ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী: এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২১ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২১
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী: এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ...

ঢাকা: স্বাধীনতার ৫০ বছরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতায় দেশের মানুষ আজ উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের কথা ভাবতে শুরু করেছে।

এ লক্ষ্যে পৌঁছতে নির্দিষ্ট সময়কে টার্গেট করে কর্মসূচিও নেওয়া হয়েছে।

এবছর ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে। স্বাধীনতার এই সুবর্ণজয়ন্তীতে দাঁড়িয়ে পেছনে তাকালে সহজেই অনুধাবন করা যাবে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আর্থ-সামাজিক, মানুষের জীবনযাত্রার মান, অবকাঠামোর উন্নয়ন, আধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভরতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে প্রভূত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। আর এই দীর্ঘ সময়ের অর্জন হিসাব করলে বড় বড় উন্নয়ন অর্জনগুলো সাধিত হয়েছে গত এক যুগের ধারাবাহিকতায়।

১৯৪৭ সালে পশ্চাৎপদ চিন্তার ভিত্তিতে গঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের কাঠামোর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) মানুষ ছিলো শোষিত, বঞ্চিত, অত্যাচারিত, নিস্পেষিত। সকল প্রকার উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত এবং অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর। পূর্ব বাংলা ছিলো পশ্চাৎপদ একটি জনপদ। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।  

স্বাধীনতার পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ যখন মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে তখনই স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়। শুরুতেই হোঁচট খায় বাংলাদেশ। এর পর দীর্ঘ চড়াই উৎড়াই, উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে।  

দেশে বর্তমানে ক্ষমতায় রয়েছে স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ। এই সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। গত ১২ বছরের বেশি সময় ধরে শেখ হাসিনার সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। আগামী ৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। চলতি বছরই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দেশকে উন্নত সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে নানা উদ্যোগ, পরিকল্পনা ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যেই তথ্য-প্রযুক্তিতে দেশ অনেক দূর এগিয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান আজ বাস্তবে পরিণত হয়েছে। আধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর দেশ গড়ে তুলতে একের পর এক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।  

উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশ আধুনিক অবকাঠামোয় সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে পারমাণবিক বিশ্বে, স্থান করে নিয়েছে মহাকাশে। উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সরকার গঠনের শুরু থেকে মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাথা পিছু আয় আজ দুই হাজার মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। দারিদ্রের হার নেমে এসেছে ২০.৫ শতাংশে। খাদ্যে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। জাতীয় বাজেট ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। শিক্ষা, চিকিৎসার ক্ষেত্রে দেশ অনেক এগিয়েছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও দেশ এগিয়েছে। মুক্তিযু্দ্ধের সময় গণহত্যার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে এবং এই বিচার কাজ অব্যাহত আছে।

এই সময়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম বিশেষ করে অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের কাজ যা বদলে দেবে বাংলাদেশের দৃশ্যপট ও অর্থনৈতিক গতিধারাকে। শুধু প্রকল্প গ্রহণই নয়, প্রকল্প বাস্তবায়ন ও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে।

উন্নয়নের মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিশ্ব ব্যাংকের চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে স্বপ্নের পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ এগিয়ে যাচ্ছে, যা এখন বাস্তবায়নের দোরগোড়ায়। এই প্রকল্পের কাজ শুরু করতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এবং রাজনৈতিক ও কুটনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। এই সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হবে ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। পদ্মাসেতুকে কেন্দ্র করে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙা এক্সপ্রেসওয়ে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন যুগের সূচনা করেছে এবং ওই অঞ্চলের দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে।  

দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে আরেক চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প দেশের সর্ববৃহৎ এবং প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ। যা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রাহমান। শেখ হাসিনা সরকার এই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পারমাণবিক বিশ্বে পদাপর্ণ করে এবং বিশ্ব পরমাণু ক্লাবের সদস্যপদ লাভ করেছে। রাশিয়ার প্রযুক্তি ও সহযোগিতায় এক লাখ ১৩শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই ইউনিট বিশিষ্ট এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে।

বাংলাদেশ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছে কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাই-১। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণেরও প্রস্তুতি চলছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে স্যাটেলাইট বিশ্বে।

ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান নিয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিল বর্তমান সরকার। টানা তিন মেয়াদের এই সরকারের প্রথম মেয়াদেই দৃশ্যমান হয়েছে এই ডিজিটাল বাংলাদেশ। আজ গ্রামে গ্রামে পৌঁছে গেছে ইন্টারনেট, কম্পিউটার, স্মার্টফোন। ইন্টারনেট জগতে বাংলাদেশ চতুর্থ জেনারেশনে(৪-জি) প্রবেশ করেছে। এ বছর বাংলাদেশে ৫-জি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে দ্রুত এগিয়ে নিতে কৃষি, শিল্প উৎপাদনের পাশাপাশি অবকাঠামো, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। সারা দেশে একশটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। রাজধানী এবং রাজধানীর বাইরে বিশেষ করে ব্যবসা বাণিজ্যের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলকে বিবেচনায় নিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে এবং হচ্ছে। যোগাযোগ ক্ষেত্রে দেশে এক যুগান্তকারী উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।

রাজধানীতে যানজট দুর করতে নির্মাণাধীন মেট্রো রেল প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এই মেট্রো রেল এখন দৃশ্যমান। রাজধানীর উপকণ্ঠ হেমায়েতপুর থেকে গুলশান হয়ে ভাটারা এবং বিমান বন্দর থেকে রামপুরা হয়ে কমলাপুর পযন্ত আরও দুইটি মেটো রেল প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে ও স্থানে নির্মাণ হয়েছে বেশ কয়েকটি ফ্লাইওভার। নির্মাণ হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।

উন্নয়নের পূর্ব শর্ত বিদ্যুতের চাহিদা মোটাতে শেখ হাসিনা সরকার এই সেক্টরকে অগ্রাধিকার দিয়ে এগিয়ে নিচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ২১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে। চাহিদার থেকে ৯ হাজার মেগাওয়াট বেশি। এরপর আরও কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে।

মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। মাতারবাড়ী ও ঢালঘাটা ইউনিয়নের এক হাজার ৪১৪ একর জমিতে এই বিদ্যুৎ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হচ্ছে। কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিতে। নির্মাণাধীন রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২০২১ সালের শেষ দিকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ আসতে শুরু করবে। নির্মাণাধীন পায়রা বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।

এদিকে চট্রগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমাতে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ায় রাবনাবাদ চ্যানেলে পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হচ্ছে। আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে ১৬ মিটার গভীরতায় চ্যানেল ড্রেজিং সম্পন্ন করে বন্দর গড়ে তোলা হবে। সমুদ্রপথে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও এগিয়ে নিতে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে শুরু করা হয়েছে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের কাজ।

সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি বিষয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের আজ যত অর্জন, দেশ যতদুর এগিয়েছে সবটুকইু অর্জিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু এবং তার রক্তের হাত ধরে। বঙ্গবন্ধু দেশের স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। তিনি শোষণমুক্ত সমাজ ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার ভিত্তি রচনা করেছিলেন। তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা তা প্রতিষ্ঠা করেছেন। নারী, শিশু অধিকার, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, খাদ্য, চিকিৎসার সুব্যবস্থা, বাসস্থানের নিশ্চয়তা, সামাজিক নিরাপত্তা শেখ হাসিনা দিয়েছেন। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ বড় বড় অর্জনগুলোর কারণে আজ বাংলাদেশ পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে, সম্মানিত হচ্ছে বিদেশী সাহায্য নির্ভরতা থেকে বাংলাদেশ স্বনির্ভর দেশে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২১
এসকে/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।