ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বিলের স্মারক নম্বর দিতেও ঘুষ!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০২১
বিলের স্মারক নম্বর দিতেও ঘুষ! ঘুষের টাকা নিচ্ছেন নুরজাহান বেগম জেবি।

লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশলীর দফতরে ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়ে না বলে অভিযোগ ঠিকাদারদের। বিলের স্মারক নম্বর দিতেও ৫শ টাকা ঘুষ গুণতে হয়।

অভিযোগে জানা গেছে, গ্রামীন হাট-বাজার উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলার সাপ্টিবাড়ি হাটের ৪তলার ভিতের উপর ২তলা নির্মাণ কাজের দরপত্র আহ্বান করে প্রকৌশল দফতর। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধি হিসেবে কাজটি তদারকি করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম। প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে সেই নির্মাণ কাজটির প্রায় ৫০ শতাংশ শেষ হলে তৃতীয় দফায় বিলের আবেদন করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সেই বিলের কাগজপত্র নিয়ে উপজেলা প্রকৌশলীর দফতরে যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলমের ভাতিজা উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ হযরত আলী। এ সময় বিলের আবেদনে স্মারক নম্বর দেওয়ার জন্য ফাইলটি অফিস সহকারী নুরজাহান বেগম জেবির কাছে পাঠানো হয়। তিনি টাকা ছাড়া স্মারক নম্বর দিবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।  

অবশেষে বাধ্য হয়ে প্রথমে দুইশ টাকা দিয়ে স্মারক নম্বর বসানোর অনুরোধ করেন। ঘুষ কম হওয়ায় টাকা ছুড়ে ফেলে দেন অফিস সহকারী নুরজাহান বেগম জেবি। শেষ পর্যন্ত ৫শ টাকা ঘুষ নিয়ে তবেই বিলে স্মারক নম্বর বসিয়ে ফাইলটি অগ্রগামী করেন অফিস সহকারী।  

ঠিকাদারের প্রতিনিধি কৃষিবিদ হযরত আলী বলেন, স্মারক নম্বর বসাতে গেলে অফিস সহকারী জেবি মিষ্টি খাওয়ার আবদার করেন। তাই তাকে প্রথমে দুইশ টাকা দিয়েছিলাম। কম হওয়ায় সেই টাকা আমার পায়ে ছুড়ে মারেন এবং আমাকে ভৎসনা করেন। বলেন, অফিসারদের লাখ লাখ টাকা ঘুষ দেন আর আমাদের বেলায় ৫শ/হাজার টাকা বের হয় না। যান স্মারক নম্বর অফিসারের কাছ থেকে নেন। এ কথা বলে জেবি ফাইলটি ফেরত দেন। অবশেষে ৫শ টাকা ঘুষ নিয়ে তবেই স্মারক নম্বর বসিয়ে ফাইলটি অগ্রগামী করেন অফিস সহকারী নুরজাহান জেবি। এদের কাছে ঠিকাদাররা জিম্মী বলেও মন্তব্য করেন হযরত আলী।  

ঘুষ গ্রহণকারী উপজেলা প্রকৌশলীর অফিস সহকারী নুরজাহান বেগম জেবি বলেন, ঘুষ নয়, বিল তুলছেন তাই মিষ্টি খাওয়ার জন্য টাকা দিয়েছেন। তবে ঘুষ গ্রহণের ছবিটি তার বলে শনাক্ত করলেও নিউজ প্রকাশ না করতে এ প্রতিবেদককে অনৈতিক সুবিধার প্রস্তাব দেন তিনি।  

আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানা ঘুষ গ্রহণের ছবিটি তার অফিসের এবং অফিস সহকারী নুরজাহান বেগম জেবির বলে শনাক্ত করে বলেন, ফাইল ছুড়ে ফেলে টাকা আদায় করাটা দুঃখজনক। তাকে সতর্ক করা হবে। তিনিও নিউজ প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেন।  

লালমনিরহাট স্থানীয় প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফ আলী খান বাংলানিউজকে বলেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে জনগণের সেবা করার জন্যই সরকার বেতন দেন। এরপরও ফাইল আটকিয়ে মিষ্টি খাওয়ার জন্য টাকা নেওয়া অন্যায়। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।