ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আমি কারও কাছে যাবো না, নানা-নানির কাছে থাকবো: মীম

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২১ ঘণ্টা, মে ৬, ২০২১
আমি কারও কাছে যাবো না, নানা-নানির কাছে থাকবো: মীম

খুলনা: আমি কোথাও যাবো না। আমি নানা-নানির কাছে থাকব।

এখানেই পড়াশুনা করবো। পদ্মায় স্পিডবোট দুর্ঘটনায় একইসঙ্গে বাবা, মা ও দুই বোন হারানো খুলনার তেরখাদা উপজেলার অবুধ শিশু মীম মলিন মুখে এ কথা গুলো বলে।  

বৃহস্পতিবার (৬ মে) দুপুরে তেরখাদা উপজেলার পানতিতা গ্রামে নানা বাড়িতে অবস্থানরত মীম বাংলানিউজকে এসব কথা বলে। মীমের নানা আব্দুস সবুর মিনা পেশায় একজন কৃষক।

মাদারীপুর জেলার শিবচর নামক একটি স্থানে বালুবাহী বাল্কহেডের সঙ্গে স্পিডবোটের সংঘর্ষে খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলার পারখালী গ্রামের একই পরিবারের চারজন নিহত হলেও অলৌকিকভাবে বেঁচে যায় ৯ বছর বয়সের শিশু মীম। দুর্ঘটনায় পিতা মনির হোসেন, মাতা হেনা বেগম ও মীমের ছোট দুটি বোন সুমি ও রুমি মারা যায়। অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া মীম পদ্মায় তীরে এসে ওঠে। এ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ২৬ জন। অল্পের জন্যে প্রাণে বেঁচে যান ৫ জন। তার মধ্যে একজন মীম।

একসঙ্গে বাবা, মা আর দুই বোনকে হারানোর পর থেকে নানির কোলই যেন হয়ে উঠেছে মীমের একমাত্র ভরসাস্থল। এদিকে এ ঘটনার পর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আহসান হাবিব ভূঁইয়াসহ বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে অনেকেই মীমের সব দায়িত্ব নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। অনেকে দিয়েছেন আর্থিক সহায়তা।

কারও কাছে মীমকে দেবেন কিনা এমন প্রশ্নে মীমের নানা আব্দুস সবুর মিনা বাংলানিউজকে বলেন, আমারতো সব হারায়ে গেছে। ও শুধু একমাত্র আছে। ওকে আমার কাছে রাখার ইচ্ছা। বাকিটা আল্লাহ ভরসা। ওকে কাউকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি। সেই মনমানসিকতাও নেই। মীমকে নিয়ে জীবনের বাকি সময়টা পার করে দিতে চাই। ওই এখন আমাদের সবাই বেঁচে থাকার অবলম্বন। তবে ওকে কেউ সহযোগিতা করতে চাইলে করতে পারবে।

মীমের কান্নাকাটি কি কমেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগের চেয়ে একটু কমেছে। বর্তমানে আমার স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে মীমের সময় কাটছে। আমাদের ঘরের সঙ্গে একটি মাদ্রাসা আছে সেখানে মীম লেখাপড়া করবে।

একসঙ্গে পরিবারের চার সদস্যকে হারিয়ে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে মীমের দাদা ও নানার পরিবার। মীমের চাচারা বলেন, নানার বাড়ি থাকলেও চাচাদের পক্ষ থেকে সার্বিক দেখাশুনা করা হবে।
মঙ্গলবার (৪ মে) বাবা, মা ও দুই বোনের মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে নিহত মনিরের মায়ের পাশে সারিবদ্ধ করে দাফন হয় দাদা বাড়ি উপজেলার পারোখালি গ্রামে। এরপর নানা-নানীর সঙ্গে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করলে ওই দিন বিকেলে পানতিতা গ্রামে চলে যায় মীম।

স্থানীয় প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, মীম যার কাছে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করবে তার কাছেই থাকবে। তাকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।

তেরখাদা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মীমের জন্য ১ লাখ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া মীমের বিয়ের আগ পর্যন্ত আমরা তার ভরণপোষণ দেবো বলে এলাকাবাসীর কাছে ওয়াদা দিয়েছি।

এদিকে বৃহস্পতিবার (৬ মে) সকাল ১০টায় পরিবার হারা মীমের নানা বাড়ি উপজেলার পানতিতা এলাকায় গিয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে আর্থিক অনুদান প্রদান করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবিদা সুলতানা। পরিবার হারা মীমের হাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নগদ ১০ হাজার টাকা তুলে দেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সদয় নির্দেশনায় মীমের খোঁজ খবর নিয়েছি এবং পরবর্তীতে সব ধরনের সহযোগিতার জন্য জেলা প্রশাসক নির্দেশনা রয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুস্মিতা সাহাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।

ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন মনির শিকদার। তিন মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন মিরপুরে। রোববার রাত ৮টায় খুলনার তেরখাদার বাড়িতে মারা যান মনির শিকদারের মা। মায়ের মরদেহ দেখতে পরিবারের সবাইকে নিয়েই খুলনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন তিনি। সোমবার মাদারীপুরের শিবচরে পুরাতন কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট এলাকায় পদ্মায় স্পিডবোটের সঙ্গে বালুভর্তি বাল্কহেডের সংঘর্ষে নিহত হন তেরখাদার পারোখালী এলাকার মনির শিকদার, তার স্ত্রী হেনা বেগম, শিশু কন্যা সুমি ও রুমি খাতুন। ৫ সদস্যের পরিবারটির একমাত্র সন্তান হিসেবে জীবিত আছে বড় মেয়ে ৯ বছরের মীম।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০২১
এমআরএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।