ঢাকা: চালককে খুন করে গাড়ি ছিনতাইয়ের ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। গত মঙ্গলবার গভীর রাতেই এ রকম একটি ঘটনা ঘটে মিরপুরের শেওড়াপাড়ায়।
২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত গত ২০ মাসে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৮ শতাধিক গাড়ি চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ সময় অন্তত ৫৭ জন চালক নৃশংসভাবে খুন হন। এর মধ্যে ৫৯৭টি গাড়ি উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় ৫৪১ জনকে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গাড়ি চুরি প্রতিরোধ সেল ও হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি দপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গাড়ি ছিনতাই প্রতিরোধ দলের প্রধান ঢাকা মহানগর ডিবি’র সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মোখলেছুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘চিহ্নিত গাড়ি চোর ও ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠালেও তারা দ্রুত জামিনে বেরিয়ে আবার একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। ’
সম্প্রতি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া এসব গাড়ি চোর ও ছিনতাইকারীরা গাড়ি চুরি ও চালক হত্যার ব্যাপারে নানা রোমহর্ষক বর্ণনা দেয়।
তারা গোয়েন্দা পুলিশকে জানায়, গাড়ি চোর ও ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা যাত্রীবেশে সিএনজি অটোরিকশা, ট্যাক্সিক্যাব, রেন্ট-এ-কারের মাইক্রো বা প্রাইভেটকার ভাড়া করে গন্তব্যে রওয়ানা দেয়।
চক্রের সদস্যদের মধ্যে যে গাড়ি চালাতে পারে তাকে চালকের পাশের আসনে বসিয়ে বাকিরা বসেন গাড়ির পেছনে।
পথে কোনো নির্জন স্থানে পৌঁছতেই চলন্ত অবস্থাতেই পেছনের আসনে বসা দুবর্ৃৃত্তরা আচমকা চালকের ওপর চড়াও হয়।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গামছা বা বৈদ্যুতিক তারের সাহায্যে তারা চালকের গলায় ফাঁস লাগায়, অন্যরা ভারী কিছু দিয়ে চালকের মাথায় আঘাত করে। এ সময় চালকের পাশে থাকা দুর্বৃত্ত দ্রুত গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেয়।
এরপর চালকের মৃত্যু নিশ্চিত হলে তাকে সুবিধামতো যে কোনো স্থানে ফেলে দিয়ে গাড়ি নিয়ে চম্পট দেয় দুর্বৃত্তরা।
গত ১০ মার্চ সন্ধ্যায় এ রকমই চার গাড়ি চোর রাজধানীর বাড্ডা থেকে মাইক্রো ভাড়া করে কুমিল্লার পথে রওয়ানা হয়। রাত আড়াইটায় চৌদ্দগ্রাম পৌঁছলে চালক ইলিয়াসকে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ রাস্তার পাশে ফেলে মাইক্রোবাস নিয়ে পালিয়ে যায় তারা।
প্রায় একইভাবে যাত্রাবাড়ীর একটি রেন্ট-এ কার থেকে মাইক্রোবাস ভাড়া করে দুর্বৃত্তরা। এরপর গাজীপুরের বর্মী সেতুর কাছে চালক লিটন মোল্লাকে জবাই করে তারা মাইক্রোবাসটি নিয়ে লাপাত্তা হয়।
গত ১৭ জানুয়ারি মগবাজার রেন্ট-এ-কারের চালক দিদারকে খুন করে প্রাইভেট কার ছিনিয়ে নিয়ে যায় তিন যুবক। খুনের পর তারা লাশটি বস্তায় ভরে পল্লবীতে ফেলে দেয়। গ্রেপ্তার হওয়ার পর ওই তিন যুবক পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দেয়।
গত ২ জুন রাতে টাঙ্গাইল-ভূঞাপুর সড়কে চালক ফরিদ মিয়া (৩০) কে খুন করে তার সিএনজি অটোরিকশা ছিনতাই করে দুর্বৃত্তরা।
চলতি বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসের মধ্যে শুধু টাঙ্গাইল জেলাতেই ৬ জন চালক খুন হন। এতে জেলার অটোরিকশা মালিক ও চালক সমিতির নেতারা বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
শুধু তাই নয়, এসব ঘটনায় রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে রেন্ট-এ কারের চালকরা।
মুক্তাঙ্গন রেন্ট-এ-কার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনসুর আলম বলেন, ‘পুলিশ ডিবি এত অভিযান-এত গ্রেপ্তার আমাদের কোনো কাজে আসছে না। গাড়ি চুরি, চালক হত্যা চলছেই। এ পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত না হয়ে উপায় কী?’
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১০