ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

খবিরের সেই কয়েন লাখ টাকায় কিনে নিলেন ঢাকার ওষুধ ব্যবসায়ী

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২০
খবিরের সেই কয়েন লাখ টাকায় কিনে নিলেন ঢাকার ওষুধ ব্যবসায়ী কয়েন কিনে নিলেন নিয়ামুল করিম টিপু। ছবি: বাংলানিউজ

মাগুরা: মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরের ক্ষুদ্র সবজি ব্যবসায়ী খাইরুল ইসলাম খবিরের (৪৫) প্রায় ছয় মণ ওজনের ৫৬ হাজার টাকার ধাতব মুদ্রা (কয়েন) কিনে নিলেন ঢাকার এক ওষুধ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
 
বুধবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলা সদরের জাঙ্গালিয়া গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ঢাকার ধানমন্ডির মিকা ফার্মা কেয়ার লিমিটিডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়ামুল করিম টিপু নগদ এক লাখে ৫৬ হাজার টাকা মূল্যের ধাতবমুদ্রা (কয়েন) কিনে নেন।

২০ অক্টোবর জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমে ‘৬ মণ কয়েন নিয়ে বিপাকে খবির’-শিরোনামে স্বচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে ব্যাপক সাড়া পড়ে। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মহম্মদপুর সদর সোনালী ব্যাংক শাখা তার একাউন্টে প্রতিদিন এক হাজার টাকা করে জমা নেওয়া শুরু করে। এ পর্যন্ত চার হাজার টাকা জমা দেন তিনি। পরে ২২ অক্টোবর আবার বাংলানিউজে খবিরের কয়েন নিচ্ছেন সোনালী ব্যাংক এই শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়।

খবির ১০ বছর ধরে ২৫ পয়সা, ৫০ পয়সা, ১ টাকা ও ২ টাকার প্রায় ছয় মণ ওজনের ৬০ হাজার টাকার ধাতব মুদ্রা জমান। এই কয়েনের কার্যত লেনদেন না থাকায় তিনি বিপাকে পড়েন। ৪ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার পরও খবিরের কাছে আরও ৫৬ হাজার টাকার ধাতব মুদ্রা ছিল।

জনপ্রিয় বাংলানিউজে প্রতিবেদন দেখে বুধবার বিকেলে খবিরের বাড়িতে এসে ধাতব মুদ্রাগুলো কিনে নেন ঢাকার ওষুধ ব্যবসায়ী নিয়ামুল করিম টিপু।

এসময় খবিরের বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন- মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রামানন্দ পাল, ঢাকার ধানমন্ডির মিকা ফার্মা কেয়ার লিমিটিডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়ামুল করিম টিপু ও মহম্মদপুর সদরের আমিনুর রহমান কলেজের অধ্যক্ষ ও প্রেসক্লাবের সভাপতি বিপ্লব রেজা বিকো।

ঢাকার ধানমন্ডির মিকা ফার্মা কেয়ার লিমিটিডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়ামুল করিম টিপু জানান, বাংলানিউজসহ কয়েকটি মিডিয়ায় প্রতিবেদন দেখে মূলত বিপাকে পড়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর পাশে দাঁড়ানোর জন্য তিনি কয়েনগুলো প্রায় দিগুণ দামে কিনে নিয়েছেন।

তিনি জানান, এই কয়েন থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ মাটির ব্যাংকে ঢুকিয়ে দরিদ্র শিশুদের মধ্যে বিতরণ করবেন। এতে তাদের মধ্যে সঞ্চয়ী হওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করবেন।  

মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রামানন্দ পাল বলেন, খবিরের কয়েন আমরা ব্যাংকে জমা নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম। বিষয়টি ছিল সময়সাপেক্ষ ও ঝামেলাপূর্ণ। কয়েনের বিনিময়ে একসঙ্গে প্রায় দ্বিগুণ টাকা পাওয়ায় দরিদ্র ব্যবসায়ীর অনেক উপকার হলো।

ক্ষুদ্র সবজি ব্যবসায়ী খাইরুল ইসলাম খবির আনন্দে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ছয় মণ খুচরো পয়সা নিয়ে আমার রাতে ঘুম আসত না। এতো পয়সা গুছাইছিস ক্যা? সবাই ভয় দিত তোরে ধরে নিয়ে যাবেনে। আমার ব্যবসার সব পুঁজি চলে গেছিলো এই পয়সার মধ্যি। জীবনের প্রথম একসঙ্গে এক লাখ টাকা হাতে পালাম। আমার বিরাট উপকার হলো।

উল্লেখ্য, ১০ বছর ধরে পঁচিশ পয়সা, পঞ্চাশ পয়সা, এক টাকা ও দুই টাকা করে  ছয় মণ ধাতব মুদ্রা (কয়েন) জমে যায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী খবিরের কাছে। এসব কয়েন লেনদেন সরকার বাতিল না করলেও খরিদ্দাররা এখন আর নিতে চান না। কার্যত অচল হয়ে পড়া বিপুল পরিমাণ এ কয়েন নিয়ে তিনি বিপাকে পড়েন।

** খবিরের সেই কয়েনগুলো জমা নিচ্ছে সোনালী ব্যাংক
** ৬ মণ কয়েন নিয়ে বিপাকে খবির


 
বাংলাদেশ সময়: ২৩১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad