ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

এক নিমিষেই নিঃস্ব আব্দুল আজিজ

মিরাজ মাহবুব ইফতি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২০
এক নিমিষেই নিঃস্ব আব্দুল আজিজ পুড়ে যাওয়া রিকশার ওপর বসে আছেন আব্দুল আজিজ। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: পুড়ে যাওয়া রিকশার ফ্রেমের ওপর মুখে হাত দিয়ে বিষন্নভাবে বসেছিলেন পঞ্চাশোর্ধ আব্দুল আজিজ। আশপাশের লোকজনের আনাগোনা, কথাবার্তা, কোনো কিছুতেই তার ভ্রুক্ষেপ ছিলো না।

মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) দিনগত রাত ২টা ১০ মিনিটে রাজধানীর মিরপুরের কালশী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বাউনিয়া বাঁধের ‘বি’ ব্লকের পুকুরপাড় বস্তিতে লাগা আগুনে ইমন সাইকেল স্টোর নামে দোকান হারিয়েছেন তিনি। পুড়ে গেছে প্রায় ২০ লাখ টাকার মালপত্র। ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিটের এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।  

বুধবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে বাউনিয়া বাঁধের পুকুরপাড় বস্তির ইমন সাইকেল স্টোরের মালিক আব্দুল আজিজ বাংলানিউজকে বলেন, আগুন লাগার কথা শুনতে পেয়ে খালি গায়ে দৌড়ে চলে এসেছি দোকানের সামনে। এসে দেখি আমার দোকানে আগুন জ্বলছে। আগুনের কথা শুনে আমি আর আমার ছেলে চাবি নিয়ে আসতে ভুলে যাই। দোকানের পেছন দিক থেকে টিনের চাল খুলতে গিয়ে হাত কেটে ফেলি।

দোকানে কি কি মালপত্র ছিল জানতে চাইলে আজিজ বলেন, তিন দিন আগেও চার লাখ টাকার মাল তুলেছিলাম। পঁচিশটা রেক্সিনের রোল। যারা এক একটির মূল্য ৮ হাজার টাকা। রিকশার ব্যাটারি ছিল ৯০ পিস। একটি ব্যাটারির দাম ছিল ৮ হাজার টাকা করে। রিকশার বডি ছিল ৮০ পিস। একেকটির মূল্য ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা করে। রিকশা ও সাইকেলের টায়ার ছিল দেড়শ পিস। রিং ছিল তিন বান্ডিল। বিভিন্ন ধরনের ছোট বড় মূল্যবান জিনিসপত্র ছিল। প্রতিদিন আমার দোকানে বিক্রি হতো ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। বুঝেন তাইলে কি পরিমাণ মালপত্র ছিল দোকানে। মঙ্গলবার রাতের আগুনে আমার দোকানের ২০ থেকে ২২ লাখ টাকার মাল পুড়ে গেছে।

৪০ বছর আগে কুমিল্লার হোমনা থেকে ঢাকায় এসেছিলেন আব্দুল আজিজ (৫৫)। কাজকর্ম শিখে ব্যবসায় নামেন তিনি। ২০ বছর ধরে রিকশা-সাইকেলের পার্টসের ব্যবসা করছেন। ১৯৯০ সালে মিরপুর ১১ নম্বরের প্রগতি স্কুলের সামনে প্রথম আরিফা সাইকেল স্টোর নামে দোকান দেন। ২০১৩ সালে বাউনিয়া বাঁধ পুকুরপাড় বস্তি এলাকায় ইমন সাইকেল স্টোর নামে দোকান করেন। ব্যাংক ঋণ নিয়ে ছেলের নামে দোকান করেছিলেন তিনি।  

ব্যাংক ঋণের কথা উল্লেখ করে আজিজ বলেন, আমার সারা জীবনের সব কামাই আগুনে পুড়ে শেষ। ব্যাংক ঋণ নিয়ে ব্যবসা বড় করেছিলাম। দুই তিনটা ব্যাংক ও মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছিলাম। তিন ছেলে আর পরিবার নিয়ে চলছিলাম ভালোই। ইচ্ছে ছিল বড় ছেলেকে ব্যবসা বুঝিয়ে দেওয়ার। এক নিমিষেই নিঃস্ব হয়ে গেলাম। আমার সব স্বপ্ন শেষ। সরকার যদি একটু দয়া ও সাহায্য করে তাহলে ছেলে সন্তান নিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারব।

বাউনিয়া বাঁধের বাড়ি মালিক সমিতির সভাপতি আলতাফ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এ অগ্নিকাণ্ডে ঘর ও দোকানপাট মিলিয়ে প্রায় ৫০-৬০টি স্থাপনা পুড়ে গেছে। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২০
এমএমআই/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।