ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সাতে হাতেখড়ি, ১০ বছরে হাজার চুরি, চুরির টাকায় দালানবাড়ি

হাজেরা শিউলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১০
সাতে হাতেখড়ি, ১০ বছরে হাজার চুরি, চুরির টাকায় দালানবাড়ি

চট্টগ্রাম: সাত বছর বছর বয়সে চুরিতে হাতেখড়ি। এরপর কেটে গেছে ১০ বছর।

এ সময়ে সহস্রাধিক চুরির অভিজ্ঞতা হয়েছে তার। চলতি বছরেই ৭০টির বেশি চুরি করেছেন। ছিঁচকে থেকে বড় ধরনের চুরি পর্যন্ত সব ধরনের অভিজ্ঞতাই ঝোলায় রয়েছে তার ।

 

বাসাবাড়ি, রাস্তা-ঘাট, দোকান-পাট, অফিস-আদালত সর্বত্রই তার চুরির অভিজ্ঞতা।

এভাবেই বাংলানিউজের কাছে নিজেকে জাহির করলেন পেশাদার চোরচক্রের নেতা জুয়েল। বয়স মাত্র ১৭।  

এদলের কারো বয়স ২০ ছাড়ায় নি। আর দলনেতা জুয়েলই তাদের সর্বকনিষ্ঠ।

বন্দর নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে পেশাদার চোরচক্রটির ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বাকি পাঁচ সদস্য হলেন- এরশাদ (১৮), নাদিম (১৮), সুজন (১৭) ইমন (১৮)  ও ছোটন (২০)।

  জুয়েলসহ চার জনকে খুলশী থানাধীন বিশ্বকলোনি কাঁচাবাজার  থেকে গ্রেফতার করা হয়। এদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এবং পরে বাকী দুই চোরকে গ্রেফতার  করে পুলিশ। চোরদের কাছ থেকে চারটি মোবাইল সেটসহ একটি ভিসিডি উদ্ধার করা হয়েছে।

দুপুরে খুলশী থানা কার্যালয়ে বাংলানিউজকে নিজের চোর হয়ে ওঠার  কাহিনী খোলামেলাভাবে তুলে ধরেন জুয়েল । তিনি জানান- দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময় তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। প্রথম ধাক্কাতেই ঘরছাড়া হন জুয়েল। প্রথমে টোকাই হওয়ার চেষ্টা, সেখান থেকে চুরির পথে পা বাড়ানো।   ধীরে ধীরে পেশাদার চোরে পরিণত হন তিনি।

গত ১০ বছর ধরে চুরির সময় ধরা পড়ে একাধিকবার গণপিটুনির শিকার হলেও পেশা ছাড়েননি। পুলিশের  হাতে ছয়বার গ্রেপ্তার হয়ে জামিনে ছাড়া পেয়ে আবারো চুরি। চুরি করে আগ্রাবাদ সিডিএ বাদশা মিঞা রোডে পৈত্রিক ভিটায় একতলা বাড়িও করেছেন । তবে তার মূল ঘাঁটি বিশ্বকলনি এলাকা।
 
বাবা জুন্নু  মিঞ্চাও পেশাদার চোর। চুরির দায়ে স্থানীয় লোকজন তার বাবার  হাতের দুই আঙ্গুল কেটে ফেলে  বলেও  স্বীকার করেন জুয়েল।
 
চোর ধরার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া খুলশী থানার এসআই মোহাম্মদ এনাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘জুয়েলসহ চোরদের এই চক্রটি খুবই ভয়ংকর। মোবাইল সেট, লোহার রড, গাড়ির যন্ত্রাংশ, মোটরসাইকেল, টাকা এমন জিনিস নেই যা তারা চুরি করে না। ’

তিনি বলেন, ‘খুবই ছোট জায়গা দিয়ে বাড়িতে ঢুকে চুরি করে  ম্যানহোলে ও পয়ঃনিষ্কাশন লাইনের পাইপ দিয়ে তারা সহজে পালিয়ে যায়। ’

ঈদের দুই দিন আগে চট্টগ্রামের জাতীয় এক দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিকের মোটর সাইকেল চুরির পর সেটির খোঁজ করতে গিয়ে এই চোরদের সন্ধান পাওয়া যায় বলে জানান মোহাম্মদ এনাম।
 
তিনি আরও জানান, একমাস আগে ফিরোজশাহ কলোনির মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনের ৫৫ হাজার টাকা চুরি করে জুয়েল ও তার দল।   এছাড়া বিশ্বকলোনির জনৈক জনি মজুমদারের বাসা থেকে ল্যাপটপ চুরি করে তারা।
 
জুয়েল সাংবাদিক ও পুলিশের  কাছে  জানায়, নীরব নামে এক ব্যক্তি তাদের চুরি করা  মালামাল কেনে। এজন্য  অনেক সময় চুরির আগেও তাদেরকে  টাকা দেয় সে।
 
পুলিশ জানায় একাধিকবার গণপিটুনির শিকার হলেও দেখতে ছোটখাটো গড়নের হওয়ায় মানুষ তাকে পরে ছেড়েও দেয়।

বাংলাদেশ সময় ২০৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।