মাদারীপুর: মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়িতে ফিরছিল রিফাত (১৪)। সকালে ঢাকা থেকে রওনা হয় মাদারীপুরের কালকিনির উদ্দেশে।
বুধবার (১২ মে) দুপুর ১টার দিকে ফেরিতে প্রচণ্ড গরম ও যাত্রীর চাপে নিহত পাঁচ জনের একজন রিফাতের মা।
শিমুলিয়া থেকে বাংলাবাজারের উদ্দেশে কমপক্ষে তিন হাজার যাত্রী নিয়ে ফেরি এনায়েতপুরী যখন মাঝপদ্মা পেরিয়ে বাংলাবাজার ঘাটের পথে ঠিক তখনই একে একে অসুস্থ হতে থাকেন যাত্রীরা। ফেরির ডেকে দাঁড়িয়ে থেকে তীব্র গরম আর অক্সিজেনের অভাবে হাঁসফাঁস করতে থাকেন অনেকে। প্রচণ্ড পিপাসায় পানির অভাবে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন কেউ কেউ। ফেরি ঘাটে ভিড়লে জনস্রোতের সঙ্গে তাল মেলাতে পারেনি অসুস্থ ব্যক্তিরা। মানুষের চাপে প্রাণ হারান ফেরির ডেকেই। ফেরি যখন ঘাটে ভিড়েছে মায়ের সঙ্গে জনস্রোতে পা মেলায় রিফাত। তবে ফেরি থেকে নেমে মাকে কোথাও দেখতে পায় না। ভিড় ঠেলে ফেরিতে গিয়ে মাকে অচেতন পড়ে থাকতে দেখে। ডাকাডাকি করেও রিফাতের মায়ের জ্ঞান আর ফেরেনি।
যাত্রাপথে ফেরিতে তীব্র গরমে হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন মা। ঈদের আগে মাকে এভাবে চিরদিনের জন্য হারিয়ে নির্বাক হয়ে পড়েছে সে। নিহত ওই নারীর নাম নিপা আক্তার (৪৫)। তার বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার বালিতগ্রাম এলাকায়।
নিহত নিপার ছেলে রিফাত হোসেন মায়ের মরদেহের পাশে কান্না করতে করতে জানায়, তার মা ফেরিতে থাকার সময় গরমে কিছুটা অসুস্থ হয়ে পরে। তবে ফেরি যখন ঘাটে ভিড়ে তখন লোকজন হুড়োহুড়ি করে নামতে শুরু করে। এ সময় সেও ব্যাগ হাতে নিয়ে ফেরি থেকে নামতে যান। ফেরিতে থেকে পন্টুনে নামার পর মাকে দেখতে না পেয়ে ভিড়ের মধ্যে খুঁজতে থাকে। লোকজন নেমে গেলে ফেরির ডেকেই মৃত অবস্থায় মাকে পড়ে থাকতে দেখে।
রিফাত হোসেন বলেন, ‘আমার মায় মইরা গেলো। আমার সব কিছু শ্যাষ হইয়া গেলো। ’
বুধবার দুপুরে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাটে ফেরি শাহ্ পরান ও এনায়েতপুরী থেকে নামতে গিয়ে নারীসহ পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় অসুস্থ হয়েছেন কমপক্ষে ৫০ জন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের উদ্ধার করে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পাঁচ্চর রয়েল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩১৭ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২১
আরএ