ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

প্রাইভেটকারে যাত্রী তুলে মুক্তিপণ দাবি, না দিলেই হত্যা!

সাভার করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০২১
প্রাইভেটকারে যাত্রী তুলে মুক্তিপণ দাবি, না দিলেই হত্যা! গ্রেফতার প্রাইভেটকার নিয়ে ছিনতাই চক্রের ৩ সদস্য

সাভার (ঢাকা): সাবেক সেনা সদস্য ফজলুল হককে (৪৫) হত্যা করে সাভারের বিরুলিয়ায় ফেলে যাওয়ার রহস্য উদঘাটন হয়েছে। এ ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

মানিকগঞ্জ থেকে একটি প্রাইভেকারে যাত্রী হিসেবে তাকে তুলে এনে মুক্তিপণ দাবি করে ছিনতাইকারীরা। মুক্তিপণ দিতে অস্বীকার করলে ফজলুল হককে প্রাইভেটকারেই হত্যা করে বিরুলিয়ার কমলাপুর রাস্তার পাশে হাত বাঁধা অবস্থায় ফেলে রেখে যায়।

রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রহস্য উদঘাটন ও গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) আবুল বাশার।

এর আগে শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে অভিযান চালিয়ে মিরপুরের পাইকপাড়া এলাকা থেকে দু’জন ও পাবনা থেকে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতাররা হলেন- পাবনার আমিনপুর থানার টাংবাড়ী গ্রামের আব্দুস সাত্তার শেখের ছেলে মাসুম শেখ (৩৫), খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার রায়ের মহল গ্রামের মৃত শেখ কিসলু রহমানের ছেলে জনি (৩২) ও পাবনার সুজানগর থানার উদয়পুর গ্রামের মৃত আশু মিয়ার ছেলে আবদুর রব মিয়া (৪২)।

নিহত সাবেক সেনা সদস্যে ফজলুল হকের বাড়ি মানিকগঞ্জের শিবালয় থানার কাতরাসীন শমীনারা গ্রামে। তিনি মতিঝিলে একটি ইন্সুরেন্স লিমিটেডের হেড অফিস সিকিউরিটি ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

ডিবি পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় সাবেক সেনা সদস্যকে মানকিগঞ্জের উথুলি বাসস্ট্যান্ড থেকে মতিঝিলে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে যাত্রী হিসেবে প্রাইভেটকারে ওঠায়। কিছুক্ষণ পরে ভুক্তভোগী ছিনতাইয়ের কবলে পড়েছেন বুঝতে পেয়ে চিৎকারের চেষ্টা করলে তাকে হাত-পা বেঁধে ফেলে ও চোখে কালো চশমা পড়িয়ে দেয়। যার ভেতরের দিকে কালো স্কচটেপ লাগানো ছিল। ভুক্তভোগী ধস্তাধস্তী করলে তাকে মারধর করে মুখের ভেতরে সাদা টিস্যু ঢুকিয়ে দেয়। পরবর্তীকালে ভুক্তভোগীর গলায় থাকা মাফলার দিয়েই তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। পরে তাকে সাভারের কমলাপুর এলাকায় রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে মিরপুরের দিকে চলে যায় চক্রটি। স্থানীয়দের খবরের ভিত্তিতে ২৪ জানুয়ারি মরদেহটি উদ্ধার করে সাভার থানা পুলিশ।

এ ঘটনায় নিহতের স্বজনেরা ২৫ জানুয়ারি সাভার মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করলে তদন্তে নামে ঢাকা জেলা ডিবি পুলিশ। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাসুম ও জনিকে মিরপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের তথ্য মতে, রব মিয়াকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পাবনা থেকে গ্রেফতার করা হয়। সে সময় তাদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেটকারও জব্দ করা হয়। পরে গ্রেফতাদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা সাবেক সেনা সদস্য ফজলুল হককে হত্যার কথা স্বীকার করেন।  

গ্রেফতাদের রোববার আদালতে নেওয়া হলে তারা তিন জনই হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে এমন তথ্য ফাস করেন তারা।

এ ব্যাপারে ঢাকা উত্তর ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আশরাফুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, আটকরা র্দীঘদিন যাবত প্রাইভেটকারে যাত্রী উঠিয়ে তাদের টাকা, মোবাইলসহ মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নিয়ে বিকাশ কিংবা নগদে মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায় করতেন। মুক্তিপণ পেলে ভুক্তভোগীকে নির্জন স্থানে ফেলে গাড়ি চালিয়ে পালিয়ে যেতেন। আর না পেলে তাকে হত্যা করে নির্জন কোনো স্থানে ফেলে দেওয়া হতো।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২১
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।