সিলেট: ভরাট হয়ে গেছে সুরমা নদীর উৎসমুখ। জকিগঞ্জের আমলশীদ সীমান্ত এলাকায় বালিরচরে বন্ধ হয়ে গেছে সম্পূর্ণ পানি প্রবাহ।
পানি প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী ও এক সময়ের প্রমত্তা সুরমায় জেগেছে অর্ধশতাধিক চর। সংকুচিত হয়ে আসছে কুশিয়ারা নদীও।
বালির বাঁধের কারণে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে মৃত অবস্থায় সুরমা পড়ে থাকার বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্র্তৃপক্ষ।
সিলেট শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে আমলশীদ সীমান্ত। ভারতের আসাম থেকে বরাক ডানদিকে ইংরেজি বর্ণ ইউ এর মতো বাঁক নিয়ে নাম ধরেছে সুরমা। সোজা পশ্চিমদিকে চলে যাওয়া প্রবাহটি কুশিয়ারা। সুরমা নদী সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মেঘনায় মিশেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, বরাক-সুরমা-কুশিয়ারার তিন নদীর মোহনায় এখন বিশাল বালির বাঁধ পড়েছে। সরু খালের মতো জায়গা দিয়ে কিছুটা পানি পাচ্ছে কুশিয়ারা আর বালিরবাঁধ একেবারে বন্ধ করে দিয়েছে সুরমার পানি প্রবাহ।
তিন নদীর মোহনার কাছাকাছি বাড়ি ষাটোর্ধ্ব আব্দুস সালামের। তিনি জানালেন তার জীবদ্দশায় এই প্রথম বালির বাঁধে সুরমার পানি প্রবাহ বন্ধ হওয়ার দৃশ্য দেখলেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বরাক নদী দিয়ে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পলিমাটি ও ক্রমাগত নদী ভাংগনের ফলে এ অবস্থার সৃষ্ঠি হয়েছে।
ফলে বরাকের পানি বালির বাঁধ টপকে সুরমায় মিশতে না পেরে ইউ অংশের মধ্যে আটকে আছে। যে কারণে জকিগঞ্জের আমলশীদ থেকে কানাইঘাট উপজেলার লোভাছড়া পর্যন্ত সুরমা নদীর ৩২ কিলোমিটার এলাকায় ৩২টিরও বেশি চর জেগেছে।
ওইসব স্থানে নৌকা ছাড়াই হেঁটে পার হচ্ছে লোকজন। একদিকে নদী ভাঙ্গন অন্যদিকে জেগে ওঠা চর নিয়ে দুশ্চিন্তায় দুই তীরের হাজারো মানুষ। তাদের জীবন ও জীবিকার অন্যতম উৎস নদী। নৌপথ বন্ধ হয়ে পড়ায় বিড়ম্বনার শিকার তারা।
জানা গেছে, ভারত বরাকের বিভিন্নস্থানে কয়েকটি ছোট বাঁধের মাধ্যমে পানি প্রবাহে বিঘœ সৃষ্টি করার ফলে এমনটি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা আশংকা প্রকাশ করে বলছেন- এ অবস্থা চলতে থাকালে অদূর ভবিষ্যতে সুরমা কুশিয়ারার বিস্তৃত এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হতে পারে। পানির তীব্র সংকটে এ অঞ্চলে বড় ধরণের বিপর্যয়ও নেমে আসতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, উজানে পানি প্রত্যাহারের ফলে বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত সুরমা নদীর পানি প্রবাহ গত এক যুগে শতকরা ৮৫ ভাগ হ্রাস পেয়েছে।
জানা যায়, ২০০৬ সালে ৬ অক্টোবর জকিগঞ্জে ভারত বাংলাদেশের যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) মতামতের ভিত্তিতে সীমান্তবর্তী সুরমা কুশিয়ারা নদীর সার্ভে ও মডেল স্ট্যাডির ড্রেজিং করার সিন্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপশি বরাকের ভারত অংশে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করার কথা ছিল।
এরই অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে কুশিয়ারা নদীতে পাইলট প্রকল্পের ড্রেজিং কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু সুরমা নদীতে এখনও খনন কাজ শুরু হয়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সুরমা নদীতে এখন ড্রেজিং করা ছাড়া উপায় নেই। এ বিষয়ে জয়েন্ট রিভার কমিশনে বেশ কিছু বৈঠক হলেও কার্যকরী উদ্যোগ পিছিয়ে পড়েছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডর নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, বালির বাঁধ অপসারণ ও ড্রেজিং এর প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১২