ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

লুট করার পর আপনকে চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে দেয় ডাকাতরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২১
লুট করার পর আপনকে চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে দেয় ডাকাতরা গ্রেফতার ছয় ডাকাত।

ঢাকা: ‘আপন মিয়া একজন সবজি বিক্রেতা। তিনি থাকতেন রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায়।

প্রতিদিন ভোরে তিনি কারওয়ানবাজারে গিয়ে সবজি সংগ্রহ করে নিজ এলাকায় এনে বিক্রি করতেন। প্রতিদিনের মতো গত ২৮ ডিসেম্বর সকালে তিনি ও তার সহযোগী নজরুল ইসলাম বাসা থেকে বের হয়ে বিমানবন্দর কাওলা ফুটওভারব্রিজের নিচে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এমন সময় একটি পিকআপভ্যান এসে তাদের সামনে দাঁড়ায়। তারা দুইজনই কারওয়ানবাজার যেতে ওই পিকআপভ্যানে ওঠেন। কিছুদূর যাওয়ার পর ডাকাতরা আপন ও নজরুলকে ছুরিকাঘাত করে সঙ্গে থাকা টাকা-মোবাইলফোন ছিনিয়ে নেয়। পরে তাদের চলন্ত পিকআপভ্যান থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই আপনের মৃত্যু হয়।

এই ঘটনায় ৬ জানুয়ারি নিহত আপনের পরিবার বিমানবন্দর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশের পাশাপাশি ওই মামলাটির ছায়াতদন্ত করতে থাকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিএমপি গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ। তদন্তে ঘটনাস্থল ও তার আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ উদ্ধার ও বিশ্লেষণ করে মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) দিনগত রাত ৯টার দিকে ঢাকার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকা অভিযান চালিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত ৬ আসামিকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের একটি টিম।

গ্রেফতার ছয় ডাকাত হলেন-সজল, মুসা, বাচ্চু, সজীব, মুন্না ও সিদ্দিক। এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত পিকআপভ্যান, দেশীয় অস্ত্র ছুরি, লুণ্ঠিত সাত হাজার টাকা ও একটি মোবাইলফোন উদ্ধার করা হয়’।

বুধবার (২০ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মিন্টোরোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

ডিবি পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘গ্রেফতার ৬ জনই ডাকাত। তারা পিকআপভ্যান ভাড়া নিয়ে রাত থেকে ভোর পর্যন্ত রাজধানীতে ডাকাতি করে আসছিলো। চক্রটি সপ্তাহের অধিকাংশ দিনে ডাকাতির জন্য বের হতো’।

তিনি বলেন, ‘আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, সাধারণত তারা রাত ১১টার পর থেকে একটি ভাড়া করা পিকআপভ্যান নিয়ে ডাকাতির উদ্দেশ্যে বের হয়। চক্রটি আব্দুল্লাহপুর থেকে কাওয়ানবাজার, রামপুরা থেকে যাত্রাবাড়ী, যাত্রাবাড়ী থেকে ভুলতা গাউছিয়া এলাকায় তাদের ডাকাতি কার্যক্রম চালায়। পিকআপের সামনের সিটে তিনজন বসেন এবং বাকিরা যাত্রী বেশে পিকআপের পেছনে বসে থাকেন। ভোরে তারা মূলত সবজি ও ফল ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে পিকআপে উঠান এরপর লুটপাট শেষে তারা ভুক্তভোগীদের ফেলে দেন’।

এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘আসামিরা জানিয়েছেন, আপনের কাছ থেকে টাকা ও মোবাইলফোন লুট করেছিল। ওইদিন আপনকে পিকআপরে তোলার পর মূসা ও রফিক তার বুকে ছুরি ধরেন। পিকআপের সামনে বসা সজল পেছনে চলে আসেন এবং আপনের কাছ থেকে টাকা ও মোবাইলফোন ছিনিয়ে নেন। পরে ছুরিকাঘাত করে আপন ও নজরুলকে ধাক্কা দিয়ে পিকআপ থেকে ফেলে দেয়’।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, ‘রাতে বিভিন্ন যানবাহন কম চলাচল করে। তাই এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে তারা চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটায়। এরজন্য পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের নিয়মিত টহল বাড়ানো হয়েছে’।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২১
এসজেএ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।