ঢাকা, শনিবার, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৭ জুলাই ২০২৪, ২০ মহররম ১৪৪৬

জাতীয়

রাজশাহীতে ৪০৬২ কোটি টাকায় ‘ভূ-উপরিস্থ’ পানি শোধনাগার নির্মাণ করবে চীনা প্রতিষ্ঠান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১১ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২১
রাজশাহীতে ৪০৬২ কোটি টাকায় ‘ভূ-উপরিস্থ’ পানি শোধনাগার নির্মাণ করবে চীনা প্রতিষ্ঠান

রাজশাহী: বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ‘রাজশাহী ওয়াসা ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগার নির্মাণ’ প্রকল্প নিয়ে রাজশাহী পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ওয়াসা) ও চীনের হুনান কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।  

রোববার (২১ মার্চ) দুপুরে হোটেল সোনারগাঁওয়ের সুরমা কনফারেন্স রুমে এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এমপি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন- রাজশাহী সিটি মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন ও রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা।

অনুষ্ঠানে মেয়র তার বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশের মতো রাজশাহীর উন্নয়নেও অনেক বাজেট বরাদ্দ দিয়েছেন। তার মধ্যে অন্যতম ৪ হাজার ৬২ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘রাজশাহী ওয়াসা ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগার’ প্রকল্প। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকাসহ আশেপাশের এলাকার পানির আর কোনো সমস্যা থাকবে না। পাশাপাশি ভূ-উপরস্থ পানি শোধন করে পানযোগ্য করে তোলার কারণে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপরেও চাপ কমবে। এটি রাজশাহীবাসীর জন্য একটি মাইলফলক।

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভি, রাজশাহী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুলতান আব্দুল হামিদ, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) এস.এম. তুহিনুর আলম, প্রধান প্রকৌশলী মো. পারভেজ মামুদ, নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) সোহেল রানা, নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) মাহবুবুর রহমান।

এর আগে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে রাজশাহী ওয়াসার অধীনে ‘রাজশাহী ওয়াসা ভূ’-উপরিস্থিত পানি শোধনাগার’ নামের প্রকল্পটি অনেক দিন ধরেই আলোচনায় ছিল। রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে এর স্থানও নির্ধারিত হয়।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ইনটেক পয়েন্ট, বুস্টার পাম্পিং স্টেশনসহ প্রতিদিন ২০ কোটি লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন হবে শোধনাগার শোধনাগারটি। চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জিটুজি প্রকল্পটি প্রথম জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন হয় ২০১৮ সালে। সে বছরের ২৪ অক্টোবর চীন সরকার মনোনীত সেদেশের প্রতিষ্ঠান হুনান কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ করপোরেশনের (এইচসিইজি) ৩২৫ মিলিয়ন ইউএস ডলারের ক্রয় প্রস্তাব সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে অনুমোদিত হয়।

এই প্রকল্প জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য ‘জনস্বার্থে’ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি (ডিপিএম) অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। মাঝখানের সময়টায় প্রকল্পের নতুন অগ্রগতি ছিল না। এ বছরের ১৩ জানুয়ারি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) এক পত্রে জানানো হয়, ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাস জানিয়েছে, মনোনীত চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হুনান কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ করপোরেশন (এইচসিইজি) পুনর্গঠিত হয়েছে। এর নতুন নাম ‘হুনান কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড’।

সেই অনুযায়ী প্রিফারেন্সিয়াল বায়ার ক্রেডিটের (পিবিসি) নতুন নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে পুনরায় বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদনের জন্য ওইদিনই নেগোসিয়েশন সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই ষোড়শ নেগোসিয়েশন সভায় বাণিজ্যিক চুক্তির সব নথিপত্র অপরিবর্তিত রেখে পুনর্গঠিত ‘হুনান কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড’কে মনোনীত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।  

গত ৩ ফেব্রুয়ারি ‘হুনান কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড’র সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড কন্সট্রাকশন/টার্কি-এর ভিত্তিতে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে চূড়ান্তকৃত ৩২৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার সমতুল্য বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৭২ কোটি ১৮ লাখ ৭৫ টাকার (উৎস ভ্যাট ও আয়কর ছাড়া) ক্রয় প্রস্তাব সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ৫ম সভায় পুনঃঅনুমোদন দেয়া হয়। সম্প্রতি চীনা প্রতিষ্ঠানটির একটি প্রতিনিধি দল রাজশাহী ঘুরে যান। চুক্তি সই করার পর শিগগির প্রকল্পের কাজ শুরুর ব্যাপারে তারা আশাবাদী।

প্রকল্প পরিচালক ও রাজশাহী ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মো. পারভেজ মামুদ বলেন, প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে ওয়াসা ও চীনের হুনান কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো। প্রকল্পের টাকা দিয়ে ২০০ এমএলডি (দৈনিক ২০ কোটি লিটার) পানি শোধনাগার নির্মাণ, ২৬.৫ কিঃমিঃ ট্রান্সমিশন মেইন পাইপ লাইন স্থাপন, ৪৮ কিঃমিঃ প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি পাইপ লাইন স্থাপন করা হবে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে রাজশাহী মহানগরীসহ আশপাশের এলাকার পানির কোনো সমস্যা থাকবে না।

বাংলাদেশ সময়: ০১১০ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২১
এসএস/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।