ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

১১ নদীর পানি বিপদসীমার উপরে

বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

বিপ্লব কুমার পাল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১০
বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

ঢাকা: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং টানা বর্ষণে দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ১১টি নদীর পানি।



বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, কুড়িগ্রাম, মাদারীপুর, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে। পানি বাড়ছে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা ও মেঘনা নদীর পানি। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪০টি পয়েন্টে পানি বেড়েছে এবং কমেছে ২৮টির পয়েন্টে। চারটি পয়েন্টে অপরিবর্তিত রয়েছে।

এর মধ্যে, কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্রের পানি ২৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, বাহাদুরাবাদে যমুনার পানি ২৮ সেন্টিমিটার, সিরাজগঞ্জে ৪৩ এবং আরিচায় ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে ৫৫, ভাগ্যকূলে ৬৫ সিন্টিমিটার, আরিয়ালখাঁ নদীর পানি মাদারীপুর পয়েন্টে ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর আমলসিদ ৬, শেওলায় ৭ এবং শেরপুর পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে প্রাবাহিত হচ্ছে ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে।

এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ৭৮, যশোর ৩৮, কানাইখাটে ৮১, শেওলায় ৬২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

এফএফডব্লিউসির নির্বাহী প্রকৌশলী আমিরুল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, বর্তমানে দেশে স্বাভাবিক বন্যা চলছে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।  

গত বছরের তুলনায় বাহাদুরাবাদ, সিরাজগঞ্জ, ভাগ্যকূল, গোয়ালন্দ পয়েন্টে গত বছরের তুলনায় এবছর বিপদসীমার অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

আমাদের কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় মঙ্গলবারও প্রবল বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। নদ-নদীতে জোয়ারে পানির উচ্চতা বাড়ছে। এতে আমতলী ও কলাপাড়ায় প্রায় ৪০টি গ্রামের বাসিন্দা চার দিন ধরে পানিবন্দী।

জেলা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কেন্দ্রের উপ-পরিচালক হাফিজ আহাম্মদ জানান, লঘুচাপের কারণে মংলা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর এবং কক্সবাজারসহ উপকূলীয় এলাকায় ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত বহাল রাখা হয়েছে।

সাগর উত্তাল থাকায় সমুদ্রগামী জেলেদের নিরাপদে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

নড়াইল প্রতিনিধি জানান, মধুমতি নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কোটাকোল ইউনিয়নের বড়দিয়া নৌবন্দর বাজারের পূর্ব পাশের ১৭টি বাড়ি বিলীন হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, নদী ভাঙ্গনে তিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সার্বিক সাহায্য সহযোগিতা দেওয়া হবে।

শেরপুর প্রতিনিধি জানান, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শেরপুর জেলার সদর উপজেলার ৩ ইউনিয়নের ১৬ গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন।

পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আগামী দুই দিনের মধ্যে জেলার আরও ১০ ইউনিয়নের অর্ধশত গ্রাম বন্যা কবলিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন সদর উপজেলার চেয়ারম্যান মো. ইলিয়াছ উদ্দিন।

গত তিন দিনে জেলার পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়ায় সদর উপজেলার কামারের চর ইউনিয়নের ৬ নং চর, ৭ নং চর, গোয়াল পাড়া ও পয়েস্তির চর, চর মুছারিয়া ইউনিয়নের চর বমনা, নলবাইত নয়া পাড়া ও টান কাছার এবং চর পমিারী ইউনিয়নের ডাকাতের গোপ, জঙ্গলদি, বাঘল গড়, চুনিয়ার চর, ডাকপাড়া ও কুলুর চর গ্রাম তলিয়ে গেছে।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি জানান, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমোর, ধরলাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। পানি বাড়ায় পাওয়ায় শতাধিক চর ও দ্বীপচর প্লাবিত হয়ে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

জামালপুর প্রতিনিধি শফিক জামান জানান, রোববার দুপুর ১২টায় বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি বইতে শুরু করে। এ পর্যন্ত জেলার তিনটি উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়েছে।

খুলনা প্রতিনিধি জানান, নদীর পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার আইলা দুর্গত মানুষেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। নতুন করে বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

এছাড়া বরিশাল প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নিম্নাঞ্চলের বহু মানুষ হয়ে পড়েছেন পানিবন্দি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।