ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘ছেলে সারারাত কান্দে, কষ্ট পাচ্ছে জেনেও টাকার সঙ্গে পাইরে উঠতিছিনে’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২১
‘ছেলে সারারাত কান্দে, কষ্ট পাচ্ছে জেনেও টাকার সঙ্গে পাইরে উঠতিছিনে’

পাবনা: পাবনায় জোড়া মাথা ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশু রাবেয়া রোকেয়ার কথা আমাদের সকলের জানা। প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি ও সরকারি পৃষ্টপোষকতায় চিকিৎসার পরে বর্তমানে তারা দুইজনই স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেয়েছে।

এদিকে, একই উপজেলার শারীরিক নানা জটিলতা নিয়ে জন্ম নিয়েছে মিজানুর রহমান নামে ৬ মাস বয়সী আরো একটি শিশু। দরিদ্র পরিবারের জন্ম নেওয়া এই শিশুটি উন্নত চিকিৎসার অভাবে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কোনো রকমে বেঁচে থাকলেও স্বল্প সময়ের মধ্যে উন্নত চিকিৎসাসহ অপারেশন করানোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত গ্রাম ইদুলপুর। পাবনা চাটমোহর উপজেলার ফৈলজানা উইনিয়নের শেষ প্রান্ত। ভ্যানচালক দিনমুজুর রফিকুল ইসলাম ও মা গৃহিনী খুশিয়ারা খাতুনের ঘরে জন্ম নেয় শিশু মিজানুর রহমান।

পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া এক টুকরো জমিতে টিনের ঘর তুলে কোনো রকমে বসবাস করছেন তারা। দুটি মেয়ে সন্তানের পর তার ঘরে জন্ম নিয়েছে একটি ছেলে সন্তান। বয়স তার এখন ৬ মাস চলছে। অসহায় দরিদ্র পরিবারের জন্ম নেওয়া শিশুটির এই চিকিৎসা ব্যয় বহন করা খুব কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। নিজেদের মতো করে চেষ্টা করছে সন্তানকে বাঁচানোর জন্য।  

স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে সাহায্য তুলে পাবনা, রাজশাহী ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে প্রাথমিক চিকিৎসা দিলেও তেমন কোনো লাভ হয়নি শিশুটির। চিকিৎসকরা জরুরি ভিত্তিতে শিশুটির গুরত্বপূর্ণ দুটি অপারেশন করানোর জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। হৃদপিণ্ড ও মূত্রনালীর গুরুত্বপূর্ণ দুটি অপারেশন করতে মোটা অংকের অর্থের প্রয়োজন তাদের। কিন্তু এই অর্থের যোগান দিতে পারছে না অসহায় এই দরিদ্র পরিবার। তাইতো সরকারসহ সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্যে আবেদন জানিয়েছেন অসহায় এই পরিবারটি।

স্থানীয়রা বলেন, প্রতিবেশী ও গ্রামের লোকেরা বসে সাহায্য সহযোগিতা করে তার ছেলেটির প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। ভাড়া করা ভ্যান চালিয়ে কোনো রকমে দিন-যাপন করে পরিবার। তার কাছে এমন কোনো অর্থ সম্পদ নেই যে সেটা দিয়ে তার এই সন্তানের চিকিৎসা করাবেন। সরকার একটু সহযোগিতা করলে শিশুটি বেঁচে যেতো।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে অসুস্থ শিশু মিজানুর রহমানের মা খুশি আরা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, ‘অনেক সাধনার পরে আমার ছেলে সন্তান জন্ম নিয়েছে। কিন্তু বাচ্চাটা জন্মের পর থেকে অসুস্থ। সারারাত কান্না করে পেটের ব্যথায়। কতো ডাক্তার দেখালাম কোনো লাভ হচ্ছেনা। সবাই খালি অপারেশন করাতে কয়। কিন্তু এতো ট্যাকা পয়সা নাই কিভাবে চিকিৎসা করাবো। যা পয়সা ছিলো সব শেষ হয়ে গেছে। এখন কবিরাজ দিয়ে দেখাচ্ছি। আপনারে কাছে একটু সাহায্য চাই। ’

শিশুটির বাবা রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভাই মানশির কাছ থেকে ভাড়া গাড়ি নিয়ে চালাই। যখন যে কাজ পাই সেই কাজই করি। কোনো রকমে চলে যায় আমাদের। দুইটা মেয়ের পরে আল্লাহ আমারে একটা ছেলে সন্তান দেছে। জন্মের পর থেকে নানা রোগ ধরা পড়েছে। ছেলেকে বাঁচানোর জন্যে সব চেষ্টাই করতিছি কিন্তু পাইরে উঠতিছিনে। বাচ্চাটা আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে কিন্তু সারারাত কান্দে বুঝি কষ্ট পাচ্ছে কিন্তু কি করবো। ঢাকার ডাক্তার দেখে বলেছে আমার ছেলের অপারেশ করা লাগবি। দুই আড়াই লাখ টাকা ব্যয় করে আমার ছেলের চিকিৎসা খরচ চালানো আমার পক্ষে সম্ভব না। সরকারের কাছে আমি সাহায্য চাচ্ছি। রাবেয়ার রোকেয়ার মতো যদি প্রধানমন্ত্রী আমারে দিক একটু নজর দিতো তাহলি আমার ছেলেটি বাঁচে যাতো। ’

ঢাকা থেকে পাবনায় আসা এই শিশুটির চিকিৎসক ডা. জামিল হোসেন (নবজাতক শিশু ও কিাশোর সার্জন) জানান, জন্মগতভাবে নানা রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে এই শিশুটি। ইতোমধ্যে শিশুটির দুটি প্রাথমিক অপারেশন করেছি আমরা। শিশুটির বাবা দরিদ্র আমরাও যতোটা কম খরচে তার চিকিৎসা করা যায় করেছি। কিন্তু শিশুটি জটিল রোগে আক্রান্ত। এই শিশুটির হৃদপিণ্ডে ছিদ্র রয়েছে, মূত্রনালী দুটি, পায়ু পথের সমস্যা রয়েছে। তার অপারেশন করাতেই হবে। এই অপারেশন করালে হয়তো শিশুটি স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারবে।

পাবনা সমাজ সেবা প্রবেশন অফিসার পল্লব ইবনে শায়েখ বাংলানিউজকে বলেন, আপনাদের মাধ্যমে খবর পেয়ে প্রথম পর্যায়ে এই শিশুটির হাসপাতালের ভর্তির সময় আমরা সাহায্য করেছি। এই শিশুটির চিকিৎসার জন্য আমরা সমাজ সেবার পক্ষ থেকে প্রাথমিক ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। শিশুটির হার্টের চিকিৎসার জন্য সরকারিভাবে সহযোগিতার ব্যবস্থা করা চেষ্টা চলছে।

দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া এই শিশুটির পায়ুপথের নালা বন্ধসহ মূত্রনালী দুইটি। নাভির উপরে একটি বড় মাংসপিণ্ড ছিলো। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রথম পর্যায়ে অপারেশ করিয়ে পায়ুপথ ও মাংসপিণ্ড কেটে দিয়েছে। এই দুটি অপারেশন ধারদেনা করে করিয়েছেন পরিবার। কিন্তু এখানেই শেষ নয় শিশুটি আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও হৃদরোগ হাসপাতালে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে শিশুটির হৃদপিণ্ডে ছিদ্র ধরা পড়ে। শিশুটির মূত্রনালী দুটিসহ রয়েছে হারনিয়ার সমস্যা। বর্তমানে শিশুটি ঠিকমত ঘুমাতে পারে না। সারারাত চিৎকার করে ব্যাথার যন্ত্রণায়। তাই অতিদ্রুত এই শিশুটির সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে হয়তো বেঁচে যেতো শিশুটি। আবারো হাসিমুখ ফিরে পেতো বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।