ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

স্মারক নম্বর দিতে ঘুষ নেওয়া সেই অফিস সহকারীকে বদলির সুপারিশ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০২১
স্মারক নম্বর দিতে ঘুষ নেওয়া সেই অফিস সহকারীকে বদলির সুপারিশ

লালমনিরহাট: বিলের স্মারক নম্বর দিতেও প্রকাশ্যে ঘুষ নেওয়া লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশলীর দফতরের অফিস সহকারী নুরজাহান বেগম জেবিকে বদলির সুপারিশ করেছে কর্তৃপক্ষ।  

বুধবার (০৭ এপ্রিল) বিকেলে ঘুষ নেওয়া অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদনসহ বদলির সুপারিশ নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে পাঠান উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানা।

 

নুরজাহান বেগম স্থানীয় প্রকৌশল বিভাগের আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে কর্মরত। তিনি এ উপজেলারই বাসিন্দা।  

অভিযোগে জানা গেছে, গ্রামীণ হাট-বাজার উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলার সাপ্টিবাড়ি হাটের চারতলার মধ্যে ওপরের দুইতলা নির্মাণ কাজের দরপত্র আহ্বান করে প্রকৌশল দফতর। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধি হিসেবে কাজটি তদারকি করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম।

প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে সেই নির্মাণ কাজটির প্রায় ৫০ শতাংশ শেষ হলে তৃতীয় দফায় বিলের আবেদন করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সেই বিলের কাগজপত্র নিয়ে উপজেলা প্রকৌশলীর দফতরে যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলমের ভাতিজা উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ হযরত আলী।

এ সময় বিলের আবেদনে স্মারক নম্বর দেওয়ার জন্য ফাইলটি অফিস সহকারী নুরজাহান বেগম জেবির কাছে পাঠানো হয়। তিনি তখন টাকা ছাড়া স্মারক নম্বর দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।

অবশেষে বাধ্য হয়ে প্রথমে দুইশ’ টাকা দিয়ে স্মারক নম্বর বসানোর অনুরোধ করেন। ঘুষ কম হওয়ায় টাকা ছুড়ে ফেলে দেন অফিস সহকারী নুরজাহান বেগম জেবি। শেষ পর্যন্ত পাঁচশ’ টাকা ঘুষ নিয়ে তবেই বিলে স্মারক নম্বর বসিয়ে ফাইলটি অগ্রগামী করেন অফিস সহকারী।  

ঠিকাদারের প্রতিনিধি কৃষিবিদ হযরত আলী বলেন, স্মারক নম্বর বসাতে গেলে অফিস সহকারী জেবি মিষ্টি খাওয়ার আবদার করেন। তাই তাকে প্রথমে দুইশ’ টাকা দিয়েছিলাম। কম হওয়ায় সেই টাকা আমার পায়ে ছুড়ে মারেন এবং আমাকে ভর্ৎসনা করেন। তিনি বলেন, অফিসারদের লাখ লাখ টাকা ঘুষ দেন, আর আমাদের বেলায় পাঁচশ’/হাজার টাকা বের হয় না। যান স্মারক নম্বর অফিসারের কাছ থেকে নেন। এ কথা বলে তিনি ফাইলটি ফেরত দেন। অবশেষে পাঁচশ’ টাকা ঘুষ নিয়ে তবেই স্মারক নম্বর বসিয়ে ফাইলটি অগ্রগামী করেন অফিস সহকারী নুরজাহান জেবি।  

এদের কাছে ঠিকাদাররা জিম্মি বলেও মন্তব্য করেন হযরত আলী।  

এমন একটি অভিযোগের ভিত্তিতে ঘুষ গ্রহণের ছবিসহ গত ৪ এপ্রিল বাংলানিউজে  ‘বিলের স্মারক নম্বর দিতেও ঘুষ!' শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যা মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং তার শাস্তির দাবি তোলেন অনেকেই। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিনই অফিস সহকারী নুরজাহান বেগম জেবিকে শোকজ করেন উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানা। শোকজের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় বুধবার (০৭ এপ্রিল) তাকে শাস্তিমূলক বদলির সুপারিশ করে তদন্ত প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়।  

আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানা বাংলানিউজকে বলেন, ঘুষ নেওয়ার ছবিসহ যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত অফিস সহকারী নুরজাহান বেগম জেবিকে শোকজ করা হয়। কিন্তু শোকজের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় তাকে শাস্তিমূলক বদলির সুপারিশ করে তদন্ত প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে পাঠানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

পড়ুন আগের সংবাদ: বিলের স্মারক নম্বর দিতেও ঘুষ!

বাংলাদেশ সময়: ২১২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০২১
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।