ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অধিগ্রহণকৃত গোয়াল ঘরের মূল্য ১৯ লাখ টাকা!

সুমন কুমার রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২১
অধিগ্রহণকৃত গোয়াল ঘরের মূল্য ১৯ লাখ টাকা!

টাঙ্গাইল: জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়কের উন্নয়নমূলক কাজে ভূমি অধিগ্রহণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অধিগ্রহণ করা জমির মধ্যে একটি গোয়ালঘর রয়েছে, সেটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ লাখ টাকা।

 

সাসেক সংযোগ সড়ক প্রকল্প ব্যবস্থাপক-৩ কার্যালয় থেকে চিঠির মাধ্যমে ভূমি অধিগ্রহণের জায়গায় ভবন নির্মাণ না করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই নির্দেশ অমান্য করে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার নগর জলফৈ ও তারটিয়া এলাকায় ভবন নির্মাণ করে দালালের মাধ্যমে সেই অবৈধ স্থাপনার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।  

তদন্ত সাপেক্ষে ভূমি অধিগ্রহণের সেই টাকা পরিশোধ করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।

জানা যায়, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা সড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ কাজ শুরু করে সরকার। তার পর থেকে নগর জলফৈ ও তারটিয়া এলাকার একটি চক্র তাদের পতিত জমিতে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নামেমাত্র টিনের ঘর, ছাউনি ও ভবন নির্মাণ করে। পরবর্তীকালে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা সড়কে অধিগ্রহণকৃত জমিতে অবৈধ স্থাপনা ও নতুন স্থাপনা না করার জন্য তারটিয়া এলাকার মৃত আহসান আলী খানের ছেলে মো. দাউদ খান দিপু, মৃত আব্দুল মজিদ খানের ছেলে মো. তারিকুল ইসলাম খান, মৃত মেছের আলী খানের ছেলে মো. আজাহার আলী খান, মৃত নেধু খানের ছেলে মো. মোকাদ্দেছ খান, মৃত আব্দুর রশিদ খানের ছেলে মো. আইয়ুব খান, মৃত খন্দকার মাইনুদ্দিনের ছেলে খন্দকার রবিউল ইসলাম, মৃত আব্দুল রশিদ খানের ছেলে মো. কাইয়ুম খান ও মো. আতিকুর রহমান খান, নগর জলফৈ এলাকার মৃত হেলাল উদ্দিনের ছেলে মো. সেলিম, মো. ইউসুফের ছেলে মো. মোমেন, মৃত সরবেশ আলী খানের ছেলে মো. আরফান খান, মো. আফজালকে চিঠি দেওয়া হয়।

চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে, ডিসেম্বর ২০১৯ এর মধ্যে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করার জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের তাগিদ রয়েছে। এই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সমাপ্ত করতে না পারলে ভবিষ্যতে এই প্রকল্পসহ অন্য প্রকল্পে উন্নয়ন সহযোগীদের বিদেশি অর্থায়নে বিরূপ প্রভাব পরার আশঙ্কা রয়েছে। এ বিষয় বিবেচনা করে সরকার এই প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ।  

অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, সওজ প্রকল্প অধিগ্রহণভুক্ত জায়গায় আপনি ইমারত/ভবন নির্মাণ করছেন। হাইওয়ে এক্ট-১৯২৫ ও সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ অনুসারে মহাসড়কের পাশে রাইট অব ওয়ে থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত এলাকায় কোনো স্থাপনা তৈরি করা যাবে না। এইখানে স্থাপনা নির্মাণের শুরু থেকে আপনাকে বিরত থাকার জন্য বারংবার অনুরোধ করা হলেও আপনি তা আমলে নিচ্ছেন না। এই অংশে নির্মিত অবৈধ স্থাপনার জন্য আপনি কোনো ক্ষতিপূরণ পাবেন না।

এ রকম অনিয়ম করার কারণে তারটিয়া এলাকায় দীর্ঘদিন অধিগ্রহণের কাজ বন্ধ ছিলো। পরে দালাল স্বপনের মাধ্যমে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই অধিগ্রহণ করা হয়।  

সেখানে মো. দাউদ খানের অবকাঠামোর ধার্যকৃত মূল্য ১ কোটি ৯৫ লাখ ৬৯ হাজার ৩৪৮ টাকা, মো. আজাহার আলী খানের ১৯ লাখ ৭ হাজার ৯৯০ টাকা, মোকাদ্দেছ আলী খানের ৯ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৬ টাকা, খন্দকার রবিউল আলমের ১৮ লাখ ৫৪ হাজার ৬৪০ টাকা, মো. আইয়ুব খানের ৩৫ লাখ ১২ হাজার ৭৪২ টাকা, মো. কাইয়ুম খানের ১৯ লাখ ৬৭ হাজার ৯৯৮ টাকা, মো. সেলিমের অবকাঠামোর ধার্যকৃত মূল্য ১ কোটি ৫৬ লাখ ২৭ হাজার ১৩৮ টাকা।

তারটিয়া এলাকার এক ব্যক্তি বলেন, যে ঘরের মূল্য ১৯ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাস্তবে সেই ঘরের দাম ১৯ হাজার টাকাও হবে না। ঘরের বেড়া না থাকলেও দালালের মাধ্যমে ১৯ লাখ টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। দালাল স্বপনের মাধ্যমে তারটিয়া নগর জলফৈ এলাকায় অনেক অনিয়ম দুর্নীতি হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে টাকা হস্তান্তরের দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত দালাল স্বপনের সঙ্গে জমির মালিক পরিচয়ে কথা বললে তিনি জানান, আপনার আবেদনের নম্বর আমাকে জানিয়েন। আপনার জমি এবং অবকাঠামোর অতিরিক্ত মূল্য পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।

তবে সাংবাদিক পরিচয়ে তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমাকে তারা (জমির মালিকরা) ডেকে নিয়ে গিয়েছিলো। তাদের জমিতে স্থাপনা তৈরি করেছিলো, বলেছিলো নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত ওই জমিতে তারা যা ইচ্ছে তাই করতে পারবে। এর পর আমি কিছু জানি না। ’

এ বিষয়ে সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্পের উপ-প্রকল্প ব্যবস্থাপক-৫ (উঃবিঃপ্রঃঅঃদাঃ) সওজ মৃন্ময় সাহা বাংলানিউজকে জানান, ‘ভূমির ক্ষতিপূরণের বিষয়টা জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে দেখা হয়। আমরা সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করি। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর সড়কের সীমানায় যদি কোনো অবৈধ স্থাপনা থাকে সেগুলো উচ্ছেদ করে হস্তান্তর করা হবে। আগে ছিলো চার লেন। এখন হচ্ছে ছয় লেন। এক জমি দ্বিতীয়বার অধিগ্রহণের প্রয়োজন নেই।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গণি বাংলানিউজকে জানান, সাসেকের মাধ্যমে সবকিছু পর্যালোচনা করে আমরা টাকাগুলো দিয়ে থাকি। তবে এ ধরনের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হলে তাদের টাকা দেওয়া হবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২১
আরএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।