ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ধর্ষণ প্রতিরোধক যন্ত্র উদ্ভাবন করলো স্কুল শিক্ষার্থীরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২০
ধর্ষণ প্রতিরোধক যন্ত্র উদ্ভাবন করলো স্কুল শিক্ষার্থীরা

ফেনী: ধর্ষণ প্রতিরোধক যন্ত্র আবিষ্কার করেছে ফেনীর একদল স্কুল শিক্ষার্থী। কোন নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছে অথবা বিপদে পড়েছেন, ওই মুহূর্তে আশেপাশে কোন মানুষজন নেই, দরকার সাহায্য।

ছোট্ট একটি ডিভাইসের সুইচ অন করে বিপদ সংকেত প্রেরণ করলে তখনি স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য পৌঁছে যাবে।

ফেনী শিশু নিকেতন কালেক্টরেট স্কুলে আয়োজিত বিজ্ঞান মেলায় এমনই একটি উদ্ভাবন নিয়ে এসেছে দাগনভুঞা রাজাপুর হাই স্কুলের শিক্ষার্থীরা। স্কুলের শিক্ষার্থী ইব্রাহীম আল জিসানের নেতৃত্বে সৈকত ও হামিদুরের সহযোগিতায় এ ডিভাইসটি উদ্ভাবন করেছে দলটি।

জিসানের মতে, এই ডিভাইস ধর্ষণ রোধে সহযোগিতা করবে। পাশাপাশি কেউ কোন বিপদে পড়লে ডিভাইসটি সাথে রাখলে একটি সুইচ চালু করলেই সংকেত চলে যাবে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে। ফলে তারা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।

এভাবে নিজেদের নানা উদ্ভাবন নিয়ে বিজ্ঞান মেলায় হাজির হয়েছে ফেনীর বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা।

মেলায় ‘সেফটি স্ট্যান্ড’ নামে আরও একটি ধর্ষণ প্রতিরোধী যন্ত্র এনেছে ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌসের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি দল। এ যন্ত্র উদ্ভাবনের পেছনের কারণ জানাতে গিয়ে সে জানায়, আমাদের দেশে সাম্প্রতিক সময়ে মেয়েরা অনিরাপত্তায় ভুগছে। চারদিকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এ ধরনের ঘটনা হতে মেয়েরা নিজেদের নিরাপদ রাখতে এ যন্ত্র বানিয়েছি আমরা।  

এতে সঞ্চিত থাকবে ৭৫০ ভোল্টের কারেন্ট। কেউ শরীরে আঘাত করতে এলে এর সুইচ চেপে দিলে শক লাগবে তার। ফলে সে আর আঘাত করতে পারবে না।

‘কুলিং মাস্ক’ নামে আরো একটি প্রজেক্ট নিয়ে এসেছে মেলায় ফেনী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের মেয়েরা। এছাড়া রান্নাঘরের অপচয়কৃত তাপ ব্যবহার করে পেল্টিয়ারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের আরও একটি প্রজেক্ট উপস্থাপন করছে তারা।

অন্যদিকে উদ্ভাবনের দিকে পিছিয়ে নেই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও। পাহাড়ি এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ‘রোড টার্নিং সেফটি’ নামে একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে সোনাগাজীর ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার মেহেদী হাসান অবির নেতৃত্বে ২ সদস্যের একটি দল। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ি এলাকায় রাস্তার মোড়ে দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন তারা।

পরশুরাম সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহমানের নেতৃত্বে তার দল বিজ্ঞান মেলায় ‘অগ্রিম ভূমিকম্প সম্পর্কে ধারণা’ পাবার একটি প্রজেক্ট উপস্থাপন করছে।

প্লাস্টিক হতে পেট্রোল এবং এলপিজি গ্যাস উৎপন্ন করার একটি প্রজেক্ট উপস্থাপন করছে ফুলগাজী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সুমাইয়া রহমানের নেতৃত্বে তার দল।  

ছাগলনাইয়া উপজেলার নিজকুঞ্জরা কেজি আদর্শ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ফয়সাল আজিজের নেতৃত্বে খামার বাড়িতে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার নিয়ে একটি প্রজেক্ট নিয়ে এসেছে।  

সিনিয়র গ্রুপে ফেনী সরকারি কলেজ বিজ্ঞান ক্লাবের সদস্যরা সড়ক দুর্ঘটনা রোডে ‘সেইফ রোড’ নামে একটি প্রজেক্ট উপস্থাপন করছে। এছাড়া ‘সেইফ রেলওয়ে’ নামে আরও একটি প্রজেক্ট উপস্থাপন করছে তারা।

জান্নাতুল ফেরদৌস জানায়, নিয়মিত বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করা হলে আমরা নিজেদের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে আরও বেশি নিত্য নতুন আবিষ্কারের প্রতি মনযোগী হতে পারব। ফেনী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক পলাশ চন্দ্র দাস জানান, শিক্ষার্থীদের এমন উদ্ভাবনী ও চিন্তা শক্তির জন্য দরকার পৃষ্ঠপোষকতা। তারা যদি সে সুযোগ-সুবিধা পায়, তাহলে তাদের মধ্য হতে বের হয়ে আসবে আগামী দিনের বিজ্ঞানীরা।

বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) শেষ হয়েছে ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: অগ্রগতির মূল শক্তি’ এ প্রতিপাদ্যে ফেনী শিশু নিকেতন কালেক্টরেট স্কুলে এ মেলা শেষ হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) শুরু হয়েছিল ৩ দিনব্যাপী বিজ্ঞান-প্রযুক্তি মেলাটি। মেলায় তিনটি বিভাগে ফেনীর বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা মোট ৩৭টি প্রজেক্ট উপস্থাপন করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২০
এসএইচডি/এমকেআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।