ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

চলন্ত মোটরসাইকেল আরোহীকে রাম দার কোপ!

সাভার করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৩ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২১
চলন্ত মোটরসাইকেল আরোহীকে রাম দার কোপ! চলন্ত মোটরসাইকেল আরোহীকে রাম দার কোপ!

সাভার (ঢাকা): সাভারের আশুলিয়ায় পোশাক কারখনার ঝুট ব্যবসার দখল নিয়ে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মধ্যে কোন্দল লেগেই থাকে। আর এতে প্রায়ই সংর্ঘষ, হামলার ঘটনা ঘটে।

এবার রাম দা দিয়ে চলন্ত মোটরসাইকেল আরোহীকে কোপানোর ঘটনা ঘটেছে।  

মঙ্গলবার (০২ মার্চ) সকালে আশুলিয়ার সবচেয়ে ঘনবসতি এলাকা ভাদাইলে এ ঘটনা ঘটে।  

এই হামলার পেছনে স্থানীয় ইউপি সদস্য সাদেক ভুইয়া ছিলেন বলে দাবি ভুক্তভোগীদের। নিজের ছেলে মনির ভুইয়াকে ব্যবসা নিয়ে দিতেই সন্ত্রাসীদের দিয়ে অর্তকিত হামলা করান এই ইউপি সদস্য। যা স্পষ্টভাবে প্রমাণ দিচ্ছে প্রতিবেদকের হাতে আশা একটি সিসিটিভির ফুটেজ। সিসিটিভির ফুটেজটি দেখলে মনে হবে কেউ একজন বল করছে আর এক যুবক ব্যাটের মত রাম দা হাতে একবার মাটিতে ঠুকিয়ে ছক্কা মারছে। বিষয়টি রশিকতার মত মনে হলেও ভয়ানক।  

তিন মিনিটের সেই সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে, মোটরসাইকেলে করে বেশ কয়েকজন যুবলীগের কর্মী ওই এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনটি মোটরসাইকেল পেছনে থাকায় তাদের আক্রমণ করেন রাম দা হাতে এক যুবক। প্রথম মোটরসাইকেলটি যুবকের কাছাকাছি পৌঁছাতেই ক্রিকেট ব্যাটের মতো মাটিতে রাম দা একবার ঠুকিয়ে এলোপাথারি কোপানো শুরু করেন। পরে পেছনে থাকা আরেকটি মোটরসাইকেল ধাক্কা দিয়ে পড়ে যায়। তারপর রাম দা ও লাঠি হাতে আরও কয়েকজন যুবক তাদের ওপর হামলা করেন।  

আরও দেখা গেছে, মোটরসাইকেল আরোহীরা জীবন বাঁচাতে দৌঁড়ে পালিয়ে যান। মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যায় মোটরসাইকেলগুলো। সেই মোটরসাইকেলগুলোকে দফায় দফায় ভাঙচুর করা হয়। কয়েক সেকেন্ড পর ওই ফুটেজে ঘটনাস্থলে ইউপি সদস্য সাদেক ভুইয়াকে দেখা যায়। তিনি মোবাইল ফোনে কারও সঙ্গে কথা বলছেন ও দেখছেন গাড়িগুলোকে ঠিক ঠাক ভাঙা হয়েছে কিনা। এ সময় দুই যুবক তার সামনেই ভাঙার বিষয়টি নিশ্চিত করতে ইট, লাঠি দিয়ে গাড়িগুলোকে আবার ভাঙচুর করেন। একটু পরে সাদেক সামনের দিকে দৌঁড়ে যান।  

ঘটনার পরপরই ভাদাইল এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের কাছে জানা গেছে, কিছুদিন আগে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) এলাকার এক্সপিরিয়েন্স ক্লোথিং লিমিডেট নামে কারখানার সঙ্গে যুবলীগের আশুলিয়া থানার আহ্বায়ক কবির হোসেন সরকার ঝুটের ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু সেই কারখানার সঙ্গে যে চুক্তি করা হয়েছিলো তার মেয়াদ শেষ হয়। সেই সুবাদে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ধামসোনা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাদেক ভুইয়ার ছেলে মনির ভুইয়া নতুন করে একটি ডিট করার চেষ্ট করেন। এই বিষয়টি নিয়ে কবির ও সাদেকের ভেতর গত কয়েকদিন আগে বিরোধ দেখা দেয়।  

তাদের ভাষ্যমতে, মঙ্গলবার সকালে যুবলীগের লোকজন মোটরসাইকেল করে কারখানার দিকে যাচ্ছিলো। হঠাৎ কয়েকজন যুবক তাদের ওপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করেন। এছাড়া এ সময় কয়েক রাউন্ড গুলিরও শব্দ পাওয়া যায়। তার কিছুক্ষণ পরেই মসজিদের মাইকে ডাকাত ডাকাত বলে ডাক দিয়ে মানুষদের আসতে বলা হয় সেখানে।

এ ঘটনায় আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন কবির হোসেনের ম্যানেজার সেলিম। মামলায় ইউপি সদস্য সাদেকের ছেলে মনিরসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ১২ জনের নামে মামলা করা হয়েছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।   

সরজমিনে তখন দেখা গেছে, ঘটনার সময় আশেপাশের সব দোকান বন্ধ ছিলো। এলাকার সব মানুষ ঘটনাস্থলে এসে ভীর জমিয়েছেন। হামলায় ভাঙচুর হওয়া প্রায় ১৬টি মোটরসাইকেল সড়কের বিভিন্ন স্থানে পড়ে আছে। কিছুক্ষণ পরই পুলিশ এসে স্থানীয়দের কাছে তথ্য নেয় ও দুইটি পিকাপভ্যান এনে মোটসাইকেলগুলো সব একসঙ্গে তুলে থানায় নিয়ে যায়।  

বিষয়টি নিয়ে আশুলিয়া থানার যুবলীগের আহ্বায়ক কবির হোসেন সরকার বাংলানিউজকে বলেন, ইপিজেডের এক্সপেরিয়েন্স ফ্যাক্টরিতে আমার বৈধ ব্যবসা। কারখানা থেকে আমার শ্রমিককে বের করে দিয়েছে মনির। এ নিয়ে আমি থানায় একটি অভিযোগ করে রেখেছি। মঙ্গলবার সকালে আমার ম্যানেজার ৮-১০ জন নিয়ে ভাদাইলের রাস্তা দিয়ে কারখানায় যাচ্ছিলেন। পিছন দিক দিয়ে ওরা হামলা করছে। দুইজনকে কুপিয়ে আহত করেছে। তাদের অবস্থা খুব খারাপ। এছাড়া বেশ কয়েকটি গাড়িকে ভাঙচুর করা হয়েছে।  

কারখানার ডিটের মেয়াদ উত্তীর্ণের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমার ডিটের মেয়াদ ফেব্রুয়ারি ২৮ তারিখ পর্যন্ত ছিলো। আমি ১ মার্চ কারখানায় আবার ডিটের যাবতীয় কাজসহ পে সাবমিট করেছি। সেই অনুযায়ী ডিট আমারই। ডিটের ভেতরই উল্লেখ করা আছে ডিটের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর আবার জমা দিতে হবে। আমি সেভাবেই কাজ করেছি।  

তবে বিষয়টি অস্বীকার করে সম্পূর্ণ উল্টো কথা বলছেন ইউপি সদস্য সাদেক। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কবিরের লোকজন আমার বাড়িতে হামলা চালানোর উদ্দেশ্য আসেন। আমরা পরে মানুষ জনকে ডাক দেই। তারপর মারামারি হয়।  

এ বিষয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এমদাদুল হক। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি মোটরসাইকেলগুলো ঘটনার পরপর থানায় নিয়ে আসি। এ ঘটনায় মনির নামে একজন আটক আছেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০২১
এমআরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।