ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

পার্বত্য শান্তিচুক্তির যতো প্রাপ্তি-বেদনা

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০২০
পার্বত্য শান্তিচুক্তির যতো প্রাপ্তি-বেদনা

রাঙামাটি: তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার পাহাড়ে হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাথে ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর চুক্তি করে; সেই চুক্তি পাহাড়ের ইতিহাসে ‘শান্তিচুক্তি বা পার্বত্য চুক্তি’ নামে অভিহিত।

বুধবার (২ ডিসেম্বর) শান্তি চুক্তির ২৩ বছর পূর্তি।

পার্বত্য চুক্তি পাহাড়ের উন্নয়ন, সংঘাত বন্ধে কতটুকু ভূমিকা রেখেছে এ নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন বিজ্ঞজনরা। সরকার দলের প্রতিনিধিরা চুক্তির পক্ষে বললেও বিপরীতমুখীরা বলছেন ভিন্ন কথা।

সশস্ত্র কার্যক্রম চলমান:
চুক্তি পরবর্তী পাহাড়ে চারটি সশস্ত্র গ্রুপ সক্রিয়। সংগঠনগুলোর মূল লক্ষ্য নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে এলাকা দখল নিয়ে চাঁদাবাজি করা। দলগুলোর পক্ষ থেকে দাবি- সন্তু গ্রুপের পিসিজেএসএসের ২০০ নেতা-কর্মী, ইউপিডিএফের ৩০০ নেতা-কর্মী, ২০১০ সালে আত্মপ্রকাশ করা পিসিজেএসএস এমএন লারমার (সংস্কার) ৬৬ জন নেতা-কর্মী এবং ২০১৮ সালে আত্মপ্রকাশ করা ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকের সাত নেতা-কর্মী তাদের প্রতিপক্ষের গুলিতে মারা গেছে। এছাড়াও আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর দ্বন্দ্বে প্রায় ৩০ জন সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।

সশস্ত্র সংগঠনের নেতারা যা বলছেন:
পিসিজেএসএস’র (এমএন লারমা) আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা জানান, ‘পিসিজেএসএসের মূল দলের সাথে তাদের আদর্শিক মত বিরোধ থাকায় জুম্ম জাতির প্রয়াত নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার আদর্শকে বাস্তবায়ন করতে তারা পিসিজেএসএস এমএন লারমা গ্রুপের সৃষ্টি করেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, চাঁদাবাজি নয়, সংগঠন চালাতে আর্থিক সহযোগিতা নেওয়া হয়। কারণ অর্থ ছাড়া সংগঠন চালানো সম্ভব নয়।

ইউপিডিএফ’র (প্রসিত) খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা বলেন, ১৯৯৭ সাল থেকে জুম্ম জনগোষ্ঠির অধিকার আদায়ে কাজ করছি। অধিকার আদায় করতে গিয়ে আমরা অসংখ্য নেতা-কর্মী হারিয়েছি। এসব হত্যাকাণ্ডের জন্য শাসকগোষ্ঠীর লালিত-পালিত সন্ত্রাসীরা অনেকাংশে দায়ী।

ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সভাপতি শ্যামল চাকমা ওরফে জলাইয়া বলেন, জুম্ম জাতির অধিকার আদায়ের আদর্শিক জায়গা থেকে সরে ইউপিডিএফ (প্রসিত গ্রুপ) ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে চাঁদা আদায় করছে। জুম্ম জাতি সত্তার অধিকার আদায়ে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক সৃষ্টি করা হয়।

সুশীল সমাজের বিজ্ঞরা যা বলছেন:
রাঙামাটি শহরের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং সাবেক ছাত্রনেতা জাহাঙ্গীর আলম মুন্না বলেন, বর্তমান সরকার জনবান্ধব সরকার। এই সরকার ১৯৯৭ সালে ক্ষমতায় থাকাকালে পাহাড়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাত বন্ধের জন্য জনসংহতি সমিতির সাথে শান্তিচুক্তি করে। কিন্তু চুক্তির দীর্ঘ ২৩ বছর অতিক্রম করলেও পাহাড়ে এখনও রক্তক্ষয়ী সংঘাত বন্ধ হয়নি।

তিনি আরও বলেন, যারা অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে তারা সন্ত্রাস। পাহাড়ের উন্নয়নকে গতিশীল করতে হলে এইসব সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।

ক্ষমতাশীনরা যা বলছেন:
রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা বলেন, শান্তিচুক্তির আগে পাহাড়ে তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার শান্তিচুক্তির মাধ্যমে অন্ধকার পাহাড়ে আলোর প্রদীপ জ্বালিয়েছে। রাঙামাটিতে মেডিকেল কলেজ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন এবং সীমান্ত সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। দুর্গম পাহাড়ে বিদ্যুতের আলো, ইন্টারনেট সেবা পৌঁছনো হয়েছে।

চেয়ারম্যান আরও বলেন, জেলা পরিষদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সকল সম্প্রদায়ের লোকজন প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাচ্ছে। এটাই আওয়ামীলীগ সরকারের বড় চমক।

রাঙামাটির সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দীপংকর তালুকদার বলেন, আমি চুক্তির কোন নেগেটিভ দিক দেখিনা। জননেত্রী শেখ হাসিনা শান্তিচুক্তি করে পৃথিবীর বুকে নতুন ইতিহাস রচনা করেছেন।

এছাড়া চুক্তি নিয়ে পাহাড়ের কিছু গোষ্ঠি জনগণকে ভুল বোঝাতে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তারা যেমন নিজের ভালো কিছু বোঝে না তেমনি পাহাড়ের মানুষদের জন্য কিছুই করতে পারে না। তারা পাহাড়ে কিভাবে হত্যা-গুমের রাজনীতি করে নিজেদের স্বার্থ আদায় করবে তা নিয়ে ব্যস্ত আছেন বলেও উল্লেখ করেন এই সংসদ সদস্য।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০২০
এইচএমএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।