ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী

অর্ধশতকে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব

দীপন নন্দী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫২ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২১
অর্ধশতকে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব ...

ঢাকা: ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলের দেশে সতের কোটি মানুষের বাস। সীমিত সম্পদকে কাজে লাগিয়ে এ জনগোষ্ঠী আজ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

পরিণত হয়েছে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে। যাতে অন্যতম ভূমিকা রেখেছে বিস্তৃত যোগাযোগ ব্যবস্থা। সড়ক পথ তো বটেই উড়াল সড়ক হয়ে এখন পাতাল সড়কও নির্মিত হচ্ছে বাংলাদেশে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন এক নতুন বিপ্লবের উদাহরণ।
 
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের পর থেকেই দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন কাজ শুরু হয়। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধ্বংসস্তুপ থেকে দেশকে পুর্নগঠিত করতে শুরু করেন। যার ধারাবাহিকতা গেলো ৫০ বছরে অব্যাহত রয়েছে।
 
পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী নদীতে ট্যানেল, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো যোগাযোগ ব্যবস্থা হচ্ছে বাংলাদেশে। একের পর এক নির্মিত হচ্ছে সড়ক-মহাসড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট, উড়াল সড়ক, মেরিন ড্রাইভ। এসব প্রকল্পের অনেকগুলোর কাজই শেষ হয়েছে। শেষ পর‌্যায়ে রয়েছে আরও অনেক প্রকল্পের কাজ। বিদেশি অর্থায়নের পাশাপাশি নিজস্ব অর্থায়নেও রয়েছে এসব নির্মাণ কাজ।

বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় অহংকার নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু। দুর্নীতির অভিযোগ এনে যে প্রকল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো বিশ্ব ব্যাংক, সে প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করে বিশ্ব দরবারে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
 
গেলো বছরের ডিসেম্বরে সর্বশেষ স্প্যান স্থাপনের পর পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান। বর্তমানে দ্রুতগতিতে রেলওয়ে এবং সড়কপথের স্ল্যাব বসানোর কাজ এগিয়ে চলেছে। মূল সেতুর নির্মাণকাজের অগ্রগতি শতকরা প্রায় ৯২.৫০ ভাগ, নদীশাসন কাজের অগ্রগতি শতকরা ৮০ ভাগ এবং প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি শতকরা ৮৪.৫০ ভাগ। আগামী বছরের জুন নাগাদ পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে সেতু বিভাগ।
 
বর্তমানে চলমান প্রকল্পের আরেকটি বড় প্রকল্প চট্টগ্রামে ওয়ান সিটি টু টাউনের আদলে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। ইতোমধ্যে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ একটি টিউবের রিং প্রতিস্থাপনসহ বোরিং কাজ শেষ হয়েছে। সেসঙ্গে টিউবটির ২০০ মিটার রোড স্ল্যাব নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় টিউবটির ৭০০ মিটার বোরিং কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত টানেলের নির্মাণ কাজের অগ্রগতি শতকরা ৬৫ ভাগ বলে জানিয়েছে সেতু বিভাগ।
 
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে সারা দেশে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতাধীন ২১ হাজার ৩০২ কিলোমিটার জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং জেলা সড়ক রয়েছে। সে সঙ্গে রয়েছে চার হাজার ৪০৪টি সেতু এবং ১৪ হাজার ৮৯৪টি কালভার্ট।
 
ইতোমধ্যেই চার হাজার ৩৩১ কিলোমিটার মহাসড়ক মজবুতিকরণসহ ৫ হাজার ১৭১ কিলোমিটার মহাসড়ক প্রশস্ত করা হয়েছে। চার লেন বা তার ঊর্ধ্বে উন্নীত করা হয়েছে ৪১৭ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক। সেসঙ্গে আরও এক হাজার ৭৫২ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। এর পাশাপাশি কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভও নির্মিত হয়েছে। যা এখন পর্যটকদের অন্যতম আর্কষণের স্থানে পরিণত হয়েছে।
 
ঢাকা শহরের দীর্ঘদিনের যানজট নিরসনেও নেওয়া হয়েছে প্রচুর প্রকল্প। রাজধানীর যানজট নিরসনে নেওয়া হয়েছে মেট্রোরেলের মতো প্রকল্প। উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ এখন দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। এ প্রকল্পটির কাজের অগ্রগতি ৫৮.৭২ শতাংশ। আগামী এপ্রিলে মেট্রো ট্রেনের প্রথম সেট দেশে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
 
এছাড়াও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আরও চারটি রুটে মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারে। এ চারটি রুট হলো- ঝিলমিল থেকে টঙ্গী পর্যন্ত প্রায় ২৯ কিলোমিটার, মাজার রোড থেকে সদরঘাট পর্যন্ত প্রায় ২৩ কিলোমিটার, কেরানীগঞ্জ থেকে সোনাপুর পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ৪৮ কিলোমিটার।

এর পাশাপাশি গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত দ্রুত গতির বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি রুট নির্মাণের কাজও চলমান। হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত প্রায় ৪৬.৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজও চলমান।
 
শেষ হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কে চার লেনবিশিষ্ট দ্বিতীয় কাঁচপুর, দ্বিতীয় মেঘনা ও দ্বিতীয় গোমতী সেতুর নির্মাণকাজ। বরিশাল-পটুয়াখালী জাতীয় মহাসড়কে নির্মিত হচ্ছে চার লেনবিশিষ্ট পায়রা সেতু। তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর কাজ চলমান।

তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানের যোগাযোগ খাতেও চলছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। কক্সবাজারের সঙ্গে বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে নির্মিত হয়েছে নতুন সড়ক।
 
যোগাযোগ খাতের সার্বিক উন্নয়নের বিষয়ে সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণের মধ্য দিয়ে দেশে যোগাযোগ খাতে রীতিমতো বিপ্লব সাধিত হয়েছে। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান। নির্মাণাধীন রয়েছে মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো প্রকল্প।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২১
ডিএন/এমআরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ