ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ায় সংসার ভাঙল গৃহবধূর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২০ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২১
কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ায় সংসার ভাঙল গৃহবধূর রোকসানা ও তার সন্তান। ছবি: বাংলানিউজ

গাইবান্ধা: স্বামী রাজা মিয়ার স্বপ্ন ছিল পুত্র সন্তানের বাবা হবেন। কিন্তু স্ত্রীর কোলজুড়ে এসেছে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান।

আর এ অপরাধে সংসার ভাঙল রোকসানা খাতুন (২৩) নামে এক গৃহবধূর। স্বামীর বাড়ি থেকে বিতারিত হয়ে পাঁচ দিনের শিশুকে নিয়ে বাবার বাড়িতে অবস্থান করছেন অসহায় ওই গৃহবধূ।
 
এর আগে সুরভী বেগম (২৮) নামে এক মেয়েকে বিয়ে করেন রাজা মিয়া। কিন্তু বিয়ের সাড়ে তিন বছরে গর্ভধারণে ব্যর্থ হওয়ায় প্রথম স্ত্রীকে রাজা তালাক দেন বলে জানান রোকসানা।
 
রোকসানা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের ধনিয়ারকুড়া গ্রামের লুৎফর মিয়ার মেয়ে। প্রথম স্ত্রী সুরভী একই উপজেলার বামনডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা।
 
শুক্রবার (১২ মার্চ) রাতে ভুক্তভোগী রোকসানা বাংলানিউজকে জানান, তিনি রাজার দ্বিতীয় স্ত্রী। এক বছর আগে সাদুল্লাপুর উপজেলার 
নলডাঙ্গা ইউনিয়নের ঘোড়ামারা গ্রামের মহব্বর আলীর ছেলে রাজা মিয়ার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পরই গর্ভধারণ করেন রোকসানা। স্বামীর স্বপ্ন ছিল পুত্র সন্তানের বাবা হবেন। তাই অনাগত সন্তানের লিঙ্গ নিশ্চিত হতে আল্ট্রাসনোগ্রাম করান তার স্বামী। কিন্তু রিপোর্টে কন্যা সন্তান জানার পর থেকেই রোকসানার জীবনে নেমে আসে অযত্ন-অবহেলাসহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।
 
নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে রোকসানা জানান, শ্বশুরবাড়িতে বৈদ্যুতিক মোটর দিয়ে পানি তোলা হলেও তাকে ওই পানি ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি। পেটে সন্তান নিয়ে তাকে টিউবওয়েল চেপে সাংসারিক কাজকর্মে পানি ব্যবহার করতে হয়েছে। একপর্যায়ে তাকে বাড়িতে রেখে ঢাকায় চলে যান রাজা। স্বামীর অবর্তমানে নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। এমনি অবস্থা চলাকালে গত ৮ মার্চ প্রসব বেদনা শুরু হলে শ্বশুরবাড়ির কেউ এগিয়ে আসেনি। একপর্যায়ে খবর পেয়ে সুন্দরগঞ্জ থেকে তার মা এসে রংপুরে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করান রোকসানাকে। সেখানে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে কন্যা সন্তান জন্ম দেন তিনি।  
 
রোকসানা আরো জানান, ক্লিনিক থেকে ছাড়পত্র পেয়ে বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) দুপুরে কন্যা সন্তানসহ স্বামীর বাড়িতে যান তিনি। এসময় তাকে বাড়িতে আশ্রয় না দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হয় তিন মাস আগেই তাকে তালাক দেওয়া হয়েছে। এই বলে বাড়িতে তালা দিয়ে সটকে পড়েন শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
 
একপর্যায়ে ৯৯৯-এ কল দিলে ওইদিন সন্ধ্যায় সাদুল্লাপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। কিন্তু বাড়িতে কেউ না থাকায় পুলিশের পরামর্শে সন্তানকে নিয়ে সুন্দরগঞ্জে বাবার বাড়িতে চলে যান রোকসানা।
 
রাজার প্রথম স্ত্রীর বিষয়ে রোকসানা জানান, পাঁচ বছর আগে রাজা মিয়া সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গার সুরভী বেগম নামে এক মেয়েকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর সাড়ে তিন বছর সংসার জীবনে সুরভী বেগম মা হতে পারেননি। পরে তাকে তালাক দেন রাজা। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন সুরভী বেগম। যা বিচারাধীন রয়েছে।
 
এ ব্যাপারে সাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানা জানান, এ ঘটনায় থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 
এদিকে রাজা মিয়ার দাবি, সন্তান পেটে নিয়েই রোকসানাকে বিয়ে দিয়েছে তার পরিবারের লোকজন। বিষয়টি জানতে পেরে তাকে তালাক দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গর্ভধারণকালীন তালাক দেওয়ার বিধান না থাকায় বিষয়টি গোপন রাখেন তিনি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০১৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।