ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সাক্ষাৎকার

ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করা সরকারের বড় অর্জন

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২১
ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করা সরকারের বড় অর্জন

ঢাকা: আওয়ামী লীগ সরকার গত ১২ বছরে দেশের মানুষকে ‘নেতিবাচক’ চিন্তা থেকে ‘ইতিবাচক’ চিন্তার মধ্যে আনতে পেরেছে। এটা এই সরকারের বড় অর্জন বলে মনে করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

তিনি বলেন, কোনো কিছু করার আগেই চিন্তা, হবে কি হবে না। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে আমরা দেখাতে পেরেছি, আমরা পারি। আমরা পারি এটা প্রমাণ হয়েছে।

বাংলানিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি সরকারের উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। পাশাপাশি উন্নয়ন-অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করতে একটি গোষ্ঠী সক্রিয় বলেও তিনি দাবি করেন। তবে শেখ হাসিনা যখন নেতৃত্বে আছেন তখন কোনো বাধাই প্রভাব ফেলতে পারবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সরকারের অর্জন তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় অর্জন হয়েছে আমরা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তার অবস্থা থেকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে নিয়ে আসতে পেরেছি। এটা একটা বড় অর্জন। দেশে সব কিছুতে একটা নেগেটিভ চিন্তা, দৃষ্টিভঙ্গি ছিলো। যে কোনো কিছুতেই আগে চিন্তা ছিলো হবে কি হবে না। সেখান থেকে আমরা দেশকে বের করে আনতে পেরেছি। আমরা যে পারি গত ১২ বছরে সেটা দেখানো হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, শীর্ষ পর্যায়ের যারা যুদ্ধাপরাধী ছিলো তাদের বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। আরও যারা যুদ্ধাপরাধী আছে তাদের বিচারও অব্যাহত আছে। অনেকেই ভেবেছিলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সম্ভব না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটা পেরেছেন, তিনি বিচার করে দেখিয়ে দিয়েছেন। দেশের মানুষের মধ্যে একটা দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়েছে- যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, দেশে আইনের শাসন আছে।  

তিনি বলেন, এ দেশে এক সময় বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভর করে উন্নয়নের চিন্তা-ভাবনা করা হতো। নিজের টাকায় পদ্মাসেতু করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখিয়েছেন উই ক্যান ডু (আমরা পারি)। পদ্মা সেতু শুধু ইতিহাস না এটা একটা সাহসী দৃষ্টিভঙ্গি। করোনায় সারা বিশ্বের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অনেকেই হিমশিম খাচ্ছে। শেখ হাসিনার সরকার সাহসীকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। সরকারের সাহসী পদক্ষেপের ফলে মানুষ সাহসী হয়ে উঠছে। এতে প্রমাণ হয় যে আমরা পারি।

২০০৮ সালের নির্বাচনের ইশতেহারে ‘দিন বদলের সনদ-ভিশন-২০২১’ ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এই দীর্ঘ সময়ে সেই প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে খালিদ মাহমুদ বলেন, জন্মলগ্ন থেকেই জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি আওয়ামী লীগ বাস্তবায়ন করে। ভোটের রাজনীতির জন্য নয়, আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতি দেয় উন্নয়নের জন্য, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য।  

তিনি বলেন, আমরা বলেছিলাম ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়া হবে, সেটা দিয়েছি। শিক্ষা এখন উন্মুক্ত, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। হাজার হাজার স্কুল সরকারিকরণ করা হয়েছে। এক শ’র বেশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ করা হয়েছে। আমাদের সরকার প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছে, করে যাচ্ছে। সরকার দারিদ্র্য কমিয়ে এনেছে। রিজার্ভ ৪৩ বিলিয়ন ডলার। মাথাপিছু আয় বেড়ে ২০২৪ ডলারে দাঁড়িয়েছে। সারা দেশ রেল যোগাযোগ, আকাশ যোগাযোগের আওতায় এসেছে। নৌ যোগাযোগের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। পায়রা বন্দর, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের কাজ চলছে। চট্টগ্রাম, মোংলা বন্দরকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়েছে। এখন শীতের সবজি গ্রীষ্মেও পাওয়া যাচ্ছে। খেলাধুলা জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে পৌছেছে। সংস্কৃতির চর্চা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরে এসেছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভালোভাবে জানতে পারছে।  

২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সারা বিশ্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে ভাবমুর্তি তৈরি হয়েছে তা আমাদের জন্য গর্বের, অহঙ্কারের। ৯৮ ভাগ নিজের অর্থ দিয়ে আমরা বাজেট দিতে পারছি। একটা আত্মগৌরব তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসীকতা, মেধা, প্রজ্ঞা বিশ্বে আজ অনুকরণীয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ১২ বছরে দেশকে ৫০ বছরের অহঙ্কারের জায়গায় নিয়ে গেছেন, যে অহঙ্কার নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো।

সম্প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা এবং মৌলবাদী গোষ্ঠীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে খালিদ মাহমুদ বলেন, বিছিন্ন কিছু ঘটনা সরকারের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। এগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে কি না সেটা দেখতে হবে। এগুলো পুরোপুরিভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে। তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এটা নতুন কিছু নয়। জিয়া, খালেদা জিয়াও বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলো। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক, এটাকে তারা আলাদা করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষের হৃদয়ে আছে। গুটিকয়েক ঠকবাজ বঙ্গবন্ধুকে মানুষের হৃদয় থেকে মুছে ফেলতে পারবে না।

সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে কোনো বাধা আছে কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো একটা দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এতে জাতীয় আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ, বাধা আসতে পারে। তবে নেতৃত্বে যখন শেখ হাসিনা আছেন তখন আর কোনো বাধাই প্রভাব ফেলতে পারবে বলে মনে করি না। তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ৩৯ বছর আছেন, এর মধ্যে ৪ বার প্রধানমন্ত্রী, ৩ বার বিরোধী দলের নেতা। তিনি অনেক রাজনৈতিক উন্থান পতন পার করেছেন। এতো অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নেতৃত্ব এখন পৃথিবীতে এক জনই। দেশ বিরোধী একটা গোষ্ঠী তো আছইে তারা দেশকে পেছনে ফেলে দেওয়ার জন্য নেতিবাচক তৎপরতা চালায়। এ জন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের কর্মকাণ্ডের সুযোগ যাতে কেউ না নিতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ২১২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২১
এসকে/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।