ঢাকা, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ স্যাম্পল ওষুধ! 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২০
খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ স্যাম্পল ওষুধ!  ...

রাজশাহী: রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন ওষুধের দোকানে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে ‘ফিজিশিয়ান স্যাম্পল’ ওষুধ। উৎপাদনকারী কোম্পানির পক্ষ থেকে এসব ওষুধ বাজারে ছাড়ার আগে ট্রায়ালের উদ্দেশ্যে চিকিৎসকদের দেওয়া হয়।

এসব স্যাম্পল ওষুধের ক্ষেত্রে সরকারি রাজস্ব দিতে হয় না।  

বিনামূল্যে দেওয়া এসব ওষুধ ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ। কিন্তু অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এ ধরনের ওষুধ বিক্রি করছেন। দীর্ঘ দিন ধরেই মহানগরীতে স্যাম্পল ওষুধের কেনাবেচা চলে আসছে। এতে একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে ট্রায়ালে থাকা এসব ওষুধ সেবনে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা।  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ‘ডক্টরস জোন’ খ্যাত মহানগরীর ওষুধের বৃহৎ বাজার লক্ষ্মীপুরসহ শহরের অসংখ্য দোকানে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে স্যাম্পল ওষুধ। এসব ওষুধের মোড়কের (প্যাকেট) গায়ে লেখা ‘ফিজিশিয়ান স্যাম্পল, বিক্রি নিষিদ্ধ’। তবে দোকানিরা এগুলো বিক্রির জন্য কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন। ওষুধের মোড়ক পাল্টে বিক্রয়যোগ্য ওষুধের মোড়কে রেখে এসব ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে।  

ফার্মেসি মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মহানগরীতে স্যাম্পল ওষুধ বিক্রির একটি চক্র রয়েছে। সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকরা বেশি ফিজিশিয়ান স্যাম্পল পেয়ে থাকেন। কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে চুক্তি থেকে চিকিৎসকরা প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ স্যাম্পল পান। চিকিৎসকরা টাকার বিনিময়ে এসব ওষুধ ফার্মেসিতে বিক্রি করে দেন। সরাসরি চিকিৎসকদের মাধ্যমে বা দালাল চক্রের মাধ্যমে ওষুধগুলো খোলা বাজারে আসে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগরীর এক ফার্মেসি মালিক জানান, চিকিৎসকরা ফোন করে তাদের বাসায় অথবা চেম্বারে ডেকে নেন। এরপর তাদের এসব ওষুধ দেওয়া হয়। আর দালালেরা নিজেরাই চিকিৎসকের কাছ থেকে ওষুধ এনে দেন। তারা ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ দামে ওষুধগুলো কেনেন।  

এদিকে, স্যাম্পল ওষুধ বিক্রি বন্ধ করতে মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) রাতে মহানগরীর লক্ষ্মীপুর মোড়ে ফার্মেসিগুলোতে অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানে ৩টি ফার্মেসিকে স্যাম্পল ওষুধ বিক্রির দায়ে ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।  

রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের উপ-কমিশনার আবু আহম্মাদ আল মামুন ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হাসান আল-মারুফের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালিত হয়।  

ফার্মেসি তিনটি হলো- মডার্ন মার্কেটের আনোয়ারা ফার্মেসি, বিসমিল্লাহ ফার্মেসি এবং মা-বাবা ফার্মেসি। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আনোয়ারা ফার্মেসিকে ২৫ হাজার টাকা এবং অন্য দুটিকে ১৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করে।  

ফার্মেসি ৩টিতে ডিবি পুলিশ অন্তত ৩০ লাখ টাকা মূল্যের স্যাম্পল ওষুধের খুঁজে পায়। এসময় আনোয়ারা ফার্মেসি থেকে রাজশাহীর ৮০ জন চিকিৎসক ও দালালের নামের তালিকা পাওয়া গেছে যারা ফার্মেসিতে এসব ওষুধ সরবরাহ করেন। এই তালিকায় রাজশাহীর খ্যাতনামা অনেক চিকিৎসকের নাম রয়েছে।  

পুলিশ বলছে, এখন থেকে তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখবেন গোয়েন্দারা। যেসব দালালের নাম এসেছে তাদেরও নজরদারিতে রাখা হবে। আর এখন থেকে নিয়মিতই স্যাম্পল ওষুধের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।  

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজশাহী কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হাসান আল মারুফ বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে লক্ষ্মীপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। এতে স্যাম্পল ওষুধ বিক্রির সত্যতা পাওয়া গেছে। এর কারণে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

রাজশাহী মহানগর ডিবি পুলিশের উপ-কমিশনার আবু আহম্মাদ আল মামুন বলেন, ফিজিশিয়ান স্যাম্পল ওষুধ ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ। ওষুধ কোম্পানিগুলো চিকিৎসকদের এগুলো দেন রোগীদের বিনামূল্যে দেওয়ার জন্য। এসব ওষুধের প্যাকেটেই লেখা থাকে- ‘এগুলো স্যাম্পল। ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ’। কিন্তু অনেক চিকিৎসক এগুলো ফার্মেসিতে বিক্রি করে দেন। ফার্মেসি মালিকরা তখন এসব ওষুধ পুরনো প্যাকেটে ঢুকিয়ে বিক্রি করেন। এটি অপরাধ। স্যাম্পল ওষুধের ক্রয়-বিক্রয় বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২০ 
এসএস/এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।