ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

উবারে আবারও হয়রানির শিকার নারী যাত্রী

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫১ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২১
উবারে আবারও হয়রানির শিকার নারী যাত্রী

ঢাকা: বহুজাতিক রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম উবারে আবারও হয়রানির শিকার হয়েছেন এক নারী যাত্রী। রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে মিরপুর যাওয়ার পথে উবারের প্রাইভেটকার চালকের অশালীন আচরণের শিকার হয়েছেন ওই নারী যাত্রী।

 

পুলিশ বলছে, দ্রুত সময়ের মধ্যেই ওই গাড়ি চালককে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

জানা যায়, ওই নারী যাত্রী গত ১২ মে ধানমন্ডির সেন্ট্রাল হাসপাতাল থেকে মিরপুর-২ নম্বর শপিং কমপ্লেক্সে আসার জন্য উবারে একটি রাইড শেয়ারিং বুক করেন। তখন রাশেদুল ইসলাম নামে একজন গাড়ি চালক তার টয়োটা করোলা এক্সিও মডেলের গাড়ি নিয়ে ওই নারী যাত্রীকে নিজ গাড়িতে তোলেন।

যাত্রার এক পর্যায়ে গাড়িতে ত্রুটির কথা জানিয়ে সুকৌশলে নারী যাত্রীকে পেছনের আসন থেকে সামনের আসনে নিয়ে আসেন ওই চালক। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগী ওই নারী বাংলানিউজকে বলেন, সেন্ট্রাল হাসপাতাল থেকে কিছুদূর আসার পর চালক গাড়ি থেকে নেমে পেছনে গিয়ে গাড়ি ঝাঁকাতে থাকেন। আমাকে উনি বলেন যে, গাড়ির  বাংকার এ সমস্যা আছে, আমি যেন সামনের আসনে গিয়ে বসি। তারপর তিনি বিভিন্ন ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করছিল তার শরীর ভালো লাগছে না। ব্যাপারটা এরকম যে তিনি মাথা ঘুরে আমার ওপর পড়ে যাবে। তিনি ড্রাইভ করতে করতেই প্রথমে আমার পায়ের ওপর একবার হাত রাখেন। তার ভাবটা এমন যে এটা ভুল করে হয়েছে। আমি বললাম ভাই সাবধানে ড্রাইভ করেন। আর আপনার শরীর খারাপ লাগলে আমাকে ড্রপ করে দেন। আমিও সাহস করতে পারছিলাম না নামার জন্য। তখন চন্দ্রিমা উদ্যান ক্রস করছিলাম। রাস্তা অনেক সুনসান ছিল।

ওই নারী যাত্রী আরও বলেন, আমি ভেবেছিলাম এটা যেহেতু উবার তাই সে সম্ভবত এত সাহস পাবে না। তার একটু হলেও ভয় থাকবে। আর আমি নেমে গেলেই বরং তিনি যদি কিছু করতে চায় সেটা করতে পারবে। কিন্তু পরে তিনি আমার পায়ের ওপর আরও ২/৩ বার হাত রেখেছেন। তখন শয়তানটাকে রেগে গিয়েই গাড়ি থামাতে বলেছিলাম। তারপর তিনি আমার হাত ধরে বলে আমাকে আপনি খারাপ মনে করছেন কেন। আসলে আমি সিচুয়েশনটা বুঝাতে পারবো না। বাইচান্স তিনি জানালা লক করতে ভুলে গিয়েছিলেন। আমি জানালা দ্রুত খুলে দিয়ে হাত বের করে রেখেছিলাম।  আর আমার সিট বেল্ট বা গাড়ির দরজা তিনি কোনভাবেই খুলছিল না। পরে কোনোভাবে তিনি আমাকে নামিয়ে দেন পশ্চিম শেওড়াপাড়ার দিকে।

এ ঘটনার পরপরই মিরপুর মডেল থানায় উপস্থিত হয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন ওই নারী যাত্রী। সেখানে তিনি চালকের বিরুদ্ধে অশালীন ও অমার্জিত আচরণ এবং কু-প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ করেন উবার চালকের বিরুদ্ধে।

জিডির অগ্রগতি জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) সাইফুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, জিডিটা আমার কাছে আসার পর থেকেই এটা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমরা সেই চালককে ট্র্যাক করতে পেরেছি। আজ (সোমবার) বিকেলের মধ্যেই সেই গাড়ির মালিক চালককে নিয়ে আমাদের থানায় আসবেন বলে জানিয়েছেন। আসলে ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযোগকারী যদি মামলা দায়ের করতে চান, তাহলে প্রচলিত আইনে মামলা রুজু করা হবে।

রাইড শেয়ারিং এর মতো এমন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করার সময় অনাকাঙ্ক্ষিত মুহুর্তে জাতীয় জরুরিসেবা কেন্দ্র ৯৯৯ এ কল করার পরামর্শ দেন এসআই সাইফুল। একই সঙ্গে রাইডে ওঠার আগে ফেসবুক বা অন্য কোনো মাধ্যমে পরিচিত জনদের কাছে নিরাপত্তার জন্য নিজের অবস্থান ও রাইডের বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করার তাগিদও দেন তিনি।

এসব বিষয়ে উবারের বক্তব্য জানতে চাইলে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে।  

জানা যায়, গ্রাহকেরা নিজেদের সমস্যা জানানোর জন্য সরাসরি উবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন না। অ্যাপের মাধ্যমেই সমস্যা লিখে জানানো ছাড়া সরাসরি তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগের কোনো সুযোগ নেই প্ল্যাটফর্মটিতে। আর এর সুযোগে কোনো কোনো চালক যাত্রীদের নানাভাবে হয়রানি করে থাকেন। অ্যাপের মাধ্যমে জানানো অভিযোগ নিয়েও কার্যত কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে উবারের বিরুদ্ধে।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর উবারের গাড়িতে সংঘটিত গড়ে ২০টি ধর্ষণের অভিযোগ আসে। আর ২০১৭ ও ২০১৮ সালে মোট দুই বছরে ছয় হাজারের বেশি যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে উবারের গাড়িতে। ২০১৭ সালে ঢাকায় এক নারী যাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন। সম্প্রতি পল্লবী থেকে ভাসানটেক যাওয়ার পথে ওই যাত্রীর সঙ্গে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে যাত্রীর প্রাণনাশের হুমকি দেন এক উবার চালক।

উবারের বক্তব্য
জিডির বরাতে উবারে যাত্রী হয়রানির বিষয়ে উবার কর্তৃপক্ষের মন্তব্য চাইতে বাংলানিউজের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। একইদিন রাতে বাংলাদেশে উবারের জনসংযোগ এজেন্সি ই-মেইলের মাধ্যমে উবারের পক্ষে একটি লিখিত বক্তব্য পাঠায়। সেখানে কোনো কর্মকর্তার নাম উল্লেখ না থাকলেও উবার মুখপাত্রের বরাতে লেখা হয়, ‘‘যা (ঘটনা) বর্ণনা করা হয়েছে সেটি খুবই হতাশাজনক এবং এমন কিছু যার মধ্যে দিয়ে কখনোই কেউ যেতে চাইবে না। কোনো চালকের দুর্ব্যবহারের জন্য আমাদের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি রয়েছে এবং তাৎক্ষণিকভাবে পরবর্তী তদন্ত হওয়া সাপেক্ষে উবার অ্যাপে প্রবেশে ওই চালকের প্রবেশাধিকার বাতিল করা হয়েছে। আমরা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে তদন্তে সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত আছি”।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২১
এসএইচএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।