওয়াসা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২২ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২১
এমএমআই/এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।