ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দূরপাল্লার বাস বন্ধ, তবুও বাড়ি ফেরার হিড়িক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২১
দূরপাল্লার বাস বন্ধ, তবুও  বাড়ি ফেরার হিড়িক দূরপাল্লার বাস বন্ধ, তবুও বাড়ি ফেরার হিড়িক। ছবি: রাজিন চৌধুরী

ঢাকা: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া সারাদেশে সপ্তাহব্যাপী লকডাউন চলছে। সরকার ঘোষিত এই লকডাউনের আজ শেষ দিন।

গত ৫ এপ্রিল থেকে এই লকডাউন শুরু হয়েছিলো।

সপ্তাহব্যাপী এই লকডাউনে রাজধানীতে সীমিত আকারে সরকারি-বেসরকারি অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকতে দেখা গেছে। সেই সঙ্গে সড়কে গণপরিবহনসহ সবধরণের যানবাহনই চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে দূরপাল্লার সকল বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

সরকারের সপ্তাহব্যাপী এই লকডাউন অনেকটাই ঢিলেঢালাভাবে পালন করেছে দেশের জনমানুষ। এতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমেনি। জনস্বার্থ বিবেচনা করে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে সারাদেশে আবারও সপ্তাহব্যাপী লকডাউনে যাওয়ার কথা রয়েছে। আসন্ন এই লকডাউনটি কঠোরভাবে কার্যকর করার বিষয়ে ভাবছে সরকার।

এদিকে, সপ্তাহব্যাপী লকডাউনে ঢাকাসহ দেশের সকল সিটি করপোরেশন এলাকার গণপরিবহনসহ সব ধরণের যানবাহনের চলাচল করেছে। তবে দূরপাল্লার সব পরিবহন লকডাউনে বন্ধ রাখা হয়েছে।

রোববার (১১ এপ্রিল) রাজধানীর মহাখালি ও গাবতলী এলাকায় দূরপাল্লার সব পরিবহন বন্ধ ছিলো। প্রতিটি কাউন্টারের গেটেও ঝুলতে দেখা গেছে তালা। তবে পরিবহনগুলোর চালক হেলপার ও সুপারভাইজাররা বাসের সঙ্গে টার্মিনালেই অবস্থান করছেন। এদিকে কঠোর লকডাউনের খবর শুনে অনেকেই ঢাকা ছেড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। তারা ব্যাগ নিয়ে বাস কাউন্টারে এসে দাঁড়াচ্ছেন। তবে কোনো প্রকার দুরপাল্লার পরিবহন চলছে না বলে কেউ খোলা ট্রাকে আবার কেউ ব্যক্তিগতভাবে প্রাইভেটকার ভাড়া করে বাড়ির পথে রওয়ানা হতে শুরু করেছেন।

গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনালের সব কাউন্টার বন্ধ থাকায় সেখানে যাত্রীদের কোনো ভিড় নেই। তবে টার্মিনালের বাইরে সড়কে যাত্রীদের কিছুটা ভিড় দেখা গেছে। বাড়ি যাওযার এই সব যাত্রীদের বেশিভাগই নিম্ন আয়ের মানুষ। তারা রাজধানীতে হকারি, ফল বিক্রেতা, লেবারসহ বিভিন্ন দিনমজুরের কাজ করতেন। করোনায় রাজধানীর সব বন্ধ থাকালে তাদের কাজও বন্ধ থাকবে। এই জন্য তারা বাড়ি ফিরতে চাইছেন।

জোবায়ের আহমেদ একজন হকার। পাড়ামহল্লায় ঘুরে প্লাস্টিকের দ্রব্যাদি বিক্রি কবরেন। রোববার সকাল থেকে গাবতলী বাস টার্মিনালের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। সঙ্গে তার পরিবারের আরও তিন সদস্য রয়েছেন। তারা যাবেন পাবনায়। তবে দূরপাল্লার কোনো পরিবহনের চলাচল না থাকায় অনেকটা বিপাকে পড়েছেন জোবায়ের ও তার পরিবার।  

জোবায়ের বাংলানিউজকে বলেন, ১৪ এপ্রিল থেকে যদি লকডাউন শুরু হয়। তবে সব কিছুই বন্ধ থাকবে। ঢাকায় থেকে কোনো কাজও করতে পারবো না। তাই পরিবার নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। সেখানে অনেকটা নিরাপদে থাকতে পারবো।

তিনি আরও বলেন, এখানে কোন দূরপাল্লার বাস চলে না। সিটি থেকে যেসব বাস যায় সেগুলো ভাড়াও চায় অনেক বেশি। গাবতলী থেকে ফেরিঘাটে যেতে জনপ্রতি ভাড়া চাচ্ছে ৪০০ টাকা। সেখান থেকে আবার বাসে করে যেতে হবে। এদিকে ফেরিঘাট পর্জন্ত প্রাইভেট কারও যাচ্ছে। তবে তাদের তিন হাজার টাকা ভাড়া। এত টাকা ভাড়া দিয়ে কীভাবে যাবো। অনেকেই শেয়ারে প্রাইভেটকার ভাড়া করে ফেরিঘাট পর্যন্ত যাচ্ছেন।

এদিকে মহাখালী বাস টার্মিনালে দেখা গেছে ঠিক একই চিত্র। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় অনেকেই সিএনজি বা সিটি বাসে করে যাচ্ছেন আব্দুল্লাহপুর। সেখান থেকে বাসে করে ভেঙে ভেঙে যাচ্ছেন গ্রামের বাড়ি।

রুবেল নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ। লকডাউনে সব বন্ধ থাকলে তার কাজও বন্ধ থাকবে। তাই রুবেল বাড়ি চলে যাবেন। তার সঙ্গে রয়েছে আরও তিনজন। মহাখালী বাস টার্মিনালে এসে বাস না পেয়ে একটি সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করছিলেন।

রুবেল বাংলানিউজকে বলেন, বাস বন্ধ থাকলেই কি, এখন আমাদের বাড়ি যেতেই হবে। ময়মনসিংহ যাবো ভেঙে ভেঙেই যেতে হবে। এখান থেকে আব্দুল্লাহপুর যাবো। সেখান থেকে বাসে গাজীপুর তারপর আবার অন্য বাসে করে ময়মনসিংহ যাওয়া যাবে। আর কোনো ট্রাক পাইলে চলে যাবো। বাড়ি আমাদের যেতেই হবে।

এদিকে মহাখালী বাস ট্রার্মিনালে গত এক সপ্তাহ ধরে বসস্ত বাস বন্ধ রয়েছে। বাসের চালক হেলপার ও সুপারভাইজাররা টার্মিনালের ভেতরেই বাসের আনুসাংঙ্গিক মেরামত কাজ করছেন। কেউ টার্মিনালের ভেতরে আড্ডায় মেতে উঠেছেন। সবার একটাই প্রশ্ন- কবে থেকে চালু হবে বাস।

মহাখালী বাস টার্মিনালে থাকা শ্রমিকদের খাওয়া দাওয়ার জন্য ব্যবস্থা করেছেন মহাখালী টার্মিনালের শ্রমিক ইউনিয়ন।

এ বিষয়ে মহাখালী বাস টার্মিনাল শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. মানিক মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, এখানে প্রতিদিনই প্রায় ৭-৮শ শ্রমিকের জন্য রান্না করা হচ্ছে। আমরা তাদের জন্য খিচুড়ি রান্না করছি। তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে করা হয়েছে।

এখন পর্যন্ত সব বাস বন্ধ রয়েছে। আমরা এখন সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি। বাস চলাচলের সিদ্ধান্ত হলে আমরা কিছুটা স্বস্তি পাবো। নয়তো শ্রমিকরা কি খাবে?

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২১
এসজেএ/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।