ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বগুড়ায় ঈদ সামনে রেখে দর্জিপাড়ায় ব্যস্ত শ্রমিকরা

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০০ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২১
বগুড়ায় ঈদ সামনে রেখে দর্জিপাড়ায় ব্যস্ত শ্রমিকরা বগুড়ায় ঈদ সামনে রেখে দর্জিপাড়ায় ব্যস্ত শ্রমিকরা। ছবি: বাংলানিউজ

বগুড়া: ঈদকে সামনে রেখে বগুড়ার দর্জিপাড়ার কারিগররা নতুন পোশাক বানাতে দিন-রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন। কাজের চাপে দর্জিপাড়ার কারিগরদের ঘুম হারাম হয়ে যায়।

সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পোশাক তৈরির কারখানায় চলে ঘুমহীন, বিশ্রামহীন শ্রমিকের কাজ। করোনার প্রকোপে দর্জিপাড়ায় আগের সেই ব্যস্ততা না থাকলেও থেমে নেই কর্মযজ্ঞ।

বগুড়া শহরের একাধিক দর্জি-প্রতিষ্ঠান ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদ ঘনিয়ে আসায় বর্তমানে কিছুটা ব্যস্ত সময় কাটছে তাদের। বছরের এ সময়টায় শ্রমিকদের দম ফেলবার ফুসরত থাকে না। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম ঘটেছে। গত বছরের মতো এবারও করোনা সংক্রমণ রোধে রমজানের শুরু থেকেই সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সারাদেশের মতো বগুড়ার সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গত ১৪ এপ্রিল থেকে বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক দফায় বিধিনিষেধ বাড়িয়ে তা আগামী ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়।  

ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে মানুষের জীবন-জীবিকার কথা চিন্তা করে সরকারের পক্ষ থেকে সারাদেশে বেশ কয়েকটি শর্তে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দোকান-পাট ও মার্কেট খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়। করোনার কারণে এমন পরিস্থিতিতে দর্জিপাড়ায় খুব অল্প পরিসরে অর্ডার নিয়ে কাজে হাত দিয়েছেন শ্রমিকরা। প্রশাসনের বাধা ধরা নির্দিষ্ট সময়ে মধ্যে আর কতটুকু কাজ এগিয়ে নেওয়া যায়। এ কারণেই শহরের দর্জিপাড়ায় আগের সেই সরগম নেই। যেটুকু অর্ডার হাতে নেওয়া হয়েছে সেগুলো শেষ করতে কাজ করে যাচ্ছে তারা।

শহরের একাধিক প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, গেল কয়েকদিন আগেও শ্রমিকদের কাজের চাপ অনেকটা কম ছিল। তবে ঈদ ঘনিয়ে আসায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কারখানাগুলোর কারিগররা সমান তালে হাত-পা চালিয়ে যাচ্ছেন। দর্জিপাড়ার পাশ দিয়েই গেলেই সেটা বোঝা যায়। সেলাই মেশিন আর কাঁচির শব্দ বাতাসে ভেসে বেড়ায় সারাক্ষণ। শব্দই বলে দেয় কারিগররা ঈদের পোশাক তৈরিতে কতোটা ব্যস্ত। এক কথায় বলতে গেলে, মুখরিত এখন বগুড়ায় দর্জিপাড়া।

পছন্দের এসব পোশাক চাঁদ রাতের আগেই ক্রেতা সাধারণকে ডেলিভারির স্লিপ বুঝিয়ে দিতে হবে। নইলে মালিকের বকুনি আর ক্রেতার ধমকানিতে মাটি হয়ে যাবে তাদের ঈদ।

মো. ছামসুল হক, তোতা মিয়া, হান্নান শেখসহ একাধিক কারিগর বাংলানিউজকে জানান, করোনা সংক্রমণ রোধে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ২০ রমজানের পর থেকে কিছুটা কাজের চাপ চলছে। গত বছরের ঈদে তেমন কাজ ছিল না। কাজের যেটুকু অর্ডার পেয়েছে তা শেষ করতেই তারা এখন ব্যস্ত।

তারা জানান, শুধু কাজ শেষ করলেই হবে না। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের সুনাম রয়েছে। সে অনুযায়ী ক্রেতার পছন্দের পোশাক তৈরি করতে হবে। মান ও সুনাম বজায় রাখতে হবে।

তারা আরও জানান, প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব স্বকীয়তা ও মান বজায় রেখে কারিগররা পোশাক বানিয়ে থাকেন। সবাই চেষ্টা করেন সেরা মানের পোশাক তৈরি করতে। যেন ক্রেতা সাধারণ পরবর্তী সময়েও পোশাক বানাতে তাদের প্রতিষ্ঠানেই আসেন।

টেইলার্স মালিক ফজলা শেখ বাংলানিউজকে বলেন, প্রত্যেক বছর রমজান মাস শুরু হওয়ার আগেই কারিগররা মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে নামেন। এর ফলে ঈদের আগে তারা সঠিক সময়ে পোশাক ডেলিভারি দিতে পারেন না বা দিতে হিমশিম খান। এ কারণে ১০ বা ১৫ রমজান থেকেই তারা অর্ডার নেওয়া বন্ধ রাখতে বাধ্য হন। কিন্তু গত বছরের মতো এবারও করোনার জন্য সৃষ্ট পরিস্থিতি ভিন্ন রূপ নিয়েছে। করোনার ভায়াবহ প্রভাব পড়েছে টেইলার্স শিল্পে। এতে কাজ কম থাকায় শ্রমিকদেরও নেই আন্দোলন।

তিনি জানান, গত বছর লকডাউনের জন্য কাজ ছিল না বললেই চলে। তবে এ বছর ঈদকে সামনে রেখে বর্তমানে কিছুটা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শ্রমিকরা। বর্তমানে গড়ে দিনে শার্ট ও প্যান্ট মিলে বড় জোর ৬০ থেকে ৭০ পিস অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে। অথচ গত বছরের আগে এর তিনগুণ পর্যন্ত পোশাক তৈরির অর্ডার পাওয়া গেছে।

শহরের কোরিয়ান টেইলার্সের ব্যবস্থাপক মো. আব্দুস সামাদ জানান, প্রত্যেক বছর রমজান মাস শুরু হওয়ার আগেই কারিগররা কাজে ব্যস্ত সময় কাটাতো। ১৫ রমজানের মধ্যে পোশাক তৈরি কাজের অর্ডারের পর্ব বন্ধ হয়ে যেতো। কেন না এর পরে অর্ডার নিলে তা সঠিক সময়ে ডেলিভারি দিতে পারেন না তারা।

এদিকে রমজানের শুরু থেকে শহরের মার্কেট ও দোকানপাট বন্ধ থাকায় টেইলার্সও বন্ধ ছিল। আর তাই এবার ঈদে ক্রেতারা রেডিমেট পোশাক কেনার দিকে বেশি ঝুঁকেছেন বলেও যোগ করেন ব্যবস্থাপক সামাদ।

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২১
আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ