ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পাকা ঘরে থাকার স্বপ্ন অবশেষে পূরণ হতে যাচ্ছে 

শরিফুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২১
পাকা ঘরে থাকার স্বপ্ন অবশেষে পূরণ হতে যাচ্ছে  ...

ঠাকুরগাঁও: কখনো ভাবিনি পাকা ঘরে থাকতে পারবো, তবে স্বপ্ন দেখতাম আর মাঝে মধ্যে ভাবতাম আদৌ কি পারব পাকা ঘর দিতে। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে স্বপ্ন দেখতাম পাকা ঘর দেব, কিন্তু মাঝে মাঝে থেমে যায় সে স্বপ্ন দেখা, কারণ ঘর দিতে হলে জমির প্রয়োজন সেটাই তো আমার নেই।

 

তাই তো স্বপ্ন বারবার ভেঙে যেতো। হঠাৎ শুনতে পেলাম স্বপ্ন পূরণের কথা প্রধানমন্ত্রী ঘর এবং জমি দেবেন গৃহহীন ও ভূমিহীনদের।

কথাগুলো বলছিলেন সরকারি খাস জমিতে বসবাস করা গৃহহীন হাফিজ উদ্দিন।  

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড়দেশ্বরী এলাকার হাফিজ উদ্দিন বলেন, আমি সদর উপজেলার রাজাগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা, সরকারি খাস জমিতে বউ বাচ্চা নিয়ে ঘর বেঁধে আছি। খুব কষ্টে জীবনযাপন ও সংসার চালাই। সরকারি খাস জমিতে থাকলেও সুখে ছিলাম। কিন্তু মাঝে মাঝে প্রশাসন বিভিন্নভাবে আমাদের ঘর সরানোর কথা বলতো। সেই সময় ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে থাকার স্বপ্নটিও ভেঙে যেতো।
 
এভাবে দিন কাটাতাম বছরের পর বছর। এদিকে স্বপ্ন দেখতাম কখনো কি পারব পরিবার নিয়ে পাকা ঘরে থাকতে। হঠাৎ যখন শুনলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জমিসহ ঘর দিচ্ছে ঠিক তখনই মনে হলো আমাদের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে।

ঠাকুরগাঁওয়ে প্রায় ৮শ গৃহহীনদের জন্য নির্মিত হচ্ছে স্বপ্নের নীড়। মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের এসব ঘর উপহার দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড়দেশ্বরী এলাকায় ২.৩৪ একর খাস জমি দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে ছিল। জেলা প্রশাসন এটি উদ্ধার করে সেখানে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ঘর নির্মাণকাজ শুরু করে। এখানে নির্মিত হচ্ছে ৮৭টি ঘর। এসব ঘরে স্থানীয় গৃহহীন ও ভূমিহীনদের পুনর্বাসন করা হবে যারা এতদিন অন্যের জমিতে বা হাটের জমিতে বসবাস করতেন।  

মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় এসব ঘর নির্মিত হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ের ঘরগুলো হস্তান্তর উপলক্ষে জোরে সোরে চলছে ঘর নির্মাণ মাটি ভরাট, টিন লাগানো ও রঙের কাজ। দুই কক্ষবিশিষ্ট প্রতিটি সেমি পাকা ঘর নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। গৃহহীন পরিবারের জন্য থাকছে টয়লেট, রান্নাঘর, নলকূপসহ দুই কক্ষবিশিষ্ট ঘর।

ওই এলাকার শরৎ আলী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের স্বপ্ন পূরণ করতে যাচ্ছে। আমরা কখনো ঘরবাড়ি জমি-জায়গা কিনতে পারতাম না, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের কথা ভেবে রান্না ঘরসহ দুইটি করে পাকা ঘর দিচ্ছেন। আগে আমরা সরকারি খাস জমিতে থাকতাম। প্রশাসন বিভিন্নভাবে আমাদের ঘর সরানোর কথা বলতো। সরকারি খাস জমিতে শান্তি মত বসবাস করতে পারতাম না। অবশেষে ঘর ও জমি পাবো। এখন আর কেউ বলবে না ঘর সরানোর কথা। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের স্বপ্ন পূরণ করলেন জমি ও ঘর দিয়ে।
তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমাদের সবার পক্ষ থেকে অনেক অনেক দোয়া রইল।

ঠাকুরগাঁও জেলার ৫ উপজেলায় ৭৮৯টি ঘরের নির্মাণকাজ এখন শেষ পর্যায়ে। সদর উপজেলায় নির্মিত হচ্ছে ৩৩৩টি ঘর, পীরগঞ্জ উপজেলায় ৮৫টি, রানীশংকৈল উপজেলায় ৭০টি, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় ৬৫টি এবং হরিপুর উপজেলায় ২৩৬টি।

আগামী ২৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জেলার ৭৯০টি ঘর হস্তান্তর করবেন।

সদর উপজেলার ঢোলারহাট ইউপি চেয়ারম্যান সীমান্ত কুমার বর্মন নির্মল জানান, যেসব ভূমিহীনকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে তারা কোনোদিন এমন ঘর নির্মাণ করতে পারতেন না। সরকার তাদের পাকা ঘর নির্মাণ করে দেওয়ায় পুনর্বাসিত পরিবারগুলো সরকারের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, সদর উপজেলায় ৩৩৩টি ঘরের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ডিজাইন অনুযায়ী সবগুলো ঘর নির্মিত হয়েছে। জেলা প্রশাসক মহোদয় প্রথম থেকে কাজের মান তদারকি করে আসছেন। ইতোমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সহযোগিতায় সুবিধাভোগী নির্বাচন করা হয়েছে এবং প্রত্যেক পরিবারকে ২ শতক জমি এবং তার উপর নির্মিত ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হবে।

জেলা প্রশাসক ড. কেএম কামরুজ্জামান সেলিম জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের ঘর দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারই অংশ হিসেবে ঠাকুরগাঁও জেলার ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষদের শনাক্ত করা হয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলায় প্রায় ৭ হাজার ৮শ জন গৃহহীন রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে এ জেলায় ৭৯০ জনকে পুনর্বাসনে গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে। আগামী ২৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব ঘর হস্তান্তর করবেন আনুষ্ঠানিকভাবে। ঠাকুরগাঁওয়ে যেসব ঘর নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলোও একইদিন উপকারভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করা হবে। উদ্বোধনের পরপরই ভূমির দলিলপত্র কবুলিয়ত ও নামজারি ফরমসহ সমস্ত কিছু হস্তান্তর করা হবে এবং তারা বসবাসের পূর্ণ অধিকার পেয়ে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।