ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পাবনায় এমপিপুত্রের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২১
পাবনায় এমপিপুত্রের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ

পাবনা: পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকুর ছেলে নাসিফ শামস রনির বিরুদ্ধে দরিদ্র চাষিদের ব্যক্তিগত ও নদীর খাস জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সংসদ সদস্যের ছেলের নির্দেশে ও উপস্থিতিতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা খাস জমি ভোগদখলকারী দরিদ্র চাষিদের মারপিট করে রোপণকৃত ফসলও নষ্ট করে দিয়েছে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে ভুক্তভোগীরা এলাকায় বিক্ষোভ ও প্রতিকার দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

লিখিত অভিযোগে গ্রামবাসীরা জানান, পাবনা-১ (সাঁথিয়া-বেড়া) আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকুর ছেলে নাসিফ শামস রনি বেড়া উপজেলার পায়না এলাকায় যমুনা নদীর তীরে ২০১২ সালে ৬০ বিঘা জমি কেনেন। এরপর নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের জমি দখলে নিয়ে নেন। এরপর ক্রমেই ক্ষমতার দাপটে হুমকি-ধামকি দিয়ে আশপাশের দরিদ্র চাষিদের দখলে থাকা ব্যক্তিগত ও খাস খতিয়ানভুক্ত শত বিঘা জমি দখলে নেয়ার পাঁয়তারা করতে থাকেন।

গ্রামবাসীরা আরও অভিযোগ করেন, গ্রামবাসীরা জমির দখল না ছাড়ায় গত ১২ মার্চ শুক্রবার সকালে শামসুল হক টুকুর ছেলে রনির সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে চাষিদের রোপণ করা বোরো ধান নষ্ট করে কাঁটাতারে জমি ঘিরে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় চাষিরা বাধা দিলে সন্ত্রাসীরা বেদম মারপিট শুরু করেন। বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা ভয় না পেয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়া পুলিশ সদস্যরা উল্টো এমপিপুত্রের পক্ষ নিয়ে বিক্ষোভকারীদের আটক করে থানায় নিয়ে মামলা দেয়।

পাশাপশি, ঘটনার পর থেকে ভুক্তভোগীদের পুলিশ হয়রানি করছে বলেও অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।

এই ঘটনায় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঘটনায় বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী আহত হন। আহরা বেড়া হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে পুলিশ হাসপাতাল থেকে তাদের আটক করে।

স্থানীয়রা বলেন, আমাদের কাছ থেকে সংসদ সদস্যের ছেলে ভয় দেখিয়ে জমি কিনে নেওয়ার কথা বলে অনেকের কাছ থেকে লিখে নিয়ে আর জমির টাকা দেননি। টাকা চাইতে গেলে ভয় দেখান তিনি।

ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মানিক ব্যাপারী জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াবদা বাঁধে বানভাসি ও হতদরিদ্র মানুষের টিনের ছাপড়া ঘর তুলে বসবাস করছে দীর্ঘদিন ধরে। তাদের উচ্ছেদ করার খবর পেয়ে আমি শুক্রবার সেখানে যাই। এ সময় এমপি পুত্রের লোকজন এক্সেভেটর দিয়ে দরিদ্র চাষিদের রোপণকৃত ধান মাটিচাপা দিতে শুরু করলে আমি দলীয় পরিচয় দিয়ে নাসিফ শামস রনিকে ফসল নষ্ট না করতে অনুরোধ জানালে তিনি উত্তেজিত হয়ে আমাকেও গালিগালাজ করেন।

বেড়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান মানু বলেন, নাসিফ শামস রনি ৬০ বিঘা জমি কিনে সেখানে সৌদিয়া অ্যাগ্রো সোলার পিভি পাওয়ার প্লান্ট সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে আশেপাশের সব জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। সাধারণ মানুষের তো বটেই আমার দখলে থাকা ব্যক্তিগত জমির ধানও তিনি নষ্ট করে দিয়েছেন। এ বিষয়ে সংসদ সদস্য মহোদয় সবকিছু জানলেও তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি।

তবে, গ্রামবাসীর অভিযোগ অসত্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন শামসুল হক টুকুর ছেলে নাসিফ শামস রনি। তিনি বলেন, পায়না এলাকায় আসার মায়ের নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও ব্যক্তিগত ব্যবসার জন্য জমি ক্রয় করেছি, তা উন্নয়নের কাজ চলছে। তবে, কাউকে উচ্ছেদ বা মারপিটের ঘটনা কখনোই ঘটেনি। স্থানীয় রাজনীতিতে দ্বন্দ্ব থাকার সুযোগ নিতে আমাকে ও আমার পরিবারকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে।

এ প্রসঙ্গে বেড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, পায়না গ্রামে বিশৃঙ্খলার খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি বর্নিতমানে নিয়ন্ত্রণে আছে। কারো পক্ষ হয়ে কাজ করার অভিযোগ সত্য নয় বলে জানান তিনি।

জমি দখলের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, নদী তীরবর্তী যে জমি নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে, সেটি তার ব্যক্তিগত না খাস তা যাচাই করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এসিল্যান্ডকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০১২৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২১
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।