ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ইউএনও’র অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২০
চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ইউএনও’র অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে

লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েসের বিরুদ্ধে ইউএনওসহ ১৮ জন অফিসারের লিখিত অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।  

সোমবার (১৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর।

 

এর আগে, বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) রাতে গণস্বাক্ষরিত অভিযোগটি জেলা প্রশাসক বরাবরে দায়ের করেন ইউএনওসহ ১৮ জন অফিসার।

জেলা প্রশাসক আবু জাফর বাংলানিউজকে জানান, আদিতমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে উপজেলার কর্মকর্তাদের লিখিত অভিযোগটি দ্রুত তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (ডিডিএলজি) রফিকুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি দুই কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত করে সোমবার (১৬ নভেম্বর) বিকেলে ৩৭ পাতার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও জনপ্রতিনিসহ অনেকের লিখিত বক্তব্যের কপি সংযোজন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনটি সোমবার বিকেলেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে পাঠানো হয়েছে।  

‘ইউএনওকে হত্যার হুমকি ও অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দের সত্যতা মিলেছে কি না?’ এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক আবু জাফর বাংলানিউজকে বলেন, অনেক কিছু বিষয় তদন্ত প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে পাঠানোর কারণে বলা যাচ্ছে না। মন্ত্রণালয় তদন্ত প্রতিবেদন দেখে পরবর্তী যা নির্দেশনা দেবে সেভাবে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ দিকে সোমবার (১৬ নভেম্বর) সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পুলিশী নিরাপত্তা নিয়ে সরকারি কাজে অফিসের বাহিরে ছিলেন ইউএনও। এ সময় পরিচিত ও অপরিচিত কয়েকজন তার পিছনে মোটরসাইকেল নিয়ে অযথা ঘোরাফেরা করেন বলে বাংলানিউজ্কের জানান আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন। তবে নিরাপত্তা পর্যাপ্ত রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

>>আদিতমারী ইউএনওকে হত্যার হুমকি

এর আগে, বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) ইউএনওসহ ১৮জন অফিসারের দায়ের করা অভিযোগে প্রকাশ, আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বিধিবিধান ও নীতিমালা লংঘন করে কাজের জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছেন। এর ব্যত্যয় ঘটলে সেই দফতরের কর্মকর্তাকে অশ্রব্য ভাষায় গালমন্দসহ প্রাণনাশের হুমকিও দেন চেয়ারম্যান।

উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড, ভিজিডি, মাতৃত্ব ভাতা, কৃষি প্রণোদনা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সুবিধাভোগীর তালিকায় নিজের অংশ দাবি করেন চেয়ারম্যান। বিধি বহির্ভূতভাবে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ না দেওয়ায় এবং প্রাক্কালন কাজ শেষ না হতেই বিল পরিশোধ না করায় সাম্প্রতিক সময় উপজেলা প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলীকে রুমে বেঁধে পেটানোর হুমকি দেন চেয়ারম্যান।

শুধু তাই নয়, তার কথামত কাজ না করায় একজন নারী কর্মকর্তাকে বহিরাগতদের দিয়ে মানহানির ঘটনা ঘটানোর হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। সব দফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনা তুলে ধরা হয় অভিযোগে।

অভিযোগে আরো বলা হয়, বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) মাসিক সমন্বয় সভায় ভিজিডি ও মাতৃত্ব ভাতার তালিকায় নিজের অংশ দাবি করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। যা বিধি সম্মত না হওয়ায় ইউএনও নাকোচ করে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সভা অসমাপ্ত রেখে চলে যান চেয়ারম্যান। এরপর চেয়ারম্যান ইউএনও অফিসের সিসিটিভি ক্যামেরা লোক দিয়ে খুলতে গেলে তার ছবি তোলেন ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন। একইসঙ্গে ক্যামেরা খুলে ফেলার কারণ জানতে চাইলে ইউএনওকে অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করা হয় ‘(বেশি কথা বললে পিটিয়ে নরসিংদী পাঠিয়ে দেবো। উপজেলা পরিষদ কি তোর বাবার সম্পত্তি, উপজেলা পরিষদ কি তুই চালাবি?)’। এভাবে গালমন্দ করা হয় বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।  

চরম উত্তেজিত হয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোবাইলে কল করে তার দলের লোকদের ডাকলে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে থানা পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। ঘটনার পর থেকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনায় ওই দিন রাতে ইউএনওসহ ১৮ জন অফিসার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবরে গণস্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। যার স্মারক নং - ০৫.৪৭.৫২০২.০০০.০২.০৮৩.২০- ৭৬৪। যার অনুলিপি বিভিন্ন দফতরে পাঠানো হয়।

নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে রোববার (১৫ নভেম্বর) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদিতমারী থানায় জিডি (নং ৫৫৮) করেন ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন। একই দিন যৌথ স্বাক্ষরিত উপজেলার রাজস্ব তহবিলের ব্যাংক হিসাবের ১৯টি চেকের পাতা ছিঁড়ে ফেলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস। যা নিয়েও আদিতমারী থানায় জিডি(নং ৫৫৯) করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের স্টানোটাইপিস্ট হাবিবুর রহমান।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।