ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

প্রাসাদসম বাড়িতে সুনসান নীরবতা

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৭ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২১
প্রাসাদসম বাড়িতে সুনসান নীরবতা প্রাসাদসম বাড়িতে সুনসান নীরবতা। ছবি: মাহমুদ হোসেন

সিলেট: প্রাসাদসম বাড়ি। বাড়ির সামনে পুকুর।

প্রবেশদ্বারেই মসজিদ। পাশেই নারী শিক্ষার বিস্তারে করা গার্লস হাইস্কুল। সবই সিলেট-৩ আসনের সদ্যপ্রয়াত সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর হাতে গড়া।  

সুরম্য অট্টালিকা সম বাড়িটি সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা সদরের নুরপুরে অবস্থিত। নুরপুর বড়বাড়ি নামে খ্যাত বাড়িটি মাহমুদ উস সামাদ ছাড়া যেন এখন মৃত্যুপুরী।  

বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) রাজধানী ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান করোনা আক্রান্ত এই সংসদ সদস্য। তার মৃত্যুর খবরে নেতাকর্মীরা বাড়িতে ভিড় করেন।  

সরেজমিনে নুরপুর বড়বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজন-নেতাকর্মীরা আসছেন-যাচ্ছেন। সবাই বিষণ্ন। কেউ কাঁদছেন। কেউবা স্মৃতিচারণ করছেন মিডিয়ার সামনে। বাড়ির যে কক্ষে নেতাকর্মীদের নিয়ে বসতেন, সেই কক্ষটি গোছানো। যে চেয়ারে বসে নেতাকর্মীদের সঙ্গে খোশগল্পে মাতোয়ারা হতেন, সেই চেয়ারটি খালি পড়ে আছে। নেই কেবল চেয়ারের মানুষটি। ঘরের দেয়ালে সাঁটানো ছবিতে তার বিভিন্ন সময়ের রাজনৈতিক বর্ণাঢ্য জীবনের ছবি। ঘরের গৃহকর্মী নির্বাক দৃষ্টিতে অপলকে দেখছিলেন দেয়ালে সাঁটানো মালিকের ছবি। মালিককে হারানোর ব্যথার ভার যেন তার কাছে না বলা আক্ষেপের।  

মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর এপিএস জুলহাস আহমদ বলেন, গত রোববার তিনি বাড়ি থেকে বিমানের ফ্লাইটে ঢাকা যান। যাওয়ার পথে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতাল নিয়ে ভর্তি করা হয়। এরপর সোমবার সকালে করোনার নমুনা দিলে ওইদিন বিকেলে পরীক্ষায় ফলাফল পজিটিভ আসে।  

মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর ভাগনে ওহিদুজ্জামান চৌধুরী সুফি বাংলানিউজকে বলেন, হার্টের সমস্যায় তিনি বাইপাস করিয়েছিলেন। করোনা আক্রান্তের পর প্লাজমা থেরাপিও দেওয়া হয়। কিন্তু তাকে বাঁচানো গেলো না।  

ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুল আউয়াল কয়েস বলেন, আমাদের রজনৈতিক অভিভাবক ছিলেন মাহমুদ উস সামাদ। তিনি আমাদের এতিম করে চলে গেলেন।  

বাউল সম্রাট কালা মিয়াও অশ্রুসিক্ত। কাঁপা কণ্ঠে বলেন, তিনি (সংসদ সদস্য) আমাদের সুখে-দুঃখে পাশে ছিলেন। বাড়িতে এলেই খোঁজ নিতেন। সুবিধা-অসুবিধা জানতে চাইতেন। আমরা কী রত্ন হারিয়েছি তা কেবল আমরাই জানি।  

ফেঞ্চুগঞ্জের ঘিলাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল লেইছ চৌধুরী বলেন, আমরা এমন মৃত্যুসংবাদের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। তিনি নিজের নির্বাচনী এলাকাকে মনের মতো করে সাজাতে কাজ করে গেছেন। মৃত্যুর আগে কেবল অসমাপ্ত কাজগুলোতে হাত দিয়েছিলেন। তার চলে যাওয়া আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি।  

মরহুমের স্বজনরা জানান, তার অন্তিম ইচ্ছা ছিল গ্রামের বাড়িতে একটি জানাজার। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে তার মরদেহ হেলিকপ্টারযোগে উপজেলার মাইজগাঁও খেলার মাঠে নেওয়া হবে। এরপর বিকেল ৫টায় উপজেলার কাসিম আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে বাড়ির সামনের মসজিদ সংলগ্ন নিজের হাতে গড়া কবরস্থানে দাফন করা হবে।  

মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী ১৯৫৫ সালের ৩ জানুয়ারি ফেঞ্চুগঞ্জের নুরপুরের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার মরহুম দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী এবং মা আছিয়া খানম চৌধুরী।  

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন
সিলেট-৩ আসনে (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জের একাংশ) আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী বিগত তিন মেয়াদে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হ্যাটট্রিক জয়ী হন। সদ্য হওয়া সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে সহ-সভাপতি ছিলেন তিনি।  

১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চাকা প্রতীক নিয়ে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এরপর ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ও ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও অল্প ভোটের ব্যবধানে তিনি বিজয়ী হতে পারেননি। তাই বলে হাল ছাড়েননি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বাসী সৈনিক হিসেবে রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের মহাসচিব নির্বাচিত হন।  

সবশেষ ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীকে এক লাখ ৭৬ হাজার ৫৮৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শফি আহমদ চৌধুরী ৮৩ হাজার ২৮৮ ভোট পেয়েছিলেন। এর আগে ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি ৯৭ হাজার ৫৯৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়ে তিনি প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শফি আহমদ চৌধুরী ৫৪ হাজার ৯৫৫ ভোট পেয়েছিলেন।  

বাংলাদেশ সময়: ০০২৪ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২১
এনইউ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।