ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

দেশি তামাকশিল্প রক্ষায় কুষ্টিয়ায় কয়েকশ’ চাষির অনশন

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৪ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২১
দেশি তামাকশিল্প রক্ষায় কুষ্টিয়ায় কয়েকশ’ চাষির অনশন

দেশি তামাক শিল্প রক্ষা ও চাষিদের উৎপাদিত তামাকের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করাসহ বিদেশি কোম্পানির আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে প্রতীকী অনশন করেছেন কুষ্টিয়ার কয়েকশ’ তামাকচাষি।

সোমবার (৮ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে পৌরসভা চত্বরে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তামাক চাষি কল্যাণ সমিতির ব্যানারে এ অনশন কর্মসূচি পালন করেন তারা।

করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে মুখে মাস্ক পরে তারা অনশন কর্মসূচিতে অংশ নেন।  

সমিতির আহ্ববায়ক মো. আশরাফুল ইসলাম কবিরাজের সভাপতিত্বে অনশন চলাকালে বক্তব্য দেন যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শামসুল আলম শিমুল, মো. এখলাস উদ্দিন, সদস্য মো. ময়েন উদ্দিন, মো. আশরাফুল ইসলাম, মো. আল আমিন, মো. আক্তারুজ্জামান, মো. রাশেদুল ইসলাম, মো. সৌখিন আলী, মো. আল হেলাল করম ও মো. শাহিনুজ্জামান।  

সমিতির নেতারা বলেন, আমরা গরিব চাষি, তামাক চাষ করতে পারছি না। কারণ আমরা তামাক চাষ করার পর সেটা নায্য মূল্যে বিক্রি করতে পারি না। দেশে বর্তমানে শুধু দুটি বিদেশি কোম্পানি এবং কয়েকটি দেশি কোম্পানি তামাক কেনে। কিন্তু আজ থেকে ১০ বছর আগেও আমরা প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি শতভাগ দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানির কাছে ন্যায্য মূল্যে তামাক বিক্রি করতাম। এ সব শতভাগ দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানি নিম্নমানের সিগারেট বানাত এবং আমরা তাদের জন্য তামাক উৎপাদন করে দিতাম। বিদেশি সিগারেট কোম্পানি শুধু উচ্চমানের সিগারেট বানাত, তাই আমাদের তামাক পাতা দেশি কোম্পানির কাছে বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন আমরা জেনেছি বিদেশি কোম্পানী নিম্নমানের সিগারেট উৎপাদন করে বাজার দখল করে নিয়েছে, তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে শতভাগ দেশি কোম্পানিগুলো পেরে উঠছে না। আস্তে আস্তে বাজার হারাতে হারাতে দেশি কোম্পানিগুলো নিঃস্ব হয়ে গেছে।  

বর্তমানে ৩০টি শতভাগ দেশি মালিকানাধীন কোম্পানির মধ্যে ২৫টি কারখানাই কোনোমতে চলছে কিংবা বন্ধ আছে, উৎপাদন করতে পারে না। তারা আমাদের কাছ থেকে তামাক নেয় না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি খোঁজখবর নেন তাহলে জানবেন এদেশে আগে কত আর এখন কত তামাক উৎপাদন ও বিক্রি হচ্ছে। একমাত্র বড় বিদেশি কোম্পানি যে দাম দিচ্ছে তাই আমাদের মেনে নিতে হয়। তারা উচ্চমানের তামাক নিম্নমান গ্রেড করে আমাদের বিক্রি করতে বাধ্য করছে। এটা যেন নীল চাষের পুনরাবৃত্তি। তারা যাই বলে তা মেনে নিতে হচ্ছে।

কল্যাণ সমিতির নেতারা বলেন, দেশি কোম্পানিগুলো যদি ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে দেশের বেকারত্ব দূর হবে এবং আমরা ভবিষ্যতে সবসময় প্রতিবছর তাদের কাছে পণ্য বিক্রির আশা করতে পারি এবং আমরা উৎপাদন গিয়ে লাভবান হতে পারি। শতভাগ দেশি মলিকানাধীন কোম্পানি কখনো এদেশ ছেড়ে যাবে না। কিন্তু আমরা জানি অনেক বিদেশি কোম্পানি এ দেশে এসেছিল, তারা ব্যবসা করেছে, মুনাফা করেছে, তারপর তারা ব্যবসা গুটিয়ে চলে গেছে। তারা এদেশের জন্য কিছুই রাখেনি।  

আমাদের সুযোগ দিন, আমরা কাজ করে দুটো ভাত খেতে চাই, আমরা উৎপাদন করতে চাই। কেননা আমরা বংশ পরম্পরায় শুধু তামাক চাষ করতে শিখেছি। এটাই আমাদের শেষ সম্বল। আমাদের দেশের মাটি উর্বর, আমরা কৃষিকাজে ফিরে যেতে চাই। আমাদের কৃষিকাজে ফিরে যাওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আকুল আবেদন জানাই, আপনি শতভাগ দেশি মলিকানাধীন কোম্পানিগুলোকে বাঁচান। যাতে তারা উৎপাদনে ফিরে আসতে পারে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে। সুতরাং তারা সিগারেট উৎপাদন করে ব্যবসা-বণিজ্য করতে পারলে, তাদের বাজার ফিরে পেলেই তারা আমাদের কাছে আসবে এবং আমাদের উৎপাদিত তামাক কিনবে। যাতে আমরা এবং আমাদের পরিবার দুমুঠো ভাত খেতে পারি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০২১
এআর/টিসি  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।