ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বিয়ের চাপ দেওয়ায় খুন হন নার্স ননিকা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২১
বিয়ের চাপ দেওয়ায় খুন হন নার্স ননিকা

রাজশাহী: রাজশাহীতে ড্রামের ভেতর থেকে উদ্ধার করা তরুণীর পরিচয় মিলেছে। তার নাম ননিকা রাণী রায় (২২)।

পেশায় তিনি একজন নার্স। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মিলনপুর গড়েয়া গ্রামে। তার বাবার নাম নিপেন চন্দ্র বর্মণ। তিনি রাজশাহী নার্সিং ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা করেছেন। আর এ তরুণীকে হত্যায় জড়িত পুলিশের এক কনস্টেবল। ঘটনার পর মাত্র তিনদিনেই পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। রাজশাহী পিবিআই অভিযুক্ত কনস্টেবলসহ চারজনকে গ্রেফতারও করেছে।

সোমবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে পিবিআইয়ের রাজশাহী কার্যালয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আযাদ এ ব্যাপারে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রেস ব্রিফিং করেন। তার কার্যালয়ে হত্যার রহস্য উন্মোচন করেন এবং গ্রেফতারদের ব্যাপারে বিস্তারিত জানান।

গ্রেফতার চারজনের মধ্যে মূলহোতা পুলিশ কনস্টেবলের নাম নিমাই চন্দ্র সরকার (৪৩) ওরফে শুভ সরকার। তিনি পাবনার আতাইকুলা উপজেলার চরাডাঙ্গা গ্রামের মৃত হেমান্ত সরকারের ছেলে। নিমাই রাজশাহীতে রেলওয়ে পুলিশে কর্মরত ছিলেন। অন্যরা হলেন- মহানগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার আদারীপাড়া মহল্লার জয়নাল আবেদীনের ছেলে কবির আহম্মেদ (৩০), রাজপাড়া থানার বিলশিমলা এলাকার সতীশ রায়ের ছেলে আবদুর রহমান (২৫) ও শ্রীরামপুর টি-বাঁধ এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে সুমন আলী (৩৪)।  আবদুর রহমান মাইক্রোবাসচালক। তিনি আগে হিন্দু ছিলেন। তখন তার নাম ছিল সঞ্জয় রায়।

ঘটনার রহস্য উন্মোচনে পিবিআই: পিবিআইয়ের রাজশাহী কার্যালয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আযাদ বলেন- নিহত ওই নার্স অবিবাহিত ছিলেন। কিন্তু ওই পুলিশ কনস্টেবল নিমাই বিবাহিত ছিলেন। কিন্তু এবিষয়টি অজানাই ছিল প্রেমিকা নার্সের। অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবলের সঙ্গে তার সাত-আট বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পরে তা শারীরিক সম্পর্কেও গড়ায়। গত ৬ এপ্রিল মহানগরীর তেরোখাদিয়া এলাকায় স্বামী ও স্ত্রী পরিচয়ে একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন নিমাই ও ননিকা। তারা লিভ টুগেদার করছিলেন। এক পর্যায়ে বিয়ের জন্য তাকে চাপ দেন ননিকা। আর এজন্যই নিমাই তাকে হত্যা করেন বলে জানান- পিবিআই’র এ কর্মকর্তা।

পিবিআই কর্মকর্তা আবুল কালাম আযাদ বলেন, আসামিরা প্রাথমিকভাবে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দেবেন। মাত্র তিনদিনেই এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন সম্ভব হয়েছে। তাই শিগগিরই আদালতে এ মামলার চার্জশিট দাখিল করা হবে বলেও জানান তিনি।

যেভাবে হত্যা ও মরদেহ গুম করা হয়: নিমাইয়ের স্ত্রীর নাম বুলবুলি রাণী দাস। তিনি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত। স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না থাকায় এক সন্তানকে নিয়ে তিনি আলাদা থাকেন। এ সুযোগে বাসা ভাড়া নিয়ে লিভ টুগেদার করছিলেন নিমাই। পরে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ায় ননিকাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। হত্যার সময় নিমাইয়ের বন্ধু কবির আহম্মেদ ও সুমন আলী ননিকার হাত-পা চেঁপে ধরেছিলেন। আর নিমাই গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরে বাজার থেকে একটি ড্রাম কিনে আনা হয়। সেই ড্রামে মরদেহ ঢুকিয়ে মাইক্রোবাসে করে ফেলে আসা হয়।

নিহত ননিকার পরিচয়: ননিকার গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার মিলনপুর গড়েয়া গ্রামে। তার বাবার নাম নিপেন চন্দ্র বর্মণ। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের নার্সিং ইনস্টিটিউট থেকে সদ্যই নার্সিং পাস করেছেন ননিকা। চাকরি নিয়েছিলেন- মহানগরীর একটি বেসরকারি ক্লিনিকে। একটি মহানগরীর পাঠানপাড়া এলাকার একটি ছাত্রীনিবাসে থাকতেন। কিছুদিন আগে সরকারি চাকরির জন্য পরীক্ষাও দেন। মৌখিক পরীক্ষার জন্য তিনি অপেক্ষা করছিলেন।

পুলিশ কনস্টেবল নিমাইয়ের পরিচয়: এক সময় রাজশাহী মহানগরে কর্মরত ছিলেন কনস্টেবল নিমাই। মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) ছিলেন। এ সময় ডিবি কার্যালয় এলাকার এক কলেজছাত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তার নগ্ন ভিডিও ধারণ করেন। ভিডিওটি কম্পিউটারের দোকান থেকে ছড়িয়ে পড়ে। তখন তাকে বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তীতে নানা কৌশলে চাকরি ফিরে পেয়ে রেল পুলিশে যোগ দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২১
এসএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।